Feeds:
Posts
Comments

গত সপ্তাহে নিজের এলাকা কিশোরগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে  রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন,“সকল রাজনৈতিক দল থেকে সৎ, চরিত্রবান ও যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া উচিৎ। অসৎ ব্যক্তিরা নির্বাচিত হলে দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না। যারা টিআর-কাবিখার টাকা, গম, চাল মেরে খায়; সে যদি আমার ছেলেও হয়, তাদের ভোট দেবেন না।” রাষ্ট্রপতি একথা বলার সময় তার ছেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও অনুষ্ঠানে ছিলেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য  বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। নির্বাচনের কয়েক মাস  মাত্র বাকি। রথি-মহারথি, বলবান-ক্ষমতাবান সবাই মনোনয়ন দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়েছেন পুরো দেশজুড়েই। স্ব-স্ব দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বাহারি বিলবোর্ড, ফেস্টুন, ডিজিটাল প্রচারণা, ক্ষেত্রবিশেষে উন্মাদনা- পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে।

কক্সবাজারের চারটি  সংসদীয় আসনের জন্য যথারীতি এই দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে এবং চলমান। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি দলের মনোনয়নের জন্য ঘোড়-দৌড় ব্যাপক হলেও সময়ের আবর্তনে এ প্রতিদ্বন্ধিতা বিরোধী দলে শীঘ্রই সংক্রামিত হবে- অনুধাবনযোগ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কি এমন কোন সাংসদ পেয়েছি যিনি বাস্তবিক অর্থে কক্সবাজারের মৌলিক সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করেছেন কিংবা নির্বাচনী এলাকা নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কৌশলগত রেখাপাত করেছেন। রাজনৈতিক স্তুতির পাশাপাশি মৌলিকত্ব নিয়ে নিজেদের স্বকীয় চিন্তাশক্তিকে উন্মোচিত করতে পেরেছেন কি কোন সাংসদ। অবার সম্ভাবনার কক্সবাজারকে উন্মোচিত ও আলোকিত করতে আমাদের আশু প্রয়োজন মেধাবী, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ সাংসদ।

কক্সবাজার এখন শুধুই পর্যটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেয়। ভূ-রাজনীতি, বানিজ্য, সমুদ্র্যচুক্তি, বাস্তুচ্যুত শরনার্থী’সহ নানাবিধ কারণে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ভাবে আলোচিত একটি নাম বর্তমানে। কক্সবাজারের সমস্যা, সম্ভাবনাকে আপেক্ষিক ও বাস্তবিকভাবে ফুটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতার দিকে এগিয়ে নিতে হলে আইনপ্রণেতাদের বিশেষ ভূমিকা রাখা অত্যাবশ্যক।

প্রথমেই আলোকপাত করা যাক- কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব প্রসংগ। গত বছর হতে কক্সবাজার আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত একটি নাম রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দশ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে বর্তমান সরকার মহৎ কাজ করেছে- কিন্তু এর প্রভাব কক্সবাজার শহরে ও অত্র এলাকায় কিভাবে পড়ছে কিংবা পড়তে পারে নিকট ভবিষ্যতে- তার সুনিব্যস্ত বিশ্লেষণ তুলে ধরার মত সাংসদ দরকার আমাদের।  রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে এনজিও গুলিতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের বাধ্য-বাধ্যকতা নিয়ে কথা বলার মত দৃঢ়  ও বলিষ্ঠ স্থানীয় সাংসদের প্রয়োজনীয়তা  উপলদ্ধি করছে স্থানীয় জনসাধারণ।

গত মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাংলাদেশ সরকারের একটি অনন্য ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। এই পরিকল্পনায় কক্সবাজারকে উপকূলীয় অঞ্চলে রাখা হয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে সবচেয়ে ঝুঁকি প্রবণ এলাকা।  ষোলটি জেলার সঙ্গে কক্সবাজারের চ্যালেঞ্জগুলি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমন। হবু সাংসদকে ডেল্টা-প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা বুঝে এর সুফল কক্সবাজারে বাস্তবায়নযোগ্য করাতে হবে।

ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। মৎস্য সম্পদ, খনিজ আহরণ, সামুদ্র্যিক পরিবহন, ম্যানগ্রুভ বনাঞ্চল, পর্যটন সম্ভাবনার অর্থনৈতিক, সামাজিক কৌশল নির্ধারণ করাটা এতদাঞ্ছলের আইনপ্রণেতাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে এই জেলাতে, এসব বড় প্রকল্পের আওতার মধ্যে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সহ বিবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হবে।

লবণ শিল্প কিংবা রাবার বাগানের বানিজ্যিক সম্ভাবনাকে নতুনভাবে আলোকপাত করা দরকার। ভাবী সাংসদদের ভাবতে হবে এর পরিকল্পনাগুলি। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও কক্সবাজারের শ্যুটকি, লবণকে আন্তর্জাতিক মানের পণ্যে রূপান্তরিত করা এখনো সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড থাকলেও অনেক এলাকায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন হচ্ছেনা বলে – অভিযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে, রামু গর্জনিয়ায় বাকখালি নদীর উপর সেতু। প্রায় দেড় দশক আগে নির্মিত এই সেতু প্রায় অকেজো হয়ে গেলেও স্থানীয় সাংসদ এই খাতে প্রত্যাশিত প্রকল্প বরাদ্দ আদায় করতে সক্ষম হয়নি বলে জনশ্রুতি আছে।

কক্সবাজারে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানীয় লোকজনকে সংশ্লিষ্ট করার মাধ্যমে বেকারত্ব হার কমানোর দৃশ্যমান পরিকল্পনা অনুধাবন করানোর ক্ষমতা থাকতে হবে হবু সাংসদের।

বিশ্বব্যাংকের  এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে-  বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মানুষের জীবনযাত্রার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই জেলা সমুদ্রপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি। সেখানে বিপুল পরিমাণে অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই দরিদ্র।  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কক্সবাজার জেলার আর্থিক ক্ষতি ও জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কক্সবাজারের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সরকারের নজর আনার দায়িত্ব নেওয়ার মত মানসিক, পেশাগত দক্ষতা দেখাতে হবে ভাবী সাংসদবৃন্দকে।

ঈদগাহকে উপজেলাতে রুপান্তরিত করা কিংবা রামুকে পৌরসভার অনুমোদন নেওয়ার মত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ছক আঁকার মত মেধাবী, প্রজ্ঞাবান সাংসদ অনেকের প্রাণের দাবি।

মাদক পুরো কক্সবাজার জুড়েই কালসাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই এলাকার সাংসদদের মাদকের বিরুদ্ধে আরো নিষ্ঠাবান হতে হবে। সাংসদের পরিকল্পনাতে মাদকমুক্ত জনপদ গড়ার আহবান থাকতে হবে এবং তাদের কর্মীবাহিনীকে এর বাইরে রাখার প্রত্যয় দেখাতে হবে।

সর্বোপরি সাংসদকে মাথায় রাখতে হবে তিনি একজন আইন প্রণেতা। স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান বা সদস্যের সংগে দায়িত্বগত পার্থক্য অনুধাবন তার করতে হবে। রাষ্ট্রের সামর্থ্য শুধু তার নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং পদ্ধতির উপর নির্ভর করে না। নীতি যারা প্রণয়ন বা রূপায়ণ করেন, প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনা করেন এবং পদ্ধতি যারা অনুসরণ করেন, তাদের আচরণের উপরেও নির্ভর করে।

পত্রিকান্তরে- কক্সবাজার জেলার সাংসদের আচরণগত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আমাদের নজরে এসেছে। ভাবী সাংসদকে বুঝতে হবে, জনগণ বলবান সাংসদ চায়না, তারা চাই বিবেকবান সাংসদ।

সর্বোপরি আমরা কক্সবাজার আলোকিত করার মত নিষ্টাবান, মেধাবী সাংসদ প্রত্যাশা করি। আশা করব, হবু প্রার্থীরা তাদের নির্বাচন পূর্ব বক্তব্য কিংবা অংগীকারে উপরিউক্ত ইস্যুগুলি সু-আলোকপাত করবেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। নেদারল্যান্ডসের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার আলোকে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি প্রণীত হয়েছে।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাংলাদেশ সরকারের একটি অনন্য ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ।  ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক দলিল এই পরিকল্পনা।

ঝুঁকি বিবেচনায় ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। হটস্পট গুলো হচ্ছে— উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওড় ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল এবং নগরাঞ্চল। প্রতিটি হটস্পটে সর্বমোট ৩৩টি চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে।

কক্সবাজার সহ উপকূলীয় ষোলটি জেলা পড়েছে – উপকূলীয় অঞ্চল হটস্পটে যেখানকার চ্যালেঞ্জগুলি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমন।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্র উচ্চতা বেড়্রে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা, ঘুর্ণিঝড়ের তীব্রতা বেড়ে যাওয়া , ঝড় সহ বিভিন্ন দুর্যোগকে আমলে নেওয়া ও এর মাধ্যমে কি ক্ষতি হতে পারে ও এর পরিত্রানের জন্য পরিকল্পনা  সংশ্লিষ্ট হয়েছে এই ব-দ্বীপ পরিকল্পনায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে কক্সবাজার কে র‍্যাংক-১ এ রাখা হয়েছে। সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা র‍্যাংক-১ ও কম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হচ্ছে র‍্যাংক-৩ এর আওতাভুক্ত। সমুদ্র্যপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, সাইক্লোন, লবণাক্ততা কে এই জেলার ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খরা, জলাবদ্ধতা ও নদী ভাঙ্গন জনিত কারণকে এখানে ঝুঁকি হিসেবে দেখানো হয়নি। মাগুরা, মানিকগঞ্জ এর মত কয়েকটি জেলা শুধু খরা ও বন্যার ঝুঁকি থাকায় সবচেয়ে কম ঝুকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে (র‍্যাংক-৩)। এই র‍্যাংকিং অনুযায়ী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ (র‍্যাংক -১) ১৬ টি জেলার মধ্যে কক্সবাজার ও আছে। অন্যান্য জেলাগুলি হচ্ছে বাগেরহাট, বরগুনা, ভোলা, চাঁদপুর, ফেনী, গাইবান্ধা, জামালপুর, খুলনা, কুড়িগ্রাম, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালি, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও সিরাজগঞ্জ।

সামুদ্রিক ইকো-বৈচিত্র্যের জন্য সোনাদিয়া দ্বীপকে বিশেষভাবে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপকূল এবং জলজ উদ্ভিদ জীব বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনার জন্য কক্সবাজার ও হাউড়কে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জলোচ্ছাস থেকে বাঁচার জন্য কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে বহুমুখী বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনার ছোঁয়া আছে ডেল্টা প্ল্যানে। এছাড়া বাকখালি ও মাতামুহুরি নদী ব্যবস্থাপনার উপর জোরদার করার পাশাপাশি উপকুলীয় অঞ্চলে কৃষি-আবাদ ও চিংড়ি চাষাবাদকে জোর দেওয়া হয়েছে।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থায়ন সম্বলিত বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল গঠন করা হবে।  এর মধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল হতে এবং শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) মডেলে এই শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।

সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল যে কত মধুর তার প্রমাণ ইউরোপের নেদারল্যান্ড যে দেশটি বলতে গেলে অর্ধেকটাই সমুদ্র লেভেলের নীচে এবং অধিকাংশ এলাকা বন্যা প্রবণ (ছিল)।

১৯৫৩ সালের ভয়াবহ বন্যায় এ দেশে মারা যায় প্রায় ১৮০০ জন, তখনই তাদের সরকার পলিসি নেয় “never again” যার ফলশ্রুতিতে তারা পানি প্রকৌশল, ব্যাপক নদী-ড্রেইন, পানি সংগ্রহ-বিস্তৃত সহ বিজ্ঞানসম্মত অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। ডেক, ড্রাম আর প্রাচীর দিয়ে তারা পানি ব্যবস্থাপনাকে অন্য এক বিশাল উচ্চতায় নিয়ে গেছে । দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়, নেদারল্যান্ডকে তাই অনুকরণীয় ভাবে পুরো বিশ্ব।

কথিত আছে এবং বাস্তবতা হচ্ছে, নেদারল্যান্ডে আগামী ১০০০০ বছরেও বন্যা হবেনা।

আশার কথা হচ্ছে, নেদারল্যান্ড ডেল্টা-প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ছে ও মূল্যস্পীতি রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। সামাজিক খাতে ও অগ্রগতি হচ্ছে। তবে এসব অর্জন টেকসই হবে কিনা— তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। এর পেছনে অন্যতম মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের সেই প্রভাবকে মোকাবিলা করে দেশকে কিভাবে উন্নয়নের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পন ‘ বা ‘ডেল্টা প্ল্যান’।

একশ বছরের এই ঐতিহাসিক পরিকল্পনাটি  পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম গত সাড়ে তিন বছরে তার দক্ষ দল নিয়ে গড়ে তুলেছেন যা অনুমোদিত হয়েছে।

শতবর্ষের পরিকল্পনায় কক্সবাজারের উন্নয়নকে অবাধ রাখার জন্য পরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনা সংযুক্ত করা হয়েছে এই ডেল্টা প্ল্যানে। বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদেরা বদ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনার কৌশলগুলো নির্ধারণ করেছেন।

নিরাপদ কক্সবাজার সহ সারা বাংলাদেশের সমৃদ্ধি প্রত্যাশায় আমরা শতবর্শী এই পরিকল্পনার দুর্নীতিমুক্ত সফলতা কামনা করি।

লিখাটি যখন লিখছি, তখন কক্সবাজার সহ সারা দেশের সমুদ্র-তীরবর্তী অঞ্চলগুলিকে তিন নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ঘনঘটায় যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাস সহ ঘুর্ণিঝড় বয়ে যেতে পারে। নতুবা প্রবল বর্ষণে তলিয়ে যেতে পারে শহর সহ গ্রাম-বিল।

আমরা দুর্যোগের ঘনঘটা’র কোনটিই আশা করিনা।

প্রিয় শহর কক্সবাজার অনেক কিছু থেকেই আলাদা। সাগরপাড়ের পর্যটন শহর হিসেবে এখানে দৈনিক হাজার হাজার বহিরাগতের অনুঃপ্রবেশ ঘটে।  এই শহরে রয়েছে অভূতপূর্ব অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সংঘাত নেয় বললেই চলে। রয়েছে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সুস্থ ধারা।

এত ভাল কিছুর পরও এইবার ঈদের ছুটিতে প্রিয় শহরের কিছু নিন্দনীয় দিক চোখে পড়েছে। তন্মোধ্যে অন্যতম- ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়।

বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- স্থাপিত হয়েছে ১৮৮২ সালে। এই স্কুলের পাশ ঘেঁষেই কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বার্মিজ মার্কেট যেখানে বার্মিজদের বিভিন্ন পণ্য সহ শামুক-ঝিনুক, শ্যুটকি সবকিছু পাওয়া যায়। যার সন্ধানে ভিড় করে হাজারো পর্যটক। স্কুলের পাশ ঘেঁষে ড্রেইনে আবর্জনার স্তুপ – দুর্গন্ধে রাস্তায় হাঁটা দুস্কর। অথচ- সরকারি এই স্কুলে শত শিশুরা পাঠক্রমে ব্যস্ত।

পুরো শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন ময়লার স্তুপ পড়ে রয়েছে। এলাকাবাসী ও যেন সয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা জেনেছি, কক্সবাজার পৌরসভায় বর্জ্য অপসারণের জন্য ৩০টি ট্রলি থাকলেও ১০টি বিকল।  ৮টি ট্রাকের ৭টি বিকল। ঠেলাগাড়ি রয়েছে ২৭টি যা অপ্রতুল। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এছাড়া শহর থেকে অনেক দূরে ডাম্পিং স্টেশন। সে কারণে প্রথমে অলিগলির ময়লা-আবর্জনা ট্রান্সফার স্টেশনে রাখা হয়। তাও দখল হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রধান সড়কের পাশেই ময়লার স্তূপ জমানো হয়। পরে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে নেওয়া হয়না। বার্মিজ স্কুলের উত্তর দিকে প্রধান সড়কের ময়লার পাহাড়ের পাশেই যাত্রি ছাউনি যা আবর্জনায় ঢাকা পড়ে আছে। রোহিঙ্গা প্রজেক্টে বেশি বেতনের চাকুরীর লোভে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনার মানব-সংকটের কথা ও শুনা যাচ্ছে। উপরিউক্ত, সবকিছুই সমস্যা আর বাস্তবতা। এসব সমস্যার সমাধানের পথ নিশ্চই আছে।

অথচ, এই শহরে চল্লিশের অধিক স্থানে সিসিটিভি সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। কউক সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছে পুরোদমে। বৃহত্তর কক্সবাজার ঘিরে চলছে অনেক মেগা-প্রজেক্ট। সবকিছুই করা হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কক্সবাজার গড়ার প্রত্যয়ে।

শহরের নতুন মেয়র জনপ্রিয় ও অনেকের আস্থাভাজন। তিনি শীঘ্রই শহরকে আবর্জনামুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। নতুন প্রশাসন নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনে নগর-পরিকল্পনাবিদ কিংবা বিশেষজ্ঞ দের সঙ্গে বসে দূরদর্শী গঠনমুলক উদ্যোগ নিবেন আশা করি।  প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট করে শহরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব-সচেতন করা যেতে পারে।

সম্প্রতি ভারতের কেরালায় শতাব্দির ভয়াবহতম যে বন্যা ঘটে গেছে তা থেকে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে কেরালা শহরে তার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক যাতীয় জিনিসের ড্রেইন দখল করে রাখা। আমাদের শহরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে হলে নাগরিক সচেতনতার দরকার সবচেয়ে বেশি। ডাস্টবিনের বাইরে ড্রেইনে আবর্জনা-প্লাস্টিক ফেলে রাখলে তা নিষ্কাসন ব্যবস্থাকে বাঁধা দেয়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। কথার কথা, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড হয়েছে- ৪ নং ওয়ার্ড। সুস্থ ধারার এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নাগরিক সচেতনতা উৎসাহিত হবে বৈকি।

আমরা যারা রুজি-প্রয়োজনে বাইরে থাকি, তারা সুযোগ পেলেই ব্র্যান্ডিং করি- কক্সবাজার স্বাস্থ্যকর স্থান। আমাদের প্রশ্বাসে এই শহরের বাতাস প্রবিষ্ট হয় প্রতি মুহুর্তে। প্রিয় শহরকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে অন্তত ময়লা-আবর্জনা মুক্ত রাখাটা কঠিন কিছু না। নব-নির্বাচিত পৌরসভা পরিষদ উদ্যোগ নিলেই এ অসম্ভবটি আমাদের আবিষ্টের মধ্যে চলে আসবে। নাগরিক ধর্তব্যের মধ্যেই বিবেচিত হবে- প্রিয় শহরকে আবর্জনামুক্ত রাখার অঙ্গীকার।

ছবি দুটি আপনাকে নাড়া দিবেই। 

বামের ছবিতে দেখা যাচ্ছে- জেরুজালেমে আমেরিকান দূতাবাসের উদ্বোধন করছে ট্রাম্পকন্যা ইভানকা। প্রস্তরফলক উন্মোচিত হচ্ছে যাতে বড় করে লেখা ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও ট্রাম্প স্বশরীরে সেখানে উপস্থিত থাকেননি।

ডানের ছবিতে- হুইল চেয়ারে বসে হাতে বানানো গুলতি নিয়ে ছুঁড়ছেন ফিলিস্তিনি তরুণ ফাদি আবু সালাহ। দেশমাতৃকার পক্ষে স্লোগান দিতেন তিনি। ইসরাইলের টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটের প্রতিরোধে হাতে বানানো গুলতি দিয়ে ছুঁড়তেন পাথর।গত সোমবার  ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে সকাল থেকেই হুইল চেয়ারে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন সালাহ। একটা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালালে তিনিও প্রতিরোধ করা শুরু করেন। দুপুরের পরেই ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন এই বীর। শেষ সময়েও হাতে ছিল গুলতি, পাশে ছিল হুইল চেয়ার।

বামের ছবি’র হাসোজ্জল হাততালি’র আড়ালে লুকিয়ে আছে পবিত্র শহর জেরুজালেম নিয়ে অপবিত্র কূট-কৌশল ও দখলদারি রাজনীতি।

অপরদিকে ডানের ছবি বার্তা দিচ্ছে- দাসত্ব নয় স্পর্ধাই জীবন, প্রতিরোধেই মুক্তি। মানুষকে বাঁচতে হবে মর্যাদার সাথে। যেন জানান দিচ্ছে- মানুষ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করা।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত বছর ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন। একইসাথে তিনি ঘোষণা করেছিলেন – আমেরিকার দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে আসা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনরাই আপত্তি করেনি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিংহভাগই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য – জেরুজালেমের সার্বভৌমত্ব-বিতর্কের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই শহরকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া ঠিক নয়। এ কারণে, ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন সব দেশই এখনও তেল আবিবেই তাদের দূতাবাস রেখে দিয়েছে।

জেরুজালেম নিয়ে ইসরাইল-আমেরিকা’র এই আগ্রাসনের রয়েছে কূট-কৌশলময় ইতিহাস।

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকায় ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল। ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল।

সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটেন। তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে।

১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন। ইতোমধ্যে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে।  তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে। সেজন্য আরব এবং ইহুদী- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছিল ব্রিটেন। ১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পঁচাত্তর হাজার ইহুদি অভিবাসী আসবে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে। অর্থাৎ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছিল।

 

ব্রিটেনের এ ধরনের পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয়নি ইহুদিরা। তারা একই সাথে ব্রিটেন এবং হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করে। তখন ৩২ হাজার ইহুদি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। সেখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইহুদি সৈন্যরা ব্রিটেন এবং আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বাহিনীর দ্বারা লাখ-লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরেক বাস্তবতা তৈরি হয়। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব ইহুদি বেঁচে ছিলেন তাদের জন্য জন্য কী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

 

তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইহুদীদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা আরো জোরালো হয়। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন।  ট্রুম্যান চেয়েছিলেন হিটলারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক লক্ষ ইহুদিকে অতি দ্রুত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জায়গা দেয়া হোক।

কিন্তু ব্রিটেন বুঝতে পারছিল যে এতো বিপুল সংখ্যক ইহুদিদের ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে সেখানে গৃহযুদ্ধ হবে।

এ সময় ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ সৈন্যদের উপর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো শুরু করে।

ইহুদি সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ বাহিনীর উপর তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি করা যাতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাধানের জন্য ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়তে থাকে।

এরপর বাধ্য হয়ে ব্রিটেন বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দু’টি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য।

ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল আরবদের দ্বিগুণ। স্বভাবতই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।

কিন্তু ফিলিস্তিনীদের ভূখণ্ডে তখন ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। অবশেষে ইহুদিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। কিন্তু আরবরা অনুধাবন করেছিল যে কূটনীতি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তের পর আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড ছেড়ে যাবার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা দিন গণনা করছিল। তখন ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। তাদের গোপন অস্ত্র কারখানাও ছিল। কিন্তু ইহুদিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্ব।

এর বিপরীতে আরবদের কোন নেতৃত্ব ছিলনা। ইহুদীরা বুঝতে পেরেছিল যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পর আরবরা তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল ইহুদিরা।

সবার দৃষ্টি ছিল জেরুজালেম শহরের দিকে। মুসলমান, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র এ জায়গা। জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সেখানে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল।

কিন্তু আরব কিংবা ইহুদি- কোন পক্ষই সেটি মেনে নেয়নি। ফলে জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।  জেরুজালেমে বসবাসরত ইহুদীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আরবরা।

১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইহুদীরা আরবদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

যেহেতু আরবদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না সেজন্য ইহুদিরা একের পর এক কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়। তখন ফিলিস্তিনের একজন নেতা আল-হুসেইনি সিরিয়া গিয়েছিলেন অস্ত্র সহায়তার জন্য। কিন্তু সিরিয়া সরকার ফিলিস্তিনদের সে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেখান থেকে ফিরে এসে আল হুসেইনি আবারো যুদ্ধে নামেন। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিহত হন।

 

ইহুদিরা যখন তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বহু ফিলিস্তিনী আরব তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ইহুদিদের ক্রমাগত এবং জোরালো হামলার মুখে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে ফিলিস্তিনীরা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং অন্য আরব দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের ভেতরে চাপে পড়ে যায়।

১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। একই দিন তৎকালীন ইহুদি নেতারা ঘোষণা করেন যে সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই আরবরা আক্রমণ শুরু করে। একসাথে পাঁচটি আরব দেশ ইসরায়েলকে আক্রমণ করে।

যেসব দেশ একযোগে ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছিল তারা হচ্ছে – মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো। অন্যদিকে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু আরব দেশগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলনা। তাছাড়া আরব নেতৃত্ব একে অপরকে বিশ্বাস করতো না।

 

জেরুজালেম দখলের জন্য আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলছিল  তীব্র লড়াই। ইহুদিরা ভাবছিল জেরুজালেম ছাড়া ইহুদি রাষ্ট্রের কোন অর্থ নেই। অন্যদিকে মুসলমানদের জন্যও জেরুজালেম পবিত্র জায়গা। তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। তাদের অস্ত্রের মজুত শেষ হয়ে যায়।

সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করতে পেরে ইহুদিরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সময় নেয়। আর কিছুদূর অগ্রসর হলেই মিশরীয় বাহিনী তেল আবিবের দিকে অগ্রসর হতে পারতো। তখন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির সময় দু’পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু ইসরায়েল বেশি সুবিধা পেয়েছিল। তখন চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রের চালান আসে ইসরায়েলের হাতে।

যুদ্ধ বিরতী শেষ হলে নতুন করে আরবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। একর পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ইহুদিরা। তেল আবিব এবং জেরুজালেমের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সে সংঘাত থামে। ইসরায়েলী বাহিনী বুঝতে পরে তারা স্বাধীনতা লাভ করছে ঠিকই কিন্তু লড়াই এখনো থামেনি।

 

আরব দেশগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা না থাকার কারণেই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এবং ইসরায়েল দেশটির জন্ম হয়ে সেটি স্থায়ী হতে পেরেছে। অনেক ঐতিহাসিক বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন।

১৯৪৮ সালের পর থেকে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে ইসরায়েল। তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৬৭ সাল নাগাদ ইসরায়েল একটি দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলে এবং পরমাণু শক্তি অর্জনের কাছাকাছি চলে যায়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ও আরব নেতৃত্বের ভুল ও অনৈক্যের সুযোগে ইসরাইল যুদ্ধে জয়লাভ করে।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়- পাশ্চাত্যের কূট-রাজনীতির ফাঁদে আরব দেশসমূহের অনৈক্যের সুযোগকে দফায় দফায় কাজে লাগিয়েছে ইসরাইল। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে আরবদের ভূমিকে দখল করে নিয়েছে তারা।

মাহাথির মোহাম্মদ একবার ওআইসির একটা সম্মেলনে একটা কথা বলে আমেরিকানদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের অতি অল্প সংখ্যক নাগরিকের চেয়ে অনেক অনেক বেশি জনসংখ্যা নিয়ে মুসলিম দেশগুলো পেরে ওঠে না, কারণ ইসরায়েলিরা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে, তারা বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পেয়েছে বহুগুণ বেশি। আর মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া হলো ক্রোধ। ক্রোধের বশে তারা যা করে, তাতে আরও ক্ষতি হয়, তখন তারা আরও ক্রোধান্বিত হয়, আরও নিজেদের ক্ষতি করে ফেলে। মাহাথির মুসলিম বিশ্বকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এতদিন তলে তলে ইসরায়েলকে প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও সৌদি আরবের নতুন উত্তরসূরি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া উচিত ইসরায়েলের। একই পথে হেঁটেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। যা ক্ষুব্ধ করেছে অনেক মুসলিম দেশকে।

সমগ্র জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিন দখল করে মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী ইহুদি রাষ্ট্র গড়ে তোলার ইসরায়েলি নীলনকশা বহুদিনের। ভূমধ্য সাগরের তীর থেকে জর্ডান নদীর পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত সে রাষ্ট্রের বিস্তৃতির লক্ষ্যে ইহুদিবাদীরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তারা মনে করে,এ নীলনকশা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে থাকলেই যথেষ্ট। ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বে ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাঁটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ফিলিস্তিনিদের জন্য লজ্জার ও শোকের। কিন্তু একই সাথে এই ঘটনা ইসরাইলের জন্য হুঁশিয়ারিও যে, তরুণ ফিলিস্তিনিরা এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত, নিজের মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার অর্জন না করা পর্যন্ত এবং ঔপনিবেশিক শকুনের হাত থেকে জেরুসালেম মুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।

হয়ত- এভাবে রক্তপাত চলতে থাকবে, ফাদি আবু সালাহ’র মত লড়াকুরা শহীদ হবে আরো, শত-শত শিশু মারা যাবে; বিশ্ব বিবেক ঘুমাবে। জাতিসংঘ, ওআইসি রা বিবৃতি দিতে থাকবে।

আরব দেশসমূহের ঐক্যই একমাত্র পারে জেরুজালেমকে স-সম্মানে বহাল করতে।

‘রোহিঙ্গা ইস্যু’ নিয়ে গত দু সপ্তাহ ধরে যা চলছে বা চালানো হচ্ছে তা টিনের চশমা পরিধানকারী ব্যক্তি  বা গোত্র  ছাড়া সব মহলের কাছেই পরিস্কার। স্বৈরশাসন, নির্যাতন, বর্বরতা – সব প্রতিশব্দকেই হার মানিয়েছে রাখাইন রাজ্যের অরাজকতা। আর এই অরাজকতা কে কেন্দ্র করে বিবৃতি, প্রতিবাদ-মানববন্ধন, কোন কোন রাষ্ট্রের মানবতা’র পক্ষে থাকার আশ্বাস-অভিলাষ, জাতিসংঘের স্বাভাবিক হাডুডু ক্রীড়রত এবং রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানগত স্যান্ডুইচ জটিলতা (ভারত-চীন) কে ছাপিয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের এক অঞ্চলের মানুষের মহান উদারতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেই আহবান জানালেন- রোহিঙ্গাদের মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত, সেই থেকে কক্সবাজার জেলার ব্যক্তি-সমাজ-গোষ্ঠি দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে পাশে দাঁড়াচ্ছেন রোহিঙ্গাদের সংকটাপূর্ণ সময়ে।

ইতিমধ্যে প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রবেশ করেছে কক্সবাজার এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।  এই তিন লক্ষ শরনার্থীকে পরম মায়ায় কাছে টেনে নিয়েছে স্থানীয়রা।

‘রোহিঙ্গা’ দের রক্তাক্ত করা রাখাইন রাজ্যের রক্তস্বাদ গুলি কেনই বা নিপীড়কদের কাছে মধুময় হয়ে উঠছে? ইতিহাস, পুঁজিবাদ, ধর্মীয় তত্ব – কত কত ব্যখ্যা, উপাখ্যান এখানে!  তবে স্বৈর-শাসকের রক্তচক্ষু-জুলুমের আড়ালে পুঁজিবাদ থাকবেনা- তা কি করে হয়? সেই বৃটিশ দুঃশাসন, ইরাক-আফগান দখল, কোথায় ছিলনা – বানিজ্য অর্থনীতির এই রক্তপাতের রূপকথা।

কি-ই-বা আছে এই আরাকান বা রাখাইন রাজ্যে ? শেষ আগস্টে শুরু হওয়া এই গণহত্যার বহুমাত্রিক কারণ থাকাটা অস্বাভাবিক নয় এবং এখানে পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের ইন্ধন থাকাটা ও অপ্রত্যাশিত নয়।

তিনটি কারণ গুরুত্ব পাচ্ছে- প্রথমত, আরাকান রাজ্যে চীন বিশাল বিনিয়োগ করেছে।  খনিজ সমৃদ্ধ আরাকান হতে গ্যাসলাইন বিস্তৃত আছে চীনের বেইজিং পর্যন্ত। এই পাইপ লাইন দিয়ে খনিজ সরবরাহ মধ্য-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার হাইড্রোকার্বনের বিকল্প হতে পারে। এই রাজ্যের অস্থিরতা বানিজ্যে প্রভাব আনতে পারে এবং এই অস্থিরতার সুফল নিতে পারে আমেরিকার মত কোন পরাশক্তি।

দ্বিতীয়ত- দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ায় ইসলামিক নাম দিয়ে  সন্ত্রাসবাদকে প্রভাবিত করা এবং অস্ত্র বানিজ্যের রুপ উন্মোচন করা।

তৃতীয়ত- ASEAN এ মায়ানমারের সঙ্গে মুসলিম অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কলহের বীজ বপন করা যার ফলে আশিয়ানের বন্ধনে ফাটল ধরবে এবং যার ফায়দা অন্য পরাক্রমশালীরা নিবে।

গুটিবাজদের চাল যাই হোক- নিপীড়নের স্বীকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের পর কক্সবাজারের ব্যক্তি, সমাজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, পাড়ার ক্লাব, রাজনৈতিক কর্মী সবাই- একমাত্র মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাছে থাকছেন। রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, কাপড়, মশারি, মাথা গুঁজার ত্রিপল – আরও কত সামগ্রী শরনার্থীদের  পৌছুচ্ছে কক্সবাজারের মানুষেরা।  ‘কক্সবাজারবাসী’ রোহিঙ্গা শরনার্থী বা অনুপ্রবেশকারীদের যেভাবে সাহায্য করছে ও উদারতা দেখাচ্ছে- বিশ্বের ইতিহাসে মানবিক বিপর্যয়ে কোন বিশেষ অঞ্চলবাসী এভাবে স্ব-উদ্যোগী হয়েছিল কিনা- গবেষণা করে দেখা যেতে পারে।  প্রতিদিন হাজার হাজার পিকআপ-ভ্যানে করে স্থানীয়রা তাদের সাহায্য সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক শিক্ষিত,শ্রমজীবি স্বেচ্ছাসেবক এ সাহায্যভিযানে নিজেদের নিবেশিত করেছেন।

 

আমরা আশা করি- রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান হয়ত শীঘ্রই হবে। তারা তাদের জন্মভূমিতে হয়ত ফিরে যাবে স্বাধীনতা নিয়ে- কিন্তু তাদের জীবনের চরম সংকটাপূর্ণ মুহুর্তে যেভাবে স্থানীয় কক্সবাজার জেলার অধিবাসীরা পাশে থেকেছেন- তা ইতিহাস একদিন সাক্ষ্য দিবে। যদিও, আন্তর্জাতিক কোন গণমাধ্যমে স্থানীয় অধিবাসীদের এই কাছে থাকার স্বীকৃতি ওভাবে এখনো আসেনি

এখনো পর্যন্ত যত আন্তর্জাতিক পুরস্কার ব্যপক আলোচিত হয়, তন্মোধ্যে ‘নোবেল’ পুরস্কার তুলনামূলক কম প্রশ্নবিদ্ধ এবং সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত। যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯১ সালে মায়ানমারের নেত্রী অং সান সূচি কে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল – তা ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল অর্থবহ। কিন্তু গত ক’বছর ধরে সূচি’র প্রকৃত শান্তির-মুখোশ উন্মোচিত হলে নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়েও বিতর্ক রচিত হয়।  আং সান সূ চি-র নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেয়ার জন্য গত কিছুদিন ধরেই দাবি তুলেছেন কোটি বিশ্ববাসী।

তবে আং সান সূ চি-কে দেয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির প্রধান বেরিট রেইস এন্ডারসন। তিনি বলেন  “১৯৯১ সালে আং সান সূ চি-কে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছিল মিয়ানমারে স্বাধীনতার জন্য সামরিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কারণে। কিন্তু একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর কি করছেন, তা দেখা আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না, একটা আমাদের কাজও নয়।”

ইতিহাসের নির্যাস হয়ত একদিন সাক্ষ্য দিবে- সুচি’র আপোশ ও মুখোশে’র লুকোচূরি । কাগুজে-কলমে সূচি’র নোবেল শান্তি পুরস্কার বাদ না হলেও বিশ্বের মানুষেরা সূচি কে শান্তির পেত্নী হিসেবেই মানছেন এখন।

১৯৩৮ সালে ন্যানসেন ইন্টারন্যাশনাল অফিস ফর রিফিউজিস নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে চল্লিশ হাজার শরনার্থীকে পুনর্বাসিত করে। এ ছাড়া ও গত শতাব্দিতে রেডক্রস, অ্যামনেস্টি থেকে শুরু করে অনেক প্রতিষ্ঠান নোবেল শান্তি পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত বিশ্বের কোন অঞ্চলের  অধিবাসীরা শান্তিতে নোবেল জিতেনি। – তাতে কি!

এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাখাইন গণহত্যায় নিপীড়িত তিন লক্ষ রোহিঙ্গা কে পরম মায়ায় কাছে টেনে নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারবাসী যে ঊদারতা, মানবতা দেখিয়েছেন- তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হওয়া দরকার।

নরওয়েজীয় নোবেল সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত শান্তি পুরস্কারের মানদন্ড হিসেবে লিখা আছে “যিনি জাতিসমূহের বন্ধুত্ব রক্ষা এবং বৃদ্ধি, যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত সেনাবাহিনীর অপসারণ বা হ্রাস এবং শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখবেন তাকে এই পুরস্কার দেয়া “। রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণে ‘যিনি’র ভূমিকায় লক্ষাধিক “কক্সবাজারবাসী” প্রত্যক্ষ অবদান রাখছে বৈকি।

রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাময়িক শান্তি নিশ্চিত করছে বলেই “কক্সবাজারবাসী” নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে। এই দাবি মোটেই অতিরঞ্জিত নয়, এ দাবি সময়ের প্রেক্ষাপটে খবই সাবলীল এবং অকপটে।

স্বীকৃতি পাক বা না পাক, ‘কক্সবাজারবাসী’ ইতিহাসে মানবতার প্রতীক হয়ে থাকবে।

 

সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে-  সরকারী অনেক নেতা ক্ষেত্রবিশেষে মন্ত্রীরাও  জিডিপি এবং মাথাপিছু আয় বাড়া নিয়ে বেশ বাগাড়ম্বর বা স্তুতি করে থাকেন। দেশের জিডিপি বাড়ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে দেশ এগুচ্ছে – কিন্তু এতে কি দেশের প্রকৃত সমৃদ্ধি হচ্ছে বা জীবনযাত্রার মানের অগ্রগতি ঘটছে?

মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি হলো গাড়ির স্পিডোমিটারের মতো। অর্থনীতি কতটা দ্রুত বা মন্থর তা বোঝা যায় এটি দেখে। তবে স্পিডোমিটার বলতে পারে না গাড়িটি সঠিক পথে চলছে কি না। পথ বেঠিক বা অসম হলে গতি বৃদ্ধিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জিডিপি সামগ্রিক পরিমাণগত হিসাব দেয়। প্রবৃদ্ধিতে জিডিপি বাড়ে, কিন্তু এটি সমৃদ্ধির নির্দেশক নয়। বেশির ভাগ মানুষের জীবনমানের পতন সত্ত্বেও সম্পদশালী কিছু মানুষের আয় বৃদ্ধি কোনো দেশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এনে দিতে পারে।  বিশ্বের নামকরা অনেক অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জিডিপি পদ্ধতিতে কোনো দেশের আর্থিক অগ্রগতি পরিমাপ করা গেলেও এটি ওই দেশের মানুষের সমৃদ্ধি বা সুখের নির্দেশক নয়।

বাংলাদেশ কে নিয়ে সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।  ১৪ মে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বার্ষিক ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার। জিডিপি’র মতই বেশ দ্রুত হারে বাড়ছে বাংলাদেশের জাতীয় আয়, সেই সঙ্গে মাথাপিছু আয়।

বিশ্বব্যাংক সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে থাকে। এগুলো হলো: (১) নিম্ন আয়ভুক্ত দেশ (মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত)। (২ক) নিম্ন মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ (১ হাজার ২৬ মার্কিন ডলার থেকে ৪ হাজার ৩৫ ডলার)। (২খ) উচ্চ মধ্যম আয় (৪ হাজার ৩৬ মার্কিন ডলার থেকে ১২ হাজার ৪৭৫ ডলার)। (৩) উচ্চ আয়ভুক্ত দেশ (১২ হাজার ৪৭৬ মার্কিন ডলার থেকে বেশি)। সে হিসাবে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৫ ডলার অতিক্রম করায়  ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভাবের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও ভারত এখনো বাংলাদেশের মতো নিম্ন মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ।

বাস্তবতা হচ্ছে- মাথাপিছু আয় বেশি হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন হতে পারে।  আফ্রিকার বহু দেশে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, মধ্যম আয়ের বিবরণে তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক আগে থেকেই এগিয়ে, কিন্তু সেখানে মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন। নাইজেরিয়ার মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো, এটা বলা যাবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং আরও খারাপ।

বস্তুত বাংলাদেশের জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান হচ্ছে প্রবাসী আয়ের। ২০১৬ সালের পুরো সময়ে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে। রেমিট্যান্সের এই অঙ্ক এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় ১৭০ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ১১.১১ শতাংশ কম। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুর কারণে গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ব্যপক হারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের অনেকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি রেমিট্যান্সের টাকার উপর নির্ভরশীল।

আরো একটি বাস্তবতা হচ্ছে, জিডিপি অগ্রযাত্রা কোনভাবেই চাকরিবাজারের মন্দাবস্থা দূর করতে পারছেনা। যেখানে ২০১০ থেকে ২০১৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৪০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে ২০১৩ থেকে ২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ১৪ লক্ষ মাত্র। দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা (জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বিচারে) যেভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ঠিক তার উল্টাহারে হ্রাস পাচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার।

 

গত জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অনেক অর্থনীতিবিদই বলেন, জিডিপির মধ্যে একটি দেশের মানুষের উন্নয়ন, সন্তুষ্টি বা সমৃদ্ধি পরিমাপের কিছু নেই। এসব বোঝার জন্য ভিন্ন উপায় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দেন তাঁরা। তাঁদের মতে, জিডিপি দিয়ে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মাপা যায়, কিন্তু দেশের মানুষের ভালো-মন্দের কিছুই বুঝা যায় না। দেশের মানুষের উন্নয়ন বা সমৃদ্ধি পরিমাপের জন্য যুক্ত্ররাজ্য বা ভূটানের উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে।

২০১০ সালে   দেশের মানুষ কতটা ভালো আছে তা জানার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন  প্রথমবারের মতো জিডিপির বাইরে পাঁচটি সূচক ব্যবহার করার ঘোষণা দেন। এগুলো হলো ভালো চাকরি, সরকারি নীতির ভালো-মন্দ, পরিবেশ সুরক্ষা, স্বচ্ছতা ও সুস্বাস্থ্য।

তথাকথিত অনুন্নত দেশ হলেও ভুটান মাথাপিছু জাতীয় আয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে, আইএমএফের বৈশ্বিক রিপোর্টে বাংলাদেশে যখন মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২০০ ডলার অতিক্রম করেছে, তখনই ভুটানে মাথাপিছু আয় তার দ্বিগুণেরও বেশি, আড়াই হাজার ডলার। তারপরও ভুটান জিডিপি–মাথাপিছু আয় নিয়ে সীমাহীন উচ্ছ্বাসে গা ভাসায়নি বরং জিডিপিকেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণাকেই প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্বকে দেওয়া তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনী পদ্ধতি ‘মোট জাতীয় সুখ’ অর্থনীতির পরিমাণগত দিকের ওপর সব ছেড়ে না দিয়ে মানুষের জীবন ও পরিবেশ নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বেশি। এই হিসাব পদ্ধতিতে মোট নয়টি ক্ষেত্র বিবেচনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়: মানসিক ভালো থাকা, সময়ের ব্যবহার, সম্প্রদায়, জীবনীশক্তি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিস্থাপকতা, জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সুশাসন।

জিডিপি’র সীমাবদ্ধতার জন্য একটি উদাহরণ দিই। ধরা যাক দুটি দেশ এক বছরে ১০০০  টাকার পণ্য ও সেবা উত্পাদন করেছে। অর্থাৎ তাদের জিডিপি সমান। কিন্তু একটি দেশের সরকার ১০০০  টাকার মধ্যে ৭০০  টাকা লুট করেছে। আরেক দেশের সরকার ১০০০  টাকা জনগণের কল্যাণে সমহারে ব্যয় করেছে। এই দুই দেশের মধ্যে কোনটি ভালো, তা জিডিপি বলতে পারে না।

যেখানে ১৬ কোটি মানুষের অধিকাংশের  তিনবেলার খাবার মোটা চালের বাজার মূল্য বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি , সেখানে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ জিডিপি’র অগ্রযাত্রার সুবিধা ভালভাবে ভোগ করছে – বলাটা অনুচিত হবে। এ অবস্থায় জিডিপি বা মাথাপিছু আয়  বৃদ্ধি নিয়ে স্তুতিগান গাইতে থাকা সংসদ সদস্যদের ভূমিকাটা আরো বেশি প্রশস্থ হওয়া উচিত। সুনির্বাচনের প্রত্যয় যদি থেকেই থাকে, মানবসূচক সমৃদ্ধির স্তুতিগানই গাইতে হবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির গান তখন হয়ত কাজে দিবেনা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে জিডিপির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে ঠিকই কিন্তু তা বিভিন্ন মানব উন্নয়ন সূচক  যেমন শিক্ষার উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও বাসস্থানের সুবিধা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারেনা। আর একটি দেশের সমৃদ্ধি বা প্রকৃত উন্নয়ন মানব উন্নয়ন সুচকের উপর নির্ভরশীল, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির উপর নয়।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাইবার হামলা শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে এবং ধারণা করা হচ্ছে এ সাইবার হামলা সহসা বন্ধ হচ্ছেনা, বরং এর ব্যপকতা আরো বেড়ে যেতে পারে।

কি হয়েছিল-ঃ

কিছু অজানা হামলাকারী র‍্যানসমওয়্যার ভাইরাস যার নাম “ওয়ান্যাক্রাই” ছড়িয়ে দিয়েছে কম্পিউটারে। হ্যাকারদের ছড়িয়ে দেওয়া ক্ষতিকর সফটওয়্যার র‍্যানসমওয়ারে গত শুক্রবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো স্থানের কম্পিউটার-ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। হামলার ব্যাপকতা রোববার আরও বাড়ে। অন্তত ১৫০টি দেশ এই সাইবার হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। হামলার শিকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখের বেশি কম্পিউটার। কোন কম্পিউটার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কম্পিউটারের সব ফাইল কিংবা ডাটা অদৃশ্য হয়ে যায়। তথ্যকে এনক্রিপ্ট করে একে ডিক্রিপ্ট করার জন্য টাকা চাওয়া হয়। যদিও, অর্থ দিলেই ডাটা পুনরোদ্ধার হবে এ ধরণের কোন নিশ্চয়তা নেয়।

‘র‍্যানসমওয়্যার’ কি-ঃ

‘র‍্যানসমওয়্যার’ হচ্ছে এমন এক ধরনের ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস, যা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবহারকারীর এক্সেসে বাধা দেয়। অনেক সময় হার্ডডিস্কের অংশ বা ফাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে এক্সেস বন্ধ করে দেয় এবং পরে ওই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ফেরত দেয়ার জন্য মুক্তিপণ বা অর্থ দাবি করা হয়। ‘ট্রোজান ভাইরাসের’ মতো এ ধরনের ম্যালওয়্যার এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কেন এই সাইবার হামলাঃ

শুক্রবারের সাইবার হামলাটি মূলত হয়েছে মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেমের একটি প্রযুক্তিগত দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য গত মার্চ মাসেই মাইক্রোসফট নিরাপত্তা আপডেট রিলিজ করে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্টান কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী তাদের কম্পিউটারে এই আপডেটটি ইন্সটল করেনি যার ফলে এই হামলা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএর তৈরি করা একটি টুল ব্যবহার করে এই সাইবার হামলা চালানো হয়। গত এপ্রিলে শ্যাডো ব্রোকারস নামের হ্যাকাররা ওই প্রযুক্তিটি চুরি করে এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী করা টুল চুরি করা হয়েছে বলে এ ঘটনার জন্য মাইক্রোসফট জোরালোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তথা নিরাপত্তা সংস্থার সমালোচনা করেছে।  হামলাকারীরা  এই টুল ব্যবহার করে সে সমস্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয় যেসব কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট হালনাগাদ করা হয়নি।

‘কিল সুইচ’ থামাল হামলার ব্যপকতাঃ

শুক্রবার যেভাবে বিস্তার হচ্ছিল এই সাইবার হামলা, তা আপাতত ঠেকানো হয়েছে একটি ‘কিল সুইচ’ চালু করার মাধ্যমে। যুক্তরাজ্যের ২২ বছরের এক তরুণ ব্লগার মাত্র ১০ ডলার ৬৯ সেন্ট খরচ করে ঠেকিয়ে দিয়েছেন র‍্যানসমওয়্যারের বিস্তার। ম্যালওয়্যারটেক ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি এই ম্যালওয়্যার শনাক্ত করার কাজ করেছেন। তাঁর দাবি, এর পুরোটাই ঘটেছে ‘দুর্ঘটনাক্রমে’। ক্ষতিকর র‍্যানসমওয়্যারটির কোডে পাওয়া কিল সুইচ ব্যবহার করে এর বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হন তিনি। এতে নতুন কম্পিউটারে এটি ছড়াতে পারেনি।

কিন্তু কী খুঁজে পেয়েছিলেন ওই গবেষক? তিনি প্রথমে দেখতে পান, প্রতিবার কোনো নতুন কম্পিউটারে ছড়ানোর সময় ওই ম্যালওয়্যার একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে ঠিকানার ওয়েবসাইটে তা ঢুকতে চাইছিল, সেটি ছিল একটি অনিবন্ধিত ডোমেইন।

ম্যালওয়্যারটেক ছদ্মনামের ওই তরুণ গবেষক সেই ডোমেইনটির নিবন্ধন নেন এবং মাত্র ১০ ডলার ৬৯ সেন্ট খরচ করে তা কিনে নেন। এ কাজ করার সময় ওই গবেষক অপ্রত্যাশিতভাবে র‍্যানসমওয়্যারটির কোডের এমন একটি অংশকে সক্রিয় করেন, যাতে করে এটি নতুন কম্পিউটারে ছড়ানো বন্ধ করে দেয়। এটিকেই বলা হচ্ছে কিল সুইচ।

তবে এই কিল সুইচ ব্যবহার করে র‍্যানসমওয়্যারটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হলেও যেসব কম্পিউটার বা মোবাইলকে এটি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সেগুলো ঠিক করা সম্ভব হয়নি। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এমন নতুন ধরনের ম্যালওয়্যারও আক্রমণ চালাতে পারে, যাতে হয়তো কিল সুইচই দেখা যাবে না।

 

কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখব এই সাইবারের হামলা থেকে-ঃ

প্রথমেই বলেছি, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সাইবার হামলা হচ্ছে মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেম হালনাগাদ না থাকার কারণে। যারা অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন তাদের হালনাগাদ অটোমেটিক হয়ে যায়। উইন্ডোজ ৭ ও উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেম যাতে আপডেটেড থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। পুরনো অপারেটিং সিস্টেম (যেমন এক্স পি, উইন্ডোজ ২০০৩) এর জন্য মাইক্রসফট আপডেট ছেড়েছে, তা ইন্সটল করতে হবে।

যারা পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন, তাদের হামলার স্বীকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 

“স্ব-সচেতনতা” ই রক্ষাকবচ বা সেইফগার্ড-ঃ

আপনার কিছু সতকর্তাই পারে আপনার কম্পিউটার কে ভাইরাসের কবল থেকে রক্ষা করতে। ধরুণ আপনার ব্যক্তিগত কিংবা অফিসের এমন কোন গূরুত্বপূর্ণ ফাইল মুছে গেল এ আক্রমনের ফলে, এতে কিন্তু আর্থ-সামাজিক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন আপনি হবেন। তাই স্ব-সচেতনতা গ্রহণ করা খুবই জরুরী।

১। আপনার মুল্যবান তথ্য ব্যাকআপ রাখেন। ব্যাকআপ কোন এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ বা নিরাপদ ক্লাউডে রাখা যেতে পারে।

২। হাল নাগাদ এন্টি ভাইরাস সফটওয়ার ব্যবহার করুন। হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার কথা তো আগেই বলেছি।

৩। ইউ এস বি বা এক্সটার্নাল হার্ড ডিস্ক কম্পিউটারে সংযুক্ত হওয়ার আগে অবশ্যই স্ক্যান করে নেন।

৪। কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার আগে নিশ্চিত হন এটি আপনার কাজ সংশ্লিষ্ট কিনা। আপনাকে ট্র্যাপ করে অচেনা ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে হ্যাকাররা।

৫। ভুলে ও অচেনা কোন ইমেইল খুলবেন না। এমনকি পরিচিত জনের ইমেইলের কোন এটাচম্যান্ট (সংযুক্তি ফাইল) ও খোলার আগে সতর্ক হোন। প্রয়োজনে ফোন করে নিশ্চিত হোন আসলেই এ ধরণের কোন ফাইল পাঠিয়েছেন কিনা। সাধারণত  র‍্যানসমওয়্যার ভাইরাস ছড়ায় ইমেইলের মাধ্যমে।

৬। কোন ক্র্যাক সফটওয়ার ভুলে ও ডাউনলোড কিংবা ইন্সটল করা থেকে বিরত থাকুন।

৭। আপনার কম্পিউটার র‍্যানসমওয়্যার আক্রান্ত হলে তড়িৎ আপনার ইন্টারনেট সংযুক্তি বন্ধ করুন। কারণ এ ভাইরাসটি নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

 

শুরুতেই বলেছি, এই সাইবার হামলা হয়েছে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম টার্গেট করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এজেন্সি (NSA) র তথ্য চুরি করে হ্যাকাররা হ্যাকিং ফাঁদ পেতেছে। তাই এই হামলার শিখড়ে অনেক গভীর দুরভিসন্ধি থাকতে পারে এবং এর চেয়ে ভয়াবহ সাইবার হামলার আশংকা রয়েছে। মাইক্রোসফট “ডিজিটাল জেনেভা কনভেনশন” গঠনের মাধ্যমে প্রযুক্তির নিরাপত্তা ইস্যুগুলি চিহ্নিত করার আহবান জানিয়েছে ইতিমধ্যে।

Product (Down-level) Release Date CDN Link
Security Update for Windows Server 2003 for x64-based Systems (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/d/csa/csa/secu/2017/02/windowsserver2003-kb4012598-x64-custom-enu_f24d8723f246145524b9030e4752c96430981211.exe
Security Update for Windows 8 for x64-based Systems (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows8-rt-kb4012598-x64_f05841d2e94197c2dca4457f1b895e8f632b7f8e.msu
Security Update for Windows 8 (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows8-rt-kb4012598-x86_a0f1c953a24dd042acc540c59b339f55fb18f594.msu
Security Update for Windows XP SP3 for XPe (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/c/csa/csa/secu/2017/02/windowsxp-kb4012598-x86-embedded-custom-enu_8f2c266f83a7e1b100ddb9acd4a6a3ab5ecd4059.exe
Security Update for Windows XP SP3 (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/d/csa/csa/secu/2017/02/windowsxp-kb4012598-x86-custom-enu_eceb7d5023bbb23c0dc633e46b9c2f14fa6ee9dd.exe
Security Update for Windows Server 2003 (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/c/csa/csa/secu/2017/02/windowsserver2003-kb4012598-x86-custom-enu_f617caf6e7ee6f43abe4b386cb1d26b3318693cf.exe
Security Update for Windows XP SP2 for x64-based Systems (KB4012598) 5/13/2017 http://download.windowsupdate.com/d/csa/csa/secu/2017/02/windowsserver2003-kb4012598-x64-custom-enu_f24d8723f246145524b9030e4752c96430981211.exe
Security Update for Windows Vista (KB4012598) – Windows Vista 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/csa/csa/secu/2017/02/windowsxp-kb4012598-x86-custom-enu_eceb7d5023bbb23c0dc633e46b9c2f14fa6ee9dd.exe
Security Update for Windows Server 2008 (KB4012598) – Windows Server 2008 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.0-kb4012598-x86_13e9b3d77ba5599764c296075a796c16a85c745c.msu
Security Update for Windows Vista for x64-based Systems (KB4012598) – Windows Vista 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.0-kb4012598-x64_6a186ba2b2b98b2144b50f88baf33a5fa53b5d76.msu
Security Update for Windows Server 2008 for Itanium-based Systems (KB4012598) – Windows Server 2008 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.0-kb4012598-ia64_83a6f5a70588b27623b11c42f1c8124a25d489de.msu
Security Update for Windows Server 2008 for x64-based Systems (KB4012598) – Windows Server 2008 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.0-kb4012598-x64_6a186ba2b2b98b2144b50f88baf33a5fa53b5d76.msu
Security Update for WES09 and POSReady 2009 (KB4012598) – Windows XP Embedded 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windowsxp-kb4012598-x86-embedded-enu_9515c11bc77e39695b83cb6f0e41119387580e30.exe
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows 7 for x64-based Systems (KB4012212) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.1-kb4012212-x64_2decefaa02e2058dcd965702509a992d8c4e92b3.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows 7 (KB4012212) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.1-kb4012212-x86_6bb04d3971bb58ae4bac44219e7169812914df3f.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Embedded Standard 7 (KB4012212) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.1-kb4012212-x86_6bb04d3971bb58ae4bac44219e7169812914df3f.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Embedded Standard 7 for x64-based Systems (KB4012212) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.1-kb4012212-x64_2decefaa02e2058dcd965702509a992d8c4e92b3.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Server 2008 R2 for x64-based Systems (KB4012212) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/d/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.1-kb4012212-x64_2decefaa02e2058dcd965702509a992d8c4e92b3.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Server 2008 R2 for Itanium-based Systems (KB4012212) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows6.1-kb4012212-ia64_93a42b16dbea87fa04e2b527676a499f9fbba554.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows 8.1 (KB4012213) – Windows 8.1 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows8.1-kb4012213-x86_e118939b397bc983971c88d9c9ecc8cbec471b05.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows 8.1 for x64-based Systems (KB4012213) -Windows 8.1 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows8.1-kb4012213-x64_5b24b9ca5a123a844ed793e0f2be974148520349.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Server 2012 R2 (KB4012213) -Windows Server 2012 R2 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows8.1-kb4012213-x64_5b24b9ca5a123a844ed793e0f2be974148520349.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Embedded 8 Standard (KB4012214) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows8-rt-kb4012214-x86_5e7e78f67d65838d198aa881a87a31345952d78e.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Embedded 8 Standard for x64-based Systems (KB4012214) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows8-rt-kb4012214-x64_b14951d29cb4fd880948f5204d54721e64c9942b.msu
March, 2017 Security Only Quality Update for Windows Server 2012 (KB4012214) 3/14/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/02/windows8-rt-kb4012214-x64_b14951d29cb4fd880948f5204d54721e64c9942b.msu
Most current Windows 10 cumulative updates – May 2017
Windows 10 
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 for x64-based Systems (KB4019474) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019474-x64_4ed033d1c2af2daea1298d10da1fad15a482f726.msu
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 for x86-based Systems (KB4019474) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019474-x86_259adeed4a4037f749afab211ff1bc6a771ff7f6.msu
Windows 10 Version 1511 
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 Version 1511 (KB4019473) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019473-x86_5e2b7bce2f1b116288b4f1f78449c66ecc7c7a53.msu
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 Version 1511 for x64-based Systems (KB4019473) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019473-x64_c23b6f55caf1b9d6c14161b66fe9c9dfb4ad475c.msu
Windows 10 Version 1607  & Windows Server 2016 
2017-05 Cumulative Update for Windows Server 2016 for x64-based Systems (KB4019472) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019472-x64_dda304140351259fcf15ca7b1f5b51cb60445a0a.msu
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 Version 1607 for x64-based Systems (KB4019472) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019472-x64_dda304140351259fcf15ca7b1f5b51cb60445a0a.msu
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 Version 1607 for x86-based Systems (KB4019472) 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4019472-x86_9bf106e898b57c20917cd98fd8b8d250333015a5.msu
Windows 10 Version 1703 
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 Version 1703 for x64-based Systems (KB4016871) -Windows 10 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4016871-x64_27dfce9dbd92670711822de2f5f5ce0151551b7d.msu
2017-05 Cumulative Update for Windows 10 Version 1703 for x86-based Systems (KB4016871) -Windows 10 5/9/2017 http://download.windowsupdate.com/c/msdownload/update/software/secu/2017/05/windows10.0-kb4016871-x86_5901409e58d1c6c9440e420d99c42b08f227356e.msu

জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। বিগত কয়েক মাস ধরেই প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারী অনেক সাংসদ, মন্ত্রীরা সভা, সমাবেশে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। এ যাত্রায় সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি একটু পিছিয়েই ছিল। প্রথাগত সভা-সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া, নেতা-কর্মীদের মামলা-মোকদ্দমার ভয় সহ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার হতাশা আচ্ছন্ন করে রেখেছে জনসমর্থন নির্ভর অন্যতম এই রাজনৈতিক দলকে। এর উপর নতুন ভোটারদের আকর্ষণ করার মত দিকনির্দেশনা ও দিতে পারছিলনা দলটি। দলের হাইকমান্ডে ক্যারিশমাটিক তরুণ নেতৃত্বের অভাব অনেকদিন ধরেই চিহ্নিত। জাতীয় নির্বাচনের বছরখানেক আগে ২০৩০ সালের রোডম্যাপ ঘোষণা নির্বাচনের হাওয়ার নতুন পাল বলে ধরেই নেওয়া যায়।

২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং রাজনীতিকে বিএনপি কোথায় নিতে চায়, বুধবার তার একটি রূপকল্প দিয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন  খালেদা জিয়া। একানব্বইতে গনতন্ত্র আসার পর দুদফায় পূর্ণমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের ভিশন বা রুপকল্প ঘোষণা তে প্রতিক্রিয়া হবে , সরকারী দল সমালোচনা করবে –  এটাই স্বাভাবিক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পিছনে তৎকালীন মহাজোটের “ভিশন ২০২১” অন্যতম প্রভাবক ছিল ও তরুণদের আকর্ষণ করেছিল। বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক  প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করাটা সুস্থ রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার।

বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ শিরোনামের লিখিত বক্তব্য শেষ হতে না হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রশংসা, প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে জোরালোভাবে। তবে সমালোচনার সব তকমাকে ছাপিয়ে গেছে সরকারী কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি বর্গের প্রতিক্রিয়া। বেগম জিয়ার বক্তব্য শেষ না হওয়ার আগেই অনেকটা কৈশোরশুলভ বাল্যিখেলাপনে ফেসবুকে ব্যঙ্গার্থক শ্লেষমূলক স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করলেন বর্তমান সময়ের তারুণ্যের আইডল খ্যাত একজন প্রতিমন্ত্রী। বেগম জিয়া তাঁর ভিশনে 3G (Good Governance, Good Government এবং Good Policy) বুঝালেও ঐ প্রতিমন্ত্রী টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি (3G) হিসেবে ধরে শ্লেষাত্নক স্ট্যাটাস দেন। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলার কে পড়তে গিয়ে ৫০০ ডলার বলায় সেই সু্যোগ টি নিতেও ছাড়েনি তরুণ এই মন্ত্রী। অথচ, পরের দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন- খালেদা জিয়ার এই নতুন রূপরেখা দেশের জন্য ভাল। কয়েক ঘন্টার মধ্যে এ ধরণের প্রতিক্রিয়ায় মনে হতেই পারে-  বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ এর ঝাঁজ ভালই আছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণদের প্রতিক্রিয়ায় মনে করা যেতে পারে – বাংলাদেশের অনেক তরুণ এই ভিশনে  উৎসাহিত হবে। যে তরুণরা বিএনপিকে সমর্থন করেন, তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হবে। প্রযুক্তি বিমুখ বলে বিএনপি’র যে তকমা ছিল তা কিছুটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছে দলটি – তাদের ভিশনের মাধ্যমে। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি খাতকে প্রধান রফতানি খাত হিসেবে পরিকল্পনায় রাখায় উৎসাহিত হবে প্রযুক্তি নির্ভর তরুণ প্রজন্ম।

ধর্মঘেষা ও কিছুটা সাম্প্রদায়িক চেতনার হিসেবে সমালোচনাটুকু ও কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টা আছে এই রুপকল্পে। বিশেষ করে রংধনু (Rainbow) জাতি হিসেবে প্রতিষ্টা করার পরিকল্পনা টুকু আকর্ষণীয় ও নতুন। এই পরিকল্পনানুযায়ী দেশের যে কোন গোত্র, ধর্ম, বর্ণ সমানভাবে অধিকার আদায় করতে পারবে।

বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ এর ঝাঁজ সবচেয়ে বেশি এসেছে – প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সংকুচিত করার পরিকল্পনা থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোন প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করলেন, বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বেশি। রুপকল্পে সংবিধানিক বিষয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে তা হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস করে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করা , সংবিধানের বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলি পুনঃসংস্কার, সরকারি হিসাব কমিটিসহ সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়া। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ ধরণের আশ্বাস বা পরিকল্পনা ক্ষমতায় আসার আগে অনেকেই বলে, কিন্তু যেই ক্ষমতা কুক্ষিগত সেই বেমালুম ভুলে যাওয়া হয়।

২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ঘোষিত ভিশন ২০২১ এর অনেক অংশের সংগেই সম্পূরক ভাবে মিল রয়েছে বিএনপি ঘোষিত ভিশন ২০৩০ এর। বিশেষ করে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও কৃষক, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ইত্যাদিতে যেসব অঙ্গীকার প্রতিধ্বনিত হয়েছে তা বর্তমান সরকারের রূপকল্পের সঙ্গে অনেকাংশেই মিলে যায়। ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি দু অংকে পৌছানোর বাস্তবসম্মত অভিলাস রয়েছে এই রুপকল্পে। এই ভিশনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫+৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এতে।

ঘোষিত ভিশনে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাক্যটি উল্লেখ করা যেতে পারে “ বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোন প্রভু নেই।“। মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলার করার আশ্বাস থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা উল্লেখ নেয়।  ভিশনে তথ্য প্রযুক্তি খাতে উল্লেখ করেছে “ বর্তমান সরকার ICT সেক্টরে উন্নয়নের বাগাড়ম্বর করলেও বাস্তব চিত্র সুখকর নয়।“ রুপকল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে রূপান্তর করার কথা লিপিবদ্ধ আছে। ভিওআইপি (VOIP) কে উন্মুক্ত করার কথা উল্লেখ আছে এতে। তথ্য প্রযুক্তি খাতের কাল আইন ৫৭ ধারা বাতিলের কথা বলা হয়েছে এতে। তথ্য প্রযুক্তি খাতকে বিএনপি’র বিশেষ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ই-গভর্ন্মেন্টের (E Government) এর কথা উল্লেখ নেয় এতে।

আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপি আঞ্চলিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ থাকলেও তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেয় এতে।  সমুদ্রের উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পদের মজুদ  নির্ভর নীল অর্থনীতির আকাংখার (blue economy) উল্লেখ রয়েছে এই ভিশনে।

ধারণা করা হয়, বিএনপি শাসনামলের সবেচেয়ে অবহেলিত খাত ছিল বিদ্যুৎ খাত। ভিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ৩৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কে স্বচ্ছতায় আনার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মুল্যে সরবরাহ করার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে এই রুপকল্পে।

পর্যটন খাত নিয়ে গৎবাঁধা স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। এই রুপকল্পে পর্যটন খাতকে বিশেষভাবে মূল্যায়িত করা হয়নি।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন পরিকল্পনা নেয় এই রূপকল্পে। তথ্য প্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হলে ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনার উল্লেখ করা হয়নি।

আগেই বলেছি, ২০০৮ সালের নির্বাচনের জয়ের পিছনে বিশেষ প্রভাবক ছিল আওয়ামীলীগ ঘোষিত তখনকার ভিশন ২০২১। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ তাদের এ রূপকল্পের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’কাছ থেকে এ ধরণের কোন পরিকল্পনা শোনা যায়নি। দেরিতে হলেও দলটি হয়তো এখন অনুধাবন করেছে যে তাদের প্রতিপক্ষের সাথে তাল মিলিয়ে রাজনীতি এবং ভোটারদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে একটি রূপকল্প উপস্থাপন করা জরুরী।

তাই বিএনপি ঘোষিত এই ভিশনকে সরকারী দলের নেতারা ভ্রান্তিবিলাস, মেধাশূন্য প্রলাপ, ভাঁওতাবাজি সহ নানা উপমা দিলেও সরকার যে বিএনপি’র এই স্ট্রাটেজি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন  – তা তরুণ প্রতিমন্ত্রীর বাল্যিখেলাপনা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখলেই বুঝা যায়।

ভিশনের এই ঝাঁজ জনগণের কাছে তখনই পৌছুবে যদি বিএনপি আগামিতে এই ঘোষণা অনুযায়ী তাদের পরিকল্পনা পরিচালিত করে। আর সরকারী দল যদি তাদের আত্ন-অহংকারে ভোগা মন্ত্রীদের কথার লাগাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন – তাইলে ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পরবেন বৈকি।

দেশের মানুষের জন্য বিশেষ পাওয়া হবে যদি রাজনীতিবিদ রা তাদের স্বঘোষিত ভিশনের ব্যপারে আন্তরিক থাকে মনে-প্রাণে।

Ex- students of Cox’sBazar Govt. High school (CGHS) celebrated first reunion on 25 December 2016 in its 142 years glorious history.

Cox’sBazar Govt. High School was established in 1874.  Initially it was established as a Madrasha. In 1908, British Govt. took over and renamed it Middle English (ME) School. It was converted to Higher English School (HE) in 4th January, 1923 & got approval for matriculation exam under Calcutta University. In 1925, four students achieved first division in matriculation exam which was outstanding result those time. In 1952, it was named to Cox’sBazar Model High School. It became government institution in 1970 and named as Cox’sBazar Govt. High School.

CGHS has a glorious history. It has notable contribution in all freedom movements including anti-British movement, language movement & liberation war. Martyr Nirmal Lala & Shoileshwar Chakraborty died in anti-British government movement while they were student of this school. In 1952, student of class X Khaled Musharraf leaded a protest including students at Cox’sBazar in favor of Bangla as a national language who became sector commander in 1971. Two teachers (Shah Alam, Bashir) and students (Shamsul Alam, Shoshi) died during liberation war. Students of this school also participated in education movement in 1962.

 

Hundreds of notable alumni including scientist, players, cultural activists, engineers, doctors, educationalists, politicians, businessmen have been contributed home and abroad successfully.

On 25th December 2016, ex-students of this school celebrated their first ever Reunion in 142 years history. Prominent educationalist Dr. Abdullah Abu Sayeed, chairman of Biswa Sahitya Kendra was chief speaker in the event. Cabinet Secretary Mr. Shafiul Alam was chief guest. Two thousands alumni enjoyed day long program and they re-invented their school days with joys and remembrance.

Alumni’s re explored their old school days with same manners including school assembly, reciting national anthem, playing sports, history class, tiffin break etc. Reunion committee honored freedom fighters who were student of this schools and ex-teachers remembering their dedication and contribution.

 

 

Late Sector Commander Khaled Musharraf was given posthumous reception as he was student of this school, her daughter Mahjabeen Khaled MP received the reception.

 

 

 

 

The slogan of the reunion was “Shotoborsher kolahole, ek sathe shokole”. At the end of the day, a 30 minute documentary named “Priyotomeshu Ishkulbela” was displayed which included memory recall of school days of alumni’s. The theme of the documentary was, school life is best period of human life & CGHS has given chance to its students enjoying the period. Truly, 25 December 2016 was a red letter day of CGHS Alumni’s.

 

 

Muhibbul Muktadir Tanim was Chief Coordinator of CGHS Reunion team and he passed SSC from this school in 1998. He is an IT Professional.