Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘কক্সবাজার’ Category

Ex- students of Cox’sBazar Govt. High school (CGHS) celebrated first reunion on 25 December 2016 in its 142 years glorious history.

Cox’sBazar Govt. High School was established in 1874.  Initially it was established as a Madrasha. In 1908, British Govt. took over and renamed it Middle English (ME) School. It was converted to Higher English School (HE) in 4th January, 1923 & got approval for matriculation exam under Calcutta University. In 1925, four students achieved first division in matriculation exam which was outstanding result those time. In 1952, it was named to Cox’sBazar Model High School. It became government institution in 1970 and named as Cox’sBazar Govt. High School.

CGHS has a glorious history. It has notable contribution in all freedom movements including anti-British movement, language movement & liberation war. Martyr Nirmal Lala & Shoileshwar Chakraborty died in anti-British government movement while they were student of this school. In 1952, student of class X Khaled Musharraf leaded a protest including students at Cox’sBazar in favor of Bangla as a national language who became sector commander in 1971. Two teachers (Shah Alam, Bashir) and students (Shamsul Alam, Shoshi) died during liberation war. Students of this school also participated in education movement in 1962.

 

Hundreds of notable alumni including scientist, players, cultural activists, engineers, doctors, educationalists, politicians, businessmen have been contributed home and abroad successfully.

On 25th December 2016, ex-students of this school celebrated their first ever Reunion in 142 years history. Prominent educationalist Dr. Abdullah Abu Sayeed, chairman of Biswa Sahitya Kendra was chief speaker in the event. Cabinet Secretary Mr. Shafiul Alam was chief guest. Two thousands alumni enjoyed day long program and they re-invented their school days with joys and remembrance.

Alumni’s re explored their old school days with same manners including school assembly, reciting national anthem, playing sports, history class, tiffin break etc. Reunion committee honored freedom fighters who were student of this schools and ex-teachers remembering their dedication and contribution.

 

 

Late Sector Commander Khaled Musharraf was given posthumous reception as he was student of this school, her daughter Mahjabeen Khaled MP received the reception.

 

 

 

 

The slogan of the reunion was “Shotoborsher kolahole, ek sathe shokole”. At the end of the day, a 30 minute documentary named “Priyotomeshu Ishkulbela” was displayed which included memory recall of school days of alumni’s. The theme of the documentary was, school life is best period of human life & CGHS has given chance to its students enjoying the period. Truly, 25 December 2016 was a red letter day of CGHS Alumni’s.

 

 

Muhibbul Muktadir Tanim was Chief Coordinator of CGHS Reunion team and he passed SSC from this school in 1998. He is an IT Professional.

Read Full Post »

পঁচিশে ডিসেম্বর কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের এক মিলনমেলা। প্রৌঢ়, যুবক, তরুণ, বাবা-পুত্র কারা ছিলনা এতে? সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে নীড়ের টানে অনেকেই মিলিত হয়েছেন কয়েক যুগ পর, ছুটে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পুনর্মিলনীতে যোগ দিতে ছুটে এসেছেন অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আমেরিকা থেকে। ১৯৫০ সালের মেট্রিকুলেশন পাশ করা প্রৌঢ় যেমন রোমঞ্ছন করেছেন ফেলে আসা স্কুলজীবন, একইভাবে গতবছর পাশ করা তরুণ ও অশ্রুকাতর হয়েছেন প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে এসে।

সফল এ আয়োজনের নেপথ্যে আয়োজকদের দিতে হয়েছে অনেক শ্রম, অর্জন করতে হয়েছে আস্থা।

গেল বছরের ডিসেম্বরের এগার কি বার তারিখ রাতে অজানা নম্বর (আমেরিকা)  থেকে একটি ফোন আসল। পরিচয় দিল ব্যারিস্টার জি আর মাহমুদ, কসউবি ৭০ ব্যাচের। উনি বাংলাদেশ আসবেন এবং আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নিবেন। বললাম- আমাদের তো নিবন্ধন সময় শেষ। (৫ ডিসেম্বর ছিল নিবন্ধনের শেষ দিন) মনে হল – শুনে একটু কষ্ট পেয়েছেন। পরক্ষণে বললাম – দেখি চেষ্টা করে। পরের দিন অনেকটা জোর খাটিয়ে উনার নিবন্ধন করিয়ে নিলাম।  ভদ্রলোক আটত্রিশ বছর ধরে প্রবাসী এবং আমেরিকাতে এর্টনি এট ল। অনুষ্টানের টানে আসতে চাইছেন।

এরকম অনেক জি আর মাহমুদের অভুতপূর্ব সাড়া  আমাদের কে স্পন্দিত করেছে, উৎসাহ যুগিয়েছে।  সত্যিকারের একটি পুনর্মিলনী উদযাপনে আমাদেরকে আলোড়িত করেছে।

অথচ অনুষ্টানের কয়েক সপ্তাহ আগেও আমাদের পথচলা মসৃণ ছিলনা। পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ।

সাইদ বিন জেবরের কথাই বলি। আয়োজক পরিষদের সদস্য সচিব। দুহাজার দশ সাল থেকে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবছরের গৌরবুজ্জল ইতিহাসকে সামনে রেখে একটি গেট টুগেদার করার। মনে পড়ে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক দিন আমরা আলাপ করছিলাম। বলল- চলেন ৯০ পরবর্তী ব্যাচ নিয়ে বসি, কিছু একটা করি। হতে পারে এল্যুম্নাই এসোসিয়েশন টাইপ কিছু একটা । বসলাম, চা খেলাম, আড্ডা দিলাম। সিদ্দ্বান্ত হল ৭১ পরবর্তী ব্যাচ নিয়ে বসি। ২০১১ তেই ৭১ থেকে ২০১০ এস এস সি ব্যাচ পর্যন্ত প্রতি ব্যাচের দু/তিনজন প্রতিনিধি নিয়ে সভা করলাম। সিদ্ধান্ত হল একটি প্লাটফর্ম করার। ২০১২ র একুশে ফেব্রুয়ারি স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিল প্রাক্তন ছাত্ররা। এরপর বিভিন্ন কারণে আর এগুলনা। ২০১৬ র জানুয়ারীর শেষদিকে সাইদ আবার ফোন দিল। তন্মোধ্যে প্রিপারটারি স্কুল আর রামুর খিজারি স্কুল পঞ্জাশ বছর উদযাপন করে ফেলেছে। আমাদের স্কুলের ১৪২ বছর হয়ে গেল , আমরা এখনো একত্রিত হতে পারলাম না। ফেব্রুয়ারী তেই মিটিং ডাকা হল। এগিয়ে আসলেন তারেক ভাই (৯১), জিয়া(৯৮), রিয়াজ ভাই(৯৫), আশিক(০১) সহ অনেকেই।

 

ভাবা শুরু হল। বারোয়ারী কোন প্রোগ্রাম করবোনা। এমন কিছু করতে হবে – যাতে স্কুল উপকৃত হয় আর মানের দিক থেকে যাতে  সর্বোচ্চতা থাকে। মিটিং ডাকা হল। নব্বই, দুহাজার দশকের অনেকেই স্কুলে আসল। মতৈক্য হল- ঈদের পর পুনর্মিলনী হবে। যেনতেন ভাবে প্রচার করলে হবেনা। নক করলাম ০৯ ব্যাচের জাহিন কে। গতবছর সে ক্রিয়েটিভ ফিল্মে আন্তর্জাতিক এওয়ার্ড পেয়েছে। বললাম- পুনর্মিলনী ২০১৬ এর নব্বই সেকেন্ডের প্রমো ভিডিও বানাতে হবে। সাইদ, জাহিন মিলে ওদের প্রোডাকশন টিম সহ শ্যুটিং করল স্কুলে। ততোধিনে হেডস্যার রাম মোহন স্যার কেও রাজি করানো হল। কিন্তু মনে হচ্ছিল- ভদ্রলোক ভিতরে ভিতরে আস্থা পাচ্ছেন না। আমরা আরো কিছু যুবক মস্তিস্কের শ্রম দেওয়া শুরু করলাম- এনাম, সাফায়েত, আবির, রিয়াজ ভাই, জিয়া, তারেক ভাই প্রমুখ। সাইদ শ্রম, মেধা দিয়ে সমন্বয় করেই যাচ্ছে।

 

ইতিমধ্যে গুগল ফর্মের মাধ্যমে ইনপুট নিয়ে প্রাক্তন ছাত্রদের একটি  ডাটাবেইজ তৈরী করে ফেলি। আমাদের ফেসবুক গ্রুপের এল্যুম্নাই সংখ্যা দেড়হাজার স্পর্শ করে। হাজার খানেক প্রাক্তন ছাত্র অনলাইনে তথ্য প্রদান করে ইতিমধ্যে।   মাঝেমধ্যে ফোন কনফারেন্স, নেটওয়ার্কে শেয়ারড ফাইলের মাধ্যমে প্ল্যানিং রিভিও – এভাবেই চলল মে, জুন পর্যন্ত। বুঝে গেছি- ঈদে প্রোগ্রাম নামানো সম্ভব না, কারণ- বর্ষা এবং খুব অল্প সময় হাতে। ঈদের পর রিভিও মিটিং ডাকা হল। আশির দশকের অনেকেই আসল। শতাধিক প্রাক্তন ছাত্রের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হল পুনর্মিলনী হবে ২৫ডিসেম্বর স্কুল প্রাঙ্গণে।

 

কোরবানির ঈদের পর সেপ্টেম্বরের আট তারিখ আবার বসলাম। বাজেট রিভিও হল- রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হল ১০০০ টাকা জনপ্রতি। অঘোষিত কাজ শুরু হয়ে গেল। নেটওয়ার্কিং করা শুরু করলাম। সাইদ, আশিক, সৌরভ, আদিব মিলে দেখা করল প্রাক্তন, প্রবীন ছাত্রদের সঙ্গে। এর মধ্যে ৫২ ব্যাচের ডাক্তার কবির, ৫৭ ব্যাচের আবুল কালাম আজাদ, ৬২ ব্যাচের সোমেস্বর চক্রবর্তী, ৬৬ ব্যাচের সিরাজ স্যার, ছৈয়দ স্যার, ৬৯ ব্যাচের অধ্যক্ষ উমর ফারুক প্রমুখ। সত্তর দশকের মধ্যে প্রোগ্রাম আপডেট দিই ৭৫ ব্যাচের মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান , ৮২ ব্যাচের লুতফুর রহমান কাজল ও ৮৭ ব্যাচের আশেক রফিকুল্লাহ এম পি কে। আশেক ভাই সব শুনে উচ্ছসিত হল ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিল।

অক্টোবরের ত্রিশ তারিখ সমন্বয় সভা ডাকা হল। বিরাশি ব্যাচের রাশেদ মোঃ আলি, ডাঃ নুরুল আলম, বাহাদুর শাহ তিরাশি ব্যাচের রফিকুল ইসলাম সহ নব্বইর দশকের প্রায় আশি জন উপস্থিত ছিলেন। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া ও অনুষ্টানের ধরণ নিয়ে বিস্তর প্রতিবেদন তুলে ধরলাম। সিদ্ধান্ত হল আবার বসতে হবে সব ব্যাচের প্রতিনিধি নিয়ে। সাইদের নেতৃত্বে সবাই কাজ করে যাচ্ছে। সিনিয়রদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন তারেক ভাই। নভেম্বরের এগার তারিখ চুড়ান্ত সমন্বয় সভা ডাকা হল । সত্তর,আশি,নব্বইর দশকের প্রতি ব্যাচের কোর্ডিনেটর রা উপস্থিত ছিলেন ঐ সমন্বয় সভায়। সিদ্ধান্ত হল নভেম্বরের পনের থেকে নিবন্ধন শুরু হবে, চলবে ত্রিশ তারিখ পর্যন্ত। আমরা আমাদের প্রত্যেকটি সমন্বয় সভায় চেষ্টা করেছি সঠিক তথ্য ও উপাত্ত ডিজিটালি তুলে ধরার।

ব্যাংকিং পার্টনারের হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের ম্যানেজার ৯৫ ব্যাচের  আহসান ভাই। রেজিস্ট্রেশন সমন্বয়ে লিড নিলেন ০১ ব্যাচের আশিক। হোসেন ব্রাদার্স ও জেলা প্রশাসক ভবনে শুরু হল নিবন্ধন কার্যক্রম। অনলাইনে ও চলতে থাকল রেজিস্ট্রেশন। এক ঝাক তরুণ (নাজমুল, তকি, ইয়ামিন, ) শ্রম দিয়েই যাচ্ছে। স্পন্সর পলিসি রেডি করা হল। জিয়া, আহসান ভাই স্পন্সর সমন্বয় করা শুরু করল। প্রথম থেকেই অংগীকার ছিল অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাতে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা থাকে। এ দিকে আশিক ভাইয়ের নেতৃত্বে সংসদ ও সচিবালয়ে আমন্ত্রণ ও প্রকাশনার জন্য বাণী সংগ্রহ করা শুরু হল। বাংলাদেশে খুব কম স্কুলের পুনর্মিলনীতে প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কসউবি ২০১৬ তে বাণী দিয়েছেন যেখানে কসউবি র গৌরবুজ্জল ইতিহাসকে স্নরণ করেছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী শেষমুহুর্তে এসে পৌছায় প্রকাশনায় সংযুক্ত করা যায়নি।

 

এতবড় আয়োজন, তারউপর প্রথম বার। ডিসেম্বরের পনের তারিখের মধ্যে নিবন্ধন করল ১৮১৯ জন। শতাংশ হিসেবে পঞ্জাশ/ষাটের দশক থেকে দশ শতাংশ, সত্তর দশক থেকে দশ শতাংশ,  আশি/নব্বই দশক থেকে পঞ্জাশ শতাংশ ও দুহাজার পরবর্তী  ত্রিশ শতাংশ নিবন্ধন করল। এত ব্যাপক সাড়া কিছুটা অপ্রত্যাশিত হলে ও আমরা আত্নবিশ্বাসী ছিলাম আয়োজন সফলের ব্যপারে। আমাদের আন্তরিক ও হৃদয়াপ্পুত কৃতজ্ঞতা নিবন্ধিত প্রাক্তন ছাত্রদের প্রতি।

 

প্রায় দেড়শত বছরের প্রতিষ্টানের প্রথম পুনর্মিলনীর অভিভাবকের দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্টার সঙ্গে পালন করেছেন ৬২ ব্যাচের অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী স্যার। সাথে সিরাজ স্যার (৬৬) দিয়েছেন হৃদয়স্পর্শী পরামর্শ ও নির্দেশনা। সোমেশ্বর স্যার – সিরাজ স্যার এর আন্তরিক দিক নির্দেশনা সফল আয়োজনের অন্যতম হাতিয়ার। রাজনীতিবিদ তকমা ছাপিয়ে প্রাক্তন ছাত্র ও বড় ভাই হিসেবে আশেকুল্লাহ রফিক (এম পি) [৮৭ ব্যাচ] ভাই আমাদের প্রতি মুহুর্তে পরামর্শ দিয়েছেন। ৭৪ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র লেঃ কর্ণেল ফোরকান, মুজিব চেয়ারম্যান (৭৫ ব্যাচ) প্রস্তুতি সভাতে উপস্থিত থেকে আমাদের উৎসাহিত করেছেন। সিনিয়র দের মধ্যে সেতুবন্ধনে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন ৬৯ ব্যাচের মোহাম্মদ উমর ফারুক । ৮২ ব্যাচের লুতফুর রহমান কাজল দেশের বাইরে থাকায় অনুষ্টানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও উৎসাহ যুগিয়েছেন আমাদের। উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে সোমেশ্বর স্যার আহবায়ক ও বাকিরা যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে প্রকাশনা “হাইস্কুল” সম্পাদনা করেছেন ০০ ব্যাচের ইয়াসির ও সহ সম্পাদনা করেছেন ১০ ব্যাচের সৌরভ দেব। এক ঝাক তরুণ এই প্রকাশনার জন্য এক মাস ধরে শ্রম দিয়েছে। হাইস্কুলের ১৪২ ব্যাচের ইতিহাস কে সমন্বিত করতে পড়েছেন অজস্র রেফারেন্স বই, সাক্ষাৎ নিয়েছেন প্রথিতযশা সিনিয়র প্রাক্তন ছাত্রদের। অনেক ভাল লিখা প্রকাশনাতে ছাপানো সম্ভব হয়নি জায়গা স্বল্পতার কারণে। প্রকাশনার প্রস্তুত কপি তে শেষ মুহুর্তে চোখ বুলিয়েছেন শ্রদ্ধেয় সোমেশ্বর স্যার। প্রকাশনার ভুলগুলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ থাকবে সবার প্রতি।

 

প্রথম থেকেই আমাদের ইচ্ছা ছিল একটি মান সম্মত ও মনে রাখার মত অনুষ্টান আয়োজনের। এরই অংশ হিসেবে প্রামাণ্য চিত্রের আইডিয়া ছিল। “একজন মানুষের জীবনের অন্যতম সময় হচ্ছে তার স্কুলজীবন আর আমাদের এই সময়কে উপভোগ্য করিয়েছে কসউবি” এই থিমের উপর প্রামাণ্য চিত্র “প্রিয়তমেষু ইশকুলবেলা”। এতে নিজেদের শৈল্পিকতা ও সৃষ্টিকর্মকে তুলে ধরেছে জাহিন ও নাসিফ। সময় স্বল্পতার কারণে আমরা অনেক প্রবীণ ছাত্রদের প্রামণ্য চিত্রের অংশ করতে পারিনি। এসব অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা অনুতপ্ত। প্রাইভেসির কথা চিন্তা করে প্রকাশনার ডিরেক্টরি তে আমরা সবার ফোন নম্বর না দিলেও আলাদা ফোন ডিরেক্টরি প্রকাশ করেছি। ৯৮ ব্যাচের সিফাত একাই এই ডিরেক্টরি সম্পাদনায় কাজ করেছেন।

 

এতবড় আয়োজনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল নিরাপত্তা ও খাবার পর্ব। সার্বজনীন খাবার পরিবশনা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে ইয়ামিন শিবলি, জিয়া, আহছান ভাই, শোয়েব ভাই রা। গণমাধ্যম সমন্বয়ে সৌরভ দেবকে সবসময় গাইড করেছেন ৮৮ ব্যাচের সোহেল ভাই (বিটিভি)। নিরাপত্তার সংশ্লিষ্টতায় প্রশাসন আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন সবসময়।

 

অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি- সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে আমরা সবার মনজয় করতে পারিনি। খোকন ভাই (৯৫ ব্যাচ)  নিজেকে শপে দিয়েছেন শেষ মুহুর্তে। তথাপি, একটি সুশৃংখল ও আধুনিক অনুষ্টান আয়োজনে আমাদের আন্তরিকতা ছিল। ছিল প্রানান্ত চেষ্টা। পঁচিশে ডিসেম্বর ক্ষণে ক্ষণে যখন বন্ধুরা পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে স্নৃতিকাতর হচ্ছিল- সেই কাতরতা আমাদের ও কিঞ্ছিত অশ্রু সজল করেছে আনন্দের বার্তা নিয়ে।

আমাদের মনে ধারণা জন্মেছে “শতবর্ষের কোলাহলে – এক সাথে সকলে” স্লোগান কে আমরা বুপিত করতে পেরেছি ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ দিনজুড়ে।

অনুষ্টান সংস্লিষ্ট সবাইকে আমাদের হৃদয় নিঙড়ানো কৃতজ্ঞতা।

 

 

 

 

 

মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম  কসউবি পুনর্মিলনী ২০১৬ উদযাপন পরিষদ  এর প্রধান সমন্বয়কারী।

Read Full Post »

দশ প্রশ্নে পাঁচ প্রার্থী’র জবানবন্দিঃ  জোয়ারিয়ানালা ইউপি নির্বাচন

 

 

ধাপে ধাপে শেষ হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে এবারের স্থানীয় সরকার  নির্বাচন নানাভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ। মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা, প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা, মনোনয়ন বানিজ্য সহ নানাবিধ কারণেই এবারের চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলি জনগণের কাছে  অনাস্থার জন্ম দিচ্ছে। এতদ সত্তেও, আবহমান গ্রাম সমাজে স্থানীয় সরকারই প্রথম ও বিশ্বস্থ আশ্রয়স্থল। গ্রাম্য বিচার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যক্তিগত সমস্যা – সবকিছুতেই গ্রামের লোকেরা প্রথমেই ধরনা দেয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে। একজন মনমত চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচনে গ্রামবাসীরা  মুখিয়ে থাকেন। সময়মত ব্যালটের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত করেন জনপ্রতিনিধি।

 

প্রার্থীরা রীতিগত ভাবে ভোটের আগে অনেক আশ্বাস দেন, স্বপ্ন দেখান। ফেসবুক ভিক্তিক সোশাল গ্রুপ “আলোকিত জোয়ারিয়ানালা’র উদ্যোগে অত্র ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের কাছ থেকে দশটি প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয় তাদের পরিকল্পনা সম্বন্ধে। স্থানীয় যুবক রাশেদুল ইসলাম প্রার্থীদের জবাবদিহিতা সমন্বয় করেন।  উল্লেখ্য, আগামি চার জুন রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত  হবে।

 

প্রতিদ্বন্ধী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দশটি প্রশ্ন করে জবাব চাওয়া হয়।

 

প্রথম প্রশ্ন ছিল – আপনার মতে জোয়ারিয়ানালার প্রধান তিনটি সমস্যা কি কি? প্রায় প্রত্যেকেই স্বীকার করেন অনুন্নত যোগাযোগ  ও  বিচার ব্যবস্থা অন্যতম  সমস্যা। আওয়ামিলীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত কামাল সামসুদ্দিন প্রিন্স  বিদ্যুৎ সমস্যা ও অবহেলিত ইউপি ভবন কে ও অন্যতম সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।  বিএনপি মনোনিত প্রার্থী গোলাম কবির অবশ্য অসম বিচার ব্যবস্থাকে অভিহিত করেন সুশাসনের অভাব হিসেবে। স্বতন্ত্র ও আওয়ামিলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান জোয়ারিয়ানালা ইউপি প্রশাসনের চলমান বিচার ব্যবস্থাকে দূর্নীতিযুক্ত হিসেবে অভিহিত করেন ও এটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফূল আলম অনুন্নত জীবন ও অনগ্রসর শিক্ষা ব্যবস্থাকে অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।

 

দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল – আপনি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিক্তিতে কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন? প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনার কথা জানান। তন্মোধ্যে বন্যা প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ, গ্রাম্য আদালতকে গঠনমূলক করা, বয়স্কভাতা নিশ্চিতকরণ, সুশিক্ষা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ সহ নানাবিধ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। আওয়ামি বিদ্রোহী প্রার্থী আবছার কামাল সিকদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জোরদার করার উদ্যোগ বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন।

 

তৃতীয় প্রশ্ন ছিল – আপনার কোন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে জনগণ আপনাকে ভোট দিবেন? – সবাই উল্লেখ করেন বিগত দিনগুলিতে সুখে-দুখে তারা এলাকাবাসির পাশে ছিলেন। তন্মোধ্যে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী গোলাম কবির গত দু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে সব সময় এলাকায় থেকে জনগণের পাশে থাকাকে নিজের স্বকীয়তা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

 

চতুর্থ প্রশ্ন ছিল – নির্বাচনোত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কে দলীয় গন্ডির বাইরে রাখা কি সম্ভব হবে?  সবাই মত দিয়েছেন ইউনিয়ন প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার। আওয়ামিলীগ মনোনিত কামাল সামসুদ্দিনের উত্তর ছিল – “যেহেতু নির্বাচিত হওয়ার পর পদটি আর দলীয় থাকেনা।  তাই নির্দলীয় থেকে কাজ করা সম্ভব।“

 

পঞ্চম প্রশ্ন ছিল – শিক্ষা ও যাতায়াত অবকাঠামোগত উন্নয়নে আপনার বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কিনা? সব প্রার্থীই পরিকল্পনা আছে বললে ও কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা বলেন নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান অত্র ইউনিয়নের শিক্ষা খাতকে কক্সবাজার জেলার জন্য অনুকরণীয় স্বপ্ন দেখান।

 

ষষ্ঠ প্রশ্ন ছিল – তরুণ ও বয়স্ক লোকদের জন্য কোন পরিকল্পনা কিংবা উদ্যোগ আছে কিনা? প্রায় সব প্রার্থীই তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফুল আলম তরুণদের উৎসাহিত করে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। আবছার কামাল মাদকমুক্ত সমাজ নিশ্চিত করার উপর জোরদার দেন।

 

সপ্তম প্রশ্ন ছিল – জয়ী হলে, বিজিত প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক কিনা? সকলেই পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ও আগ্রহ প্রকাশ করেন।

 

অষ্টম প্রশ্ন ছিল পরাজিত হলে মেনে নিবেন কিনা? বিএনপি মনোনিত প্রার্থী গোলাম কবির সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য, গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন হলে মেনে নিবেন বলে অঙ্গীকার করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মেনে নিবেন বলে জানান। অন্যান্য প্রার্থীরা এক বাক্যে পরাজয় মেনে নিবেন বলে জানান।

 

নবম প্রশ্ন ছিল – ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম কে প্রযুক্তি বান্ধব করা যাবে কিনা? সব প্রার্থীই ইউনিয়ন কে প্রযুক্তি বান্ধব করা যাবে বললে ও কেউ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বিষয় ভিক্তিক তথ্য দেন নি।

 

দশম ও সর্বোশেষ প্রশ্ন ছিল –  নির্বাচিত হলে প্রথম যে কাজটি করার সর্বাত্নক চেষ্টা করবেন? উত্তরে গোলাম কবির সুশাসন নিশ্চিত করা, কামাল সামসুদ্দিন মডেল ইউনিয়ন প্রতিষ্টা করা, হাবিবুর রহমান ঘুষ, দূর্নীতি ও ইভটিজিং মুক্ত ইউনিয়ন উপহার দেওয়া, আবছার কামাল সরকারি প্রোগ্রাম জনগণের কাছে সময়মত পৌছে দেওয়া ও শরীফুল আলম ইউনিয়নের আধুনিকায়নের উপর প্রাধান্য ও প্রথম অগ্রাধিকার মূলক কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।।

 

এসব প্রশ্নের মাধ্যমে ‘আলোকিত জোয়ারিয়ানালা’ সোশাল গ্রুপ নিশ্চিত করতে চেয়েছে প্রার্থীদের দায়বদ্ধতা ও কাজ করার স্পৃহা। তারুণ্যনির্ভর এসব সামাজিক কমিউনিটি গুলো ভবিষ্যতে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠনে অবদান রাখবে – বৈকি ।

 

ঐতিহ্যগত ভাবে শান্তিপ্রিয় এ ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘাত হয়নি বললেই চলে। প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীরা  পারস্পরিক আন্তরিকতায় আবদ্ধ। বিগত দিনের চেয়ারম্যান রা জেলা-উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সচেতন নাগরিক রা আশা করছেন, নির্বাচিত চেয়ারম্যান সত্যিকারের নেতা হয়ে উঠবেন ।

 

Read Full Post »

গেল সপ্তাহে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ  নির্বাচনের প্রথম কয়েকটি  ধাপ সম্পন্ন হল। নানা দিক দিয়ে এবারের ইউপি নির্বাচন ব্যতিক্রমী, আলোচিত ও সমালোচিত। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে বাংলাদেশে এবারই প্রথম ইউ পি নির্বাচন  হচ্ছে।

 

গত ১৯ মার্চ, বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় না দেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন। নিজ উঠানে কবর খুঁড়ে কাফনের কাপড় পড়ে তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন  ওই বিদ্রোহী প্রার্থী।  পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে উঠিয়ে সোজা কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। কবরবাসের চেয়ে কারাবাস উত্তম। এই ঘটনাটি হাস্যরস -বেদনাত্নক হলেও সমগ্র দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতন্ত্রের সমন্বয়য়ের যেন রুপক শিল্পায়ন এটি।

 

নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রথম দুদিনেই নির্বাচনী ঝড়ে (সহিংসতায়) প্রাণ হারিয়েছে বাইশ জন। বরিশালের মুলাদী উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে কেবল নিজের কবর নিজেই খুঁড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কবর খুঁড়তে হয়েছে বাইশটি। ভোট চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হাজারের উপর। তাদের অনেকেই হাঁসপাতালে হাঁসফাঁস করছেন, কাতরাচ্ছেন। নার্স, ডাক্তার তাদের শুশ্রূষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের চলমান নির্বাচন প্রক্রিয়াটি  যে রুগ্ন, অসুস্থ তাতে কোন সন্দেহ নেয়। কিন্তু কার বা কাদের সেবায় সুস্থ হবে এটি? কি বিজিবি মহাপরিচালক নতুবা নির্বাচন কমিশন কেউই এই অসুস্থতার দায় নিতে নারাজ। নির্বাচনী কমিশনার নিশ্চিন্তে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুস্থ হচ্ছে। সহিংসতায় তাদের কোন দায় নেয়।

 

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি  র তেমন মনঃসংযোগ নেয় বললেই চলে। “অংশগ্রহণই মূল কথা “ এই ধারণার উপর অনেকেই লড়ছেন। তাদের ভিতর অভ্যন্তরীণ গনতন্ত্র কতটা আছে তাও প্রশ্নের উদ্রেগ করে। আওয়ামীলীগের বেলায় এ উপমা প্রযোজ্য নয়। এবারের নির্বাচনের দুপ্রান্তেই তাদের অফিসিয়াল আওয়ামিলীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ। এ,বি টিমের এই দ্বন্ধ কখনো মনস্তাত্বিক, কখনো সাংঘর্ষিক। মাঝে মধ্যে এটি সংঘাতে রুপ নিচ্ছে। টাকার অবাধ ব্যবহার নেতাদের পেছন পেছন ঘুরছে, পাছে ‘এ’  টিমের মনোনয়ন পাওয়ার আশায়। পুলিশ আগে থেকেই সরকারি দল হিসেবে কাজ করে। এ নির্বাচনে তারা কখনো এ টিম কখনো বি টিম।

 

এই ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বনাম বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন করে মাথাচারা দিচ্ছে। সম্প্রতি, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নির্বাচন কে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের বিবৃতি, অভিযোগ তাই প্রমাণ দিচ্ছে। রামু উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে মনোনয়ন বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এবারের ইউপি নির্বাচন দশ থেকে বারটি ধাপে সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে দুটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। জয়ী প্রার্থীদের ৮০ শতাংশই আওয়ামিলীগ কিংবা বিদ্রোহী আওয়ামিলীগ। সরকারি দল এতে হয়ত খুশি, তাদের আত্নতৃপ্ত জনপ্রিয়তা দেখে। কিন্তু এ জনপ্রিয়তা কতটা আসল এবং নির্ভেজাল তা ভাবনার বিষয়।

 

অনেক দিক দিয়েই ব্যতিক্রম এবারের নির্বাচন। প্রথমত, ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর একটি প্রশ্নবিদ্ধ্ব (!) নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছে। যে নির্বাচনে অর্ধেকের ও বেশি সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত। এই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত সাংসদরা যখন স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় প্রার্থী মনোনিত  করবেন, তারা তখন কতটা ডেমোক্র্যাটিক থাকবেন, কতটা প্রকৃত নির্বাচনের পথে হাঁটবেন। স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের নিবিড়তাই বা কতটুকু।

 

দ্বিতীয়ত- এবারই প্রথম, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে  বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আগেই অনুমেয় ছিল। আমাদের দেশে  নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক দলীয়করণ। দুর্ভাগ্যবশত, পক্ষপাতদুষ্টতার গুরুতর অভিযোগ আমাদের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও রয়েছে। দলীয় প্রতীকে একটি  অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যে ধরণের শক্ত কমিশন দরকার, তা চলমান নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুপস্থিত।   অতীতে অধিকাংশ প্রার্থীর দলীয় পরিচিতি থাকলেও ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ব্যবহৃত হতো না। তাই নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত দলবাজ কর্মকর্তারাও তাঁদের দলীয় প্রার্থীদের প্রতি একধরনের নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতেন। ফলে  নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হতো। কিন্তু দলভিত্তিক নির্বাচনে দলান্ধ কর্মকর্তারা তাঁদের দল মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গত কয়েক মাস ধরে চলা পৌরসভা, ইউনিয়ন নির্বাচনে এসব অসামঞ্জস্যতা প্রতিফলিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগের সেই উৎসব, কোলাহল, প্রাণচাঞ্চল্য অনেকাংশেই অনুপস্থিত।  দলীয় নির্বাচনের ফলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ক গুলি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে বৈকি!

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনকে একটি বিকৃত ও আস্থাহীন নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি মনোনয়ন বানিজ্যের প্রভাব ও বিস্তৃতি এখন তৃনমূল পর্যায়ে পৌছে গেছে বলে আখ্যা দেন। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্রের কার্যকরিতা কতটুকু থাকে তা নিয়ে ও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

 

পিরোজপুরের কোন এক ইউনিয়নে পছন্দের প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হলে উল্লাস করবেন বলে রং কিনে পকেটে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক মোহাম্মদ কামাল। কিন্তু সেই রঙের বদলে তাঁর হাতে লেগেছে নিজের ভাই বেলালের রক্ত। নির্বাচনে গোলমাল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন তার ভাই। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, ফলাফল ঘোষণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ আছে হাজারো। প্রিজাইডিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রাট রা ও অনেক সময় কিংকর্তব্যবিমূড়, অসহায় হয়ে পড়ছেন।

 

কোন সন্দেহ নেয়, আমাদের গণতন্ত্র এ সময় একটি কঠিন সময় পার করছে।   এই কাঠিন্য থেকে উত্তরিত হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন নির্বাচন নামের খোলসের মধ্যে আটকে গেছে প্রহসন আর বল্প্রয়োগ। যতদিন রাজনীতি থেকে বলপ্রয়োগ ও প্রহসনের বাড়াবাড়ি বিদায় না হবে, তত দিন নির্বাচন কমিশন কে “নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে” এ ধরণের বুলি আওড়াতেই থাকতে হবে। অথচ বাংলার ইতিহাসে বারবার নির্বাচন ও শান্তি সমার্থক  ছিল। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে শেরেবাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি জমিদারদের কংগ্রেস ও অভিজাত্দের মুসলিম লীগকে পরাজিত করে।  বাঙালি মুসলমানের রাজনীতির এই ধারাই ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নামে ভোটবিপ্লব ঘটিয়ে স্বাধীনতার দাবিকে আরো প্রচণ্ড ও অবধারিত করে তোলে।  বৃটিশ ও পাকিস্তানিরা সুষ্ঠু নির্বাচনে ত্রাস হতে পারেনি। শান্তিপুর্ণ নির্বাচন সুস্থ গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত।

 

এখন গণতন্ত্র আছে লিখিত রুপে আর বাগ্নীতায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র নিখোঁজ। নিখোঁজ গণতন্ত্রে নির্বাচন তো নির্বাসিত হবেই।।

Read Full Post »

পুরো দেশ এখন উৎসবের আনন্দে ভাসছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় পূজা আর পবিত্র ঈদুল আযহার নির্মলতার মাঝে এক ধরনের চাপা গুমোট আর অনিশ্চিয়তার নিমিত্তে বিষণ্ণতা কাজ করছে সবার মাঝে। ২৪ অক্টোবরের পর দেশের পরিস্থিতি কি হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে সরকার, বিরোধী দল কেউই নিশ্চিত না তাদের কর্মোপন্থা কি হবে দেশের বিপজ্জনক এই সময়ে। কূটনীতিক পাড়ায় ও থমথমে অবস্থা বিরাজমান।

 

বায়োস্কোপের জানালায় তাকিয়ে দেখি সাম্প্রতিক সময়ে সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন, সুশীল সমাজ কিভাবে সময় পার করছে আর জনগণের প্রত্যাশার আহবান ই বা কতটুকু।

 

গেল মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের ৬৮তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য রেকর্ড সংখ্যক ১৪০ জনের বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বহর যখন নিউইয়র্ক জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ম্যানহাটন গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল পর্যন্ত পৌছুতে চল্লিশ মিনিটের রাস্তা ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে আড়াই ঘন্টা সময় নেয়, তখন যাত্রালগ্নে  চিরাচরিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠে। পুরো সফরকালীন সময়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সফরকারীদের শপিং-ঘুরাফেরা, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্বলিত পুস্তিকার  প্যাকেটকে নিরাপত্তা রক্ষীরা বোমা সন্দেহ করলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের সামনে আতংক ছড়িয়ে পড়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অফ দ্যা রেকর্ড মুন্নি সাহার কথোপকথনের রেকর্ডকৃত ট্যাব জব্দ  করা সহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান কেন্দ্রিক মিশনে নিউইয়র্ক যেন মুহুর্তের বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। এতকিছুর পর ও পুরো দেশ তাকিয়ে ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিকে। দেশের জন্য নতুন কোন নির্দেশনা কিংবা গাইডলাইন না থাকলেও বিরোধী দলের প্রতি বিষোদ্গার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহবান ঠিকই ছিল। এরপর দেশে ফিরে ঢাকা, চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার উদ্ভোবন সহ বিভিন্ন প্রকল্প চালু করে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছেন আর সংসদ বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে সংসদে বলেছিলেন, চলমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবেনা। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার কি হবে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি যেভাবে নির্দেশনা দিবেন, সেভাবেই সরকার বহাল থাকবে। আর এখন সরকার দলীয় সিনিয়র নেতারা পাল্লা করে বলছেন নির্বাচন পর্যন্ত অধিবেশন চলবে।

বিএনএফ নামের নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিই দেয় এবং তাও যদি গমের শীষ কিংবা ধান গাছ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে , তা হবে বর্তমান কমিশনের আস্থা হারানোর চূড়ান্ত ধাপ। একইভাবে বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেংকারিতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলেও তাতে নাম নেয় তখনকার পরিচালনা পরিষদের কারো, যাতে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বয়ং প্রশ্নবিদ্ধ।

 

প্রথম আলোর জরিপে সম্প্রতি ফুটে উঠেছে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের প্রতি জনগণের আকাংখা।  এক ই জরিপে বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও চিহ্নিত হয়েছে। সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাসের এ সুযোগকে বিরোধী দল এখনো সীমাবদ্ধ রেখেছে সেমিনার ও কর্মী সমাবেশে। কিছু দিন পর পর বিভাগীয় শহরগুলিতে বিরোধীদলীয় নেতা বিশাল বিশাল সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক দিলেও কর্মীদের চাঙ্গাভাব এখনো রাজপথে প্রসারিত হয়নি। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বেগম জিয়া কি বার্তা পৌছান , তাই দেখার পালা এখন।  পঁচিশে অক্টোবর সরকারী দল ও বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছেন রাজধানীতে। এর পরের দিনগুলি যে সংঘাতময় তা বুঝার জন্য মনে হয় ম্যাগ্নিফাইয়িং গ্লাসের প্রয়োজন নেয়। কিন্তু এরপর ও দু দলের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যদি নির্বাচন কেন্দ্রিক দুটানার অবসান হয়,  তবে তা হবে পুরো দেশবাসির জন্য প্রশান্তিময়।

 

গেল সপ্তাহ ছিল আমাদের কক্সবাজারের জন্য অর্জন ও হারানোর  আনন্দ – শোকে উদ্বেলময় সময়। জেলার কৃতী সন্তান মমিনুল হক সৌরভ বাংলাদেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ্বে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানের কাব্যিক ইনিংস খেলে তারিফ পেয়েছেন পুরো দেশের। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করে ব্যারিষ্টার হওয়ার স্বপ্নময় পথ পাড়ি দেওয়ার যাত্রায় বন্ধুদের লোলুপ ফাঁদে পড়ে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়নের রিফাত। একবিংশ শতাব্দির এ সময়ে এ দেশের তারুণ্যের একাংশ যেখানে প্রযুক্তি ও কল্যাণের প্রয়োজনে নিজেদেরকে উত্তরিত করে চলছেন বীরদর্পে, আরেকাংশ সেখানে বেকারত্ব, দারিদ্র্যের অভিশাপে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে মাদক, রাজনীতির ঢাল, সন্ত্রাসে ভর করে তারূণ্যের শক্তিকে পচন ধরাচ্ছে। এ ধরণের পচনশীল তারুণ্যের শিকার মেধাবী রিফাত। দল মতের উর্দ্ধে থেকে যদি এ দেশের রাজনীতিবিদ তথা দিক নির্দেশনাকারীরা তারুণ্যেকে গাইড করতে না পারে তাহলে এ দেশের মূলশক্তিই যে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাবে। যে দেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের ও বেশি তরুণ সে দেশের সোনালী সম্ভাবনা কে দাঁড় করাতে পারে এ দেশের রাজনীতিবিদরা।

ঈদুল আযহার ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কল্যাণে নিবেদিত হোক আমাদের পথ প্রদর্শকরা, যাতে একটি স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত হয় অন্তত।

Read Full Post »

    স্নরণঃ মরহুম এডভোকেট খালেকুজ্জামান

১৯৯৬ সালে সংসদ অধিবেশনের কোন এক কার্যদিবসে বিরোধীদলীয় একজন তরুণ সদস্য নিস্পৃহ , সাবলীল অথচ বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে চলেছেন , ” … আমরা রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলো সবাই সবার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। তাতে আমরা এক দল হেরেছি, অন্য দল জিতেছে। কিন্তু এরকম লড়াইয়ে বারবার কেবল জনগণ হেরেছে। আসুন আমরা একবার রাজনৈতিক দল গুলো হার মেনে নিয়ে জনগণকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ করে দেই। “ গতানুকতিকতার বাইরে এমন অকপটে, সাহসী, শ্রুতিমধুর তথাপি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক বক্তব্যে সাড়া পড়ল মহান সংসদে, মিডিয়ায় আশানুরুপ কভারেজ আসল আর সর্বোপরি দেশব্যপী সচেতন জনগণের মনণে আগমন বার্তা পৌছাল নব নেতৃত্বের । তরুণ সাংসদ এর মধ্যেই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। ক্ষণজন্মা মরহুম এডভোকেট খালেকুজ্জামান কক্সবাজার-রামু বাসির নেতৃত্বে থেকেই একাধারে নিজ রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারণী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেকে জড়িয়ে, পরামর্শ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন জাতিয়তাবাদী আদর্শের সৎ দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে।

৪৮ বছরের জীবন তাঁর। আইন বিষয়ে সম্মান পাশ করেছেন, আই বি এ থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে এম বি এ করেছেন আর পেশাজীবন শুরু করেছেন একজন কম্পিঊটার প্রকৌশলী হিসেবে। আইন-ব্যবসা-প্রযুক্তি এই ত্রয়ী দক্ষতার সমণ্বয় করে মরহুম খালেকুজ্জামানের জীবন যেন একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হয়ে উঠার গল্প – যে গল্পের করুণাত্নক সমাপ্তি লাখো জনতার ভালবাসার অংশগ্রহণের মাঝখানে আর এটি এমনই এক মৃত্যুঞ্জয়ী জননেতার গল্প যার সমাপ্তির মাঝেই যেন অনেকে খুঁজে পান নতুন করে শুরু করার প্রেরণা, জীবনকে সময়ের ফ্রেমে না বেঁধে তাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার সুনির্দেশনা। তৃতীয় বিশ্বের এক অনুন্নত অথচ সম্ভাবনাময়ী দেশের এক প্রান্তের এক অঞ্ছলের নেতা হয়ে ও তাঁর ক্ষণ জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় মার্টিন লুথার কিং এর বর্ণবাদ বিরোধী আদর্শিক সংগ্রামের ডাক কিংবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতিয়তাবাদী চেতনা, যারা চল্লিশের কোটায় জীবন অধ্যায় থেকে হারিয়ে গিয়েছেন কিন্তু রেখে গেছেন হাজারো বছরের নির্দেশনা, অনুপ্রেরণা। প্রত্যাশিত জীবন সময়ের চেয়ে অনেক কম সময় পেয়ে ও যারা অনেকের আলোকিত জীবনের জন্য এখনো বেঁচে আছেন নিশানা হয়ে। মরহুম খালেকুজ্জামান এখনো তাঁর লাখো সমর্থক, স্বজনদের কাছে ছায়া সঙ্গী হয়ে আছেন একজন ভাল মানুষ হিসেবে। দীপ্তিময় শিক্ষাজীবন, অনুকরণীয় পেশাজীবন, সাবলীল সাংসদ, গণমানুষের সাহচর্যময় জননেতা আর সবকিছুকে ছাপিয়ে স্বকীয় নেতৃত্বগুণ দিয়ে মানুষকে মোহিত করার আশ্চর্যময় যাদুকরী ক্ষমতার এ নেতাকে নিয়ে কিছু লিখার দায়বদ্ধতা আমার কয়েকটি কারণে। প্রথমত- মরহুম খালেকুজ্জামানের রাজনৈতিক জীবনের প্রায় পুরো সময়জুড়ে স্থানীয় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ-মিছিলে অংশগ্রহণ কিংবা সিদ্বান্ত গ্রহণের মত গুরুত্বপুর্ণ সময়ে আমার বাবা মরহুম মাহাবুবর রহমান চৌধুরী ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা, দ্বিতীয়ত- উনার বহুমাত্রিক শিক্ষা, পেশা ও রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের বৈচিত্র্যময় অথচ সফল পদার্পণ আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষিত করে।

মরহুম খালেকুজ্জামান শুধুই একজন পার্লামেণ্টেরিয়ান হিসেবে নয়, উনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন সফল রাজনৈতিক সংগঠক, জনপ্রিয় নেতা ও সর্বোপরি একজন প্রকৃত সমাজ সেবক হিসেবে। আর ঘনিষ্ঠ স্বজন-বন্ধুমহলে তো তাঁর আরো অনেক গুণাবলি আছেই।

সংসদে সমালোচনার পন্থা যে কটুক্তি কিংবা ব্যক্তি আক্রমণ করা নয়, হাস্য রসাত্নক উপমা দিয়ে ও যে অনেক কঠিন বিষয়ের সহজ বিশ্লেষণ করা যায় তা খালেকুজ্জামান প্রমাণ করেছেন অনেকবার। সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণ কে তুলনা করেছেন বিমানবালার হাসির সঙ্গে, বাজেটের উপর আলোচনা করতে গিয়ে বাজেটকে তুলনা করেছেন ছলনাময়ী সুন্দরী রমণীর সঙ্গে। “বাজেটে ভাল কথা আছে, তাই প্রথম দর্শনেই গরীব একে ভালবাসবে কিন্তু একদিন এ বাজেট ধনীর রাণী হয়ে গরীবকে ফাঁকি দিবে। “ – রসাত্নক কিন্তু চিন্তাশীল বিশ্লেষণ মরহুম খালেকুজ্জামানের। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের সঙ্গে করা ভারতের পানি চুক্তি সম্পাদনের পর প্রাপ্য পানি না পাওয়া নিয়ে অনুযোগ করে তিনি সংসদে বলেন “ চাঁদ দেখা কমিটির মত একটি জাতীয় পানি দেখা কমিটি করা হোক। অনেকে বলেন পানি দেখা যায়, অনেক বলে যায়না। যেদিন পানি দেখা যাবে সেদিন সবাই আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসব করবে“ ।

একবিংশ শতাব্দিতে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিরোধী দল যে সরকারের সঙ্গেই অভিচ্ছেদ্য অংশ এবং জনগণের সেবক, তাও স্বভাবসুলভ রসিকতায় সংসদে বলেছেন টুনা-টুনির গল্পের সঙ্গে তুলনা করে। টুনা যেমন পিঠা খেতে টুনির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে একইভাবে সরকারের ও বিরোধী দলের সাহচর্য প্রয়োজন, লক্ষ্যে পৌছানোর নিমিত্তে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকাকালীন সময়ে সুদুরপ্রসারী পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন সচেতন মহলে । ছিয়ানব্বই থেকে দুহাজার এক – পাঁচ বছরের সংসদে প্রতিনিধিত্বকালীন সময়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নিজ এলাকার দাবি তুলে ধরা, জাতিয় রাজনীতির গুরুত্বপুর্ণ ইস্যুতে নিজের মৌলিক বক্তব্য নির্দলীয় আবহে উপস্থাপন করার মত সৎ সাহস এবং সর্বোপরি দেশের সার্থ সংশ্লিষ্ট এজেণ্ডাতে নিজের মূল্যবোধকে বারবার চিনিয়েছেন। জাতিয় নেতা হিসেবে নিজেকে আবিভূত করার পর্যায়ে এলাকাবাসীকে গর্বিত করেছেন, নিজে থেকেছেন নিরহংকার ও আত্নোনিবেদিত। তাইতো নব্বই পরবর্তী সময়কার নেতৃত্ব দেওয়া জাতিয় রাজনীতিবিদরা খালেকুজ্জামানকে এখনো হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় স্নরণ করেন।

একানব্বইয়ের নির্বাচনের পর হাল ধরেছেন কক্সবাজার জেলা বি এন পি র। সাংগঠনিক দক্ষতার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের কে দলীয় কার্যক্রমে অধিক সক্রিয় করে তুলেন সেসময় । রাজনীতি যে মানুষের জন্য এ কথা উনার কর্মের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়েছে বারবার। মানুষের ঘরের দরজায় গিয়ে কুশলাদি বিনিময়োত্তর ব্যক্তিগত, সামাজিক সমস্যা উত্তোরণের উপায় নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন দিনের পর দিন। নিজের সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করেছেন খোলা মনে। নির্বাচন পুর্ববর্তী সময়ে আইন -শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী সম্বন্ধে প্রশংসা করতে বিব্রত কিংবা কুন্ঠিত হননি। সন্ত্রাসকে ভর করে দলীয় শক্তি বৃদ্ধ্বির চেষ্টা করেছেন – এমন অপবাদ সে সময়ের রাজনৈতিক শত্রুরা ও দিতে পারবে বলে মনে হয়না। বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য হয়ে রাজপথে থেকে সরকারের অপশাসন কিংবা অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করেছেন নিজ যুক্তিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে রেখে। একানব্বই থেকে ছিয়ানব্বই – এ পাঁচ বছর এমপি না হয়ে ও নিজ দল ক্ষমতায় – এ সুযোগের সুষ্ঠু ব্যবহার করে রামু-কক্সবাজারের অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করেছেন। অথচ টেন্ডারবাজি, দলবাজি, আমলাদের অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার প্রয়াসঃ এসব নিজে যেমন পছন্দ করতেন না , কর্মী-সমর্থকদের ও নিরুৎসাহিত করেছেন প্রবলভাবে। এ কারণেই হয়ত রাজনীতির দুষ্টচক্রের বাইরে ছিলেন তিনি। বস্তুত, একজন খালেকুজ্জামানের স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক সচেতনতা, কর্মকান্ড একজন সচেতন নাগরিককে জাগিয়ে তুলতে পারে দেশের জন্য, নিজ এলাকার জন্য কিছু করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ্ব হওয়ার তাড়না জাগ্রত করিয়ে । তারুণ্যের রাজনীতি বিমুখতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে তাঁর বহুমাত্রিক শিক্ষাজীবন, স্বপ্নীল কর্মজীবনের মোহ থেকে বেরিয়ে এসে মাটি, মানুষের জন্য কাজ করার অভিপ্রয়াস কিংবা আমৃত্যু সংগ্রামের নমুনায়।

মনে পড়ছে নব্বই সালের গোড়ার দিকে – আমি তখন প্রথম শ্রেণীর ছাত্র, কোন এক রাজনৈতিক সভায় যেটি হচ্ছিল রামুর জোয়ারিয়ানালা মাদ্রাসা গেইট এলাকায়। আব্বু তখন ঐ সভার আয়োজক ছিলেন কিংবা সভাপতিত্ব করছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন কর্নেল অলি আহমদ। ঐ সময়ের সম্ভাব্য বি এন পি তরুণ প্রার্থী খালেকুজ্জামান তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন এভাবে “আমার দাদার গ্রাম বৃহত্তর জোয়ারিয়ানালা, আমার বাবার গ্রাম জোয়ারিয়ানালা, আমার গ্রাম এখানে… এখানকার মাটি, মানুষের সঙ্গে আমার বন্ধন চিরদিনের…” ।

কিছু বুঝিনি মর্মার্থ তখন। মনে আছে শুধু বাড়িতে এসে এ কথাগুলো বলছিলাম নিজেকে সভার বক্তা কল্পনা করে। বাড়ির সবাই হেসেছিল শিশুর শিশুসুলভ আচরণে। কিন্তু কজন নেতার এ ক্ষমতা থাকে যে একটি পাবলিক রাজনৈতিক সমাবেশে একজন অবুঝ শিশুর চিন্তায় কিংবা অনুকরণে ঢুকে যেতে পারে। বাড়ীর আঙ্গিনায় শৈশবের এই বুলি আওড়ানো থেকেই হয়ত উৎসাহিত হয়ে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে প্রতিযোগিতামূলক বিতর্কে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছি। দৈবক্রমে, আব্বুর সঙ্গে রামুতে উনার শেষ জনসভায় ও উপস্থিত ছিলাম আমি । মনে আছে লাখো জনতার জোয়ারে মৃদু হাস্যমান খালেকুজ্জামান এগিয়ে আসছিলেন মঞ্চের দিকে। কিন্তু জীবন মঞ্চের নাট্যায়ন যে কখনো কখনো ট্র্যাজেডি কিংবা বিয়োগান্তক হয়। আজ এক যুগ পরে মরহুম খালেকুজ্জামানের শারীরিক উপস্থিতি নায় ঠিকই, কিন্তু তাঁর বিদেহী আত্না হয়ত বারে বারে ফিরে আসে কক্সবাজার – রামুর অবহেলিত, প্রান্তিক মানুষের কাছে তাদের প্রাপ্যতা মিটানোর তাগিদ নিয়ে।

Read Full Post »

আজ কক্সবাজারবাসী দের জন্য আশার ও অনেক কিছু অর্জনের দিন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যস্ততম কক্সবাজার সফর করছেন আজ মঙ্গলবার। দু বছরের মধ্যে তৃতীয় বারের মত একই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কক্সবাজার সফর করছেন তিনি। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এক অনাকাংক্ষিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ মন্দির গুলোর সংস্কার পরবর্তী নির্মাণের উদ্ভোবন করার পাশাপাশি অনেক উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রযাত্রা ও নিশ্চিত করবেন তিনি। সম্ভাবনাময়ী উপকূলীয় এ জেলার সরল ও জীবন সংগ্রামী মানুষের আতিথেয়তায় ধন্য হওয়ার পাশাপাশি আজ লক্ষাধিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক মৌন আকাঙ্ক্ষা কিংবা রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশার আহবানে আচ্ছাদিত থাকবেন জনপ্রিয় এই নেত্রী।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনের জনসভায় বিশাল জনরাশির সামনে প্রধানমন্ত্রী যখন আজ মূল্যবান বক্তব্য পেশ করবেন, তখন রাজনীতিক বক্তব্য কে ছাড়িয়ে অনেক স্বপ্নের কথা ও হয়ত থাকবে । থাকতে পারে, আসন্ন নির্বাচনী সংকট থেকে ঊত্তোরণের নতুন কোন ফর্মুলা কিংবা গাইড লাইন। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে, একজন আজন্ম কক্সবাজারবাসি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বশীল এই সফরকে অভিনন্দিত করার পাশাপাশি আমার হৃদয় মনণে কিছু আশার বিচ্ছুরণ দানা বাঁধে। খুব সম্ভবত , এসব আশাচ্ছটাগুলো আমাদের সবার প্রাণের দাবি। যাক- মূল প্রসঙ্গতেই ফিরে আসি।

কে না জানে, সারাদেশে তারুণ্যের জাগরণকে আজ প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। আর এই ইয়াবার মূল প্রবেশদ্বার টেকনাফ সীমান্ত। বিগত কয়েকবছরের মিডিয়া কেন্দ্রিক তথ্য থেকে আমরা জানি এই ইয়াবা পাচারের পিছনে প্রভাবশালীদের ও যোগসাজশ থাকে। এই ভয়ংকর নেশার বিন্যাসকে ধ্বংস করার নিমিত্তে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ কোন ঘোষণার মধ্য দিয়ে অগ্রাধিকার দেন, তাহলে তা অনাগত সমাজের জন্য একটি বিশাল দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে। বর্তমান সরকারকে আমরা কৃষি বান্ধব সরকার হিসেবেই জানি। বিগত বাজেটে কৃষি ঋণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রামু উপজেলার অনেক উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চ সুদের ঋণের চক্রের ফাঁদে আটকা পড়ে বাধ্য হচ্ছে তামাক চাষ করতে। নিষিদ্দ্ব এ তামাক চাষ শুধু জমির উর্বরতাই নষ্ট করছেনা, পরিবেশ বিপর্যয়ের নিয়ামকগুলিকে ও শক্তিশালী করছে। গত কয়েক বছরের টানা বন্যার ক্ষতিকর প্রভাবের বিস্তৃতির একটি কারণ এ তামাক চাষ। স্থানীয়ভাবে এ চাষকে নির্মূল করা অনেক কঠিন বিধায় , যদি প্রশাসনের উচ্চ মহল কোন নতুন গাইড লাইন প্রণয়ন করে যাতে কোম্পাণিগুলো এ উর্বর জমিগুলো তামাক চাষের জন্য ব্যবহার না করে।

শুধু কক্সবাজারবাসী নয়, পুরো দেশের জন্যই বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সমস্যা। অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ এটি। পুশ ইন – পুশ ব্যাকের নিষ্ফাষনে নির্যাতিত আজ বিশ্ব মানবতা। এই অঞ্ছলে অপরাধ প্রবণতা মাত্রাতিরিক্ত থাকার অন্যতম কারণ এই সমস্যা। মায়ানমার যেখানে গণতন্ত্রের পথে এগুচ্ছে ধারণা করা হয়, এ সময় আমাদের সরকারের কোন উদ্যোগ কিংবা আহবান কে আন্তর্জাতিক চাপ অথবা সমর্থনের মাধ্যমে সমাধানের রূপরেখা দাঁড় করানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশম্যাটিক কোন আহবান কিংবা ঘোষণার দিকে আজ অনেকেই চেয়ে রইবে।

আওয়ামিলীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮ এর যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো (১৫ অনুচ্ছেদ) এ উল্লেখ আছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে রেল ও সড়ক ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। ভারতের সঙ্গে যা ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়েছে এবং নেপালের সঙ্গে ও স্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়ে তে কানেক্ট হওয়ার মাধ্যমে কক্সবাজার – মায়ানমার সড়ক পথ হয়ে চীন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের যে বানিজ্যিক সম্ভাবনার স্বপ্ন আমাদের হাতছানি দিচ্ছিল তা অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। ঐতিহাসিক শাহ সুজা সড়কের সংস্কার কাজ তরাণ্বিত করার মাধ্যমে এ সড়কটিকে মায়ানমার প্রবেশের গেট ওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ষোড়শ শতাব্দিতে তখনকার মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বাংলার সুবেদার শাহ সুজা এ সড়ক নির্মাণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ও মুক্তিযুদ্ধাদের নিরাপদে আশ্রয়স্থলে যাওয়ার জন্য এ সড়ক ব্যবহৃত হত। প্রায় ৪৩ কিমি দীর্ঘ এ সড়কের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে দক্ষিন-পূর্ব সীমান্ত জনপদের বাণিজ্যিক প্রসারকে আন্তর্জাতিয়করণের সম্ভাবনার কৌশলী উদ্যোগের বাস্তবায়নের দিকে চেয়ে থাকবে অনেকেই।

২০১২ সালের ১৪ ই মার্চ মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র্য সীমানা সংক্রান্ত রায়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সীমানার উপর আমাদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেটিকে আমরা সমুদ্র্য বিজয় হিসেবে উদযাপন ও করেছি। বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সীমানা নিস্পত্তির রায় ও আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। সম্প্রতি নৌবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে সাবমেরিন কেনার ঘোষণা সহ সমুদ্র্য নিয়ন্ত্রণের অনেক সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। লক্ষণীয় যে, বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশসমূহ বঙ্গোপসাগরের উপর তাদের দীর্ঘদিনের মনযোগ বাড়িয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র্য বন্দরের দাবিকে বাস্তবায়নের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার পর্যায়গুলিকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। আমাদের সমুদ্র্য সীমানায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অসম আধিপত্যবাদ যাতে না হয় , তা নিশ্চিত করতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রামুবাসী অপেক্ষায় থাকবে রামু কলেজ ও শতবছরের পুরনো খিজারি স্কুলের সরকারী করণের ঘোষণা শুনার প্রত্যাশায়। ভিক্তিপ্রস্তরের আনুষ্ঠানিকতা পেরুনোর পরও রেল লাইনের প্রনিধানযোগ্য কোন অগ্রগতি এখনো হয়নি। তারপর ও, রামু ফায়ার ব্রিগেডের ভিক্তি প্রস্তর স্থাপন হওয়ার পর এর অগ্রযাত্রা তরাণ্বিত হবে – আশা করতেই পারি। স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর সংস্কার সহ শত দাবির ফর্দ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জেলা প্রশাসন মারফদ পৌছেছে , এটাই স্বাভাবিক। এসব প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখার আশায় আমরা সবাই।
তৎকালীন চার দলীয় জোটের শেষ সময়ে সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্ট্যাশন উদ্ভোবনের জন্য কক্সবাজার সফর করছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। স্থানীয় সংসদ সদস্য তখন অনরেকর্ড প্রধানমন্ত্রীর কাছে কক্সবাজারে একটি হাইটেক আই টি জোন কিংবা আইটি পার্ক করার দাবি তুলেছিলেন। পুরনো অথচ সম্ভাবনাময়ী, স্বপ্নিল এ দাবিটি এখনো বহাল আছে, মেলেনি কোন আশ্বাস। হাই ব্যান্ডউইথের সহজলভ্যতাকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কাজ করার পরিবেশ করে দেওয়ার জন্য কক্সবাজারের চেয়ে উত্তম কোন জায়গা আর কোথায় হতে পারে। শুধু সফটঅয়ার শিল্পই নয়, আমাদের স্বপ্নবাজ হৃদয় আশা করে এ জেলাতেই একসময় নকিয়া, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, এইচ পির মতো প্রতিষ্ঠান গুলি তাদের গবেষণার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দেশি অনেক প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান প্রতিদ্বন্ধিতা করবে তাদের সাথে।
সরকারের সর্বোচ্চ মহলের কিছু পরিকল্পনাই পারে আমাদের এসব বাস্তব স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে। আপাতত আশায় বুক বেঁধে রওয়া ছাড়া কি ইবা করার আছে ?

Read Full Post »

তিরিশ বছর বয়সী এডওয়ার্ড স্নোডেন এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির তুরুপের তাস। আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা এই তরুণ সম্প্রতি দেশটির ইন্টারনেট নজরদারির কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।  ১০ জুন ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে স্নোডেন ফাঁস করে দিয়েছেন আমেরিকার  প্রিজম কর্মসূচির আওতার কথা। প্রমাণসহ জানিয়েছেন ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।  নিজ দেশে প্রতারক আখ্যা পেয়েছেন ইতিমধ্যে। স্নোডেন কে নিয়ে ত্রিমুখী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ্ব শুরু হয়ে গেছে। আমেরিকা সরাসরি সন্দেহের তীর ছুঁড়েছ চীন ও রাশিয়ার দিকে। অভিযোগ তাদের ভাষায় প্রতারককে সহায়তা করেছেন চীন ও রাশিয়া। তথ্য সংরক্ষণ অধিকার নিয়ে বড় গলায় হর হামিশা কথা বলা আমেরিকার স্ববিরোধী এই কার্যক্রমকে ভাল চোখে দেখছেন না বোদ্ধারা। অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসেঞ্জের পথিকৃৎ তরুণ এই আই টি এক্সপার্টকে।

লাখো সাধারণ মানুষের উপর মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করে স্নোডেন অদৃশ্য ফেরারি সময় পার করছেন। ২৩ জুন আমেরিকা ছেড়ে এসেছেন হংকং এ। এরপর লাপাত্তা। রাশিয়া প্রেসিডেন্ট পুতিন ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন স্নোডেন মস্কো বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে আছে, তবে যদি রাশিয়া তে প্রবেশ করে তার দায় তারা নিবেনা। ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে আমেরিকাতে। প্রায় একশটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বন্দী চুক্তিবদ্ধ্ব যার আউতাতে স্নোডেন কে ফেরত দিতে বাধ্য এসব দেশ। কিন্তু চীন, রাশিয়া সহ আরো প্রায় পঞ্জাশটির মত দেশ এই চুক্তির আউতামুক্ত।  কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ইকুয়েডর নাকি রাশিয়াতে কিংবা রাজনীতির আশ্রয়ের স্বর্গভূমি যুক্তরাজ্যে যাবেন স্নোডেন পরবর্তীতে। উইকিলিকস বস অ্যাসেঞ্জ এর মধ্যে স্নোডেন এর জন্য সাহায্যের অনুরোধ করেছেন।

কিন্তু স্নোডেন কে আটকানোর জন্য আমেরিকা কেন এত বিচলিত। ওবামা স্বয়ং উৎকণ্ঠিত। তাহলে স্নোডেন কি আরো হাড়ির খবর জানেন আমেরিকার ? নাহলে মাসিক দুলাখ ডলার বেতনের চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে হংকং এসে কেন তথ্য ফাঁস করবেন স্নোডেন। বিশ্বের মোড়ল আমেরিকার উদ্দ্বেগ দেখে মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় শেখা প্রবচন – অসির চেয়ে মসি বড়। [ The pen is mighter than sword]. আগামি দিনের লড়াই যে তথ্যের যুদ্ধ্ব , তথ্য সংরক্ষণের বিশ্বাস ও শক্তির দাম্ভিকতার উপাখ্যান,  আন্তর্জাতিক রাজনীতির চলমান হালচাল তাই বলে দেয়।

দু সপ্তাহ আগের লিখাতেই সন্দেহের কথা বলেছিলাম বাংলাদেশের জিএস পি সুবিধা ( যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজারসুবিধা) বন্ধ করে দিতে পারে আমেরিকা। সন্দেহটি অমূলক হল না। ওবামা প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টত উল্লেখ করেছে পোশাক খাতে কাজের পরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধ্বন্ত বলবৎ থাকবে। খুব শীঘ্রই এর ক্ষতিকর কোন প্রভাব না পড়লে ও পরিবেশের উন্নয়ন না হলে ও ইউরুপিয়ন ইউনিয়ন প্রভাবিত হতে পারে। আর যদি ইউরোপে বাজার নষ্ট হয় তা আমাদের জন্য খারাপ সংবাদ তো বটেই। পোশাক শিল্পে আমাদের অগ্রযাত্রার পেছনে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ ও শ্রমিকদের পরিশ্রমই পাথেয়। সরকার-বিরোধী দলের পারস্পরিক দোষারুপ কে মাথায় না নিয়ে বিজেএমইএ কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলে জিএস পির ক্ষতিকর  প্রভাব আমাদের উপর পড়বেনা।

বলতে গেলে আগত নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে । আগামি ৩ জুলাই কিশোরগঞ্জ এ সংসদীয় উপ নির্বাচন ও ৬ জুলাই গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। কিশোরগঞ্জে প্রেসিডেন্ট পুত্র তৌফিকের বিজয় একপ্রকার নিশ্চিত হলে ও আওয়ামি বিদ্রোহী প্রার্থী অসীম প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে উৎফুল্ল ও খোশ মেজাজে। তবে নির্বাচনে হারলে ও প্রচারের বেনেফিট ঠিকই বের করে নিবেন এই তরুণ। অন্যদিকে আওয়ামিলীগ ও ওয়াক ওভার পাওয়ার চেয়ে ম্যান্ডেট নিয়ে জেতার দিকে বেশি মনযোগী। হাউড় অধ্যোষিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে নৌ যান অধ্যুষিত যাতায়াত ব্যবস্থা । গত চল্লিশ বছর ধরে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ সাতবার এই এলাকায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। উন্নয়ন করেছেন অনেক। বিদ্যুৎ খাতে অত্র এলাকার অগ্রগতি ইর্ষনীয়।

সরকারের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠতে পারে  গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। প্রায় দশ লক্ষ ভোটারের অধ্যুষিত এই এলাকায় লাখ খানেক ভোটার গার্মেন্টস কর্মী। ভাসমান ভোটার আছে আরো লাখখানেক। স্থানীয় ইস্যুকে ছাড়িয়ে জাতিয় ইস্যু গুলো প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। লোখ দেখানো সমঝোতার আড়ালে দ্বন্ধ-বিভেদ আছে দু দলের প্রার্থীদের মধ্যেই। সরকারের জন্য যেমন সম্মান পুনরুদ্ধারের লড়াই তেমনি বিরোধী দলের জন্য আত্নবিশ্বাস চাঙ্গা রাখার লড়াই। আওয়ামি বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর অশ্রুসজল চোখে সমর্থন দিয়েছেন সরকার সমর্থক প্রার্থীকে। তবে চোখের জলের আড়ালে চাপা ক্ষোভ লুকিয়ে আছে কি না তা ভোটের দিনই নিশ্চিত হওয়া যাবে। গাজিপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে জোরেসোরেই নেমেছিলেন মেয়র হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু বিধিবাম। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় দোয়াত-কলম প্রতীকপ্রাপ্ত সরকার সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন জাহাংগীর। অন্যদিকে জাতিয় পার্টির সমর্থন ও স্পষ্ট নয়। পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ কে প্রধানমন্ত্রী তলফ করে ও খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেনি। হয়ত চাপ থেকে সরকারকে সমর্থন ও দিবেন শেষ মুহুর্তে, তবে তা ভোটারকে কতটা আহ্লাদিত করবে এই সময়ে সরকার পক্ষের প্রার্থীর পক্ষে।  দেশীয় রাজনীতির নব্য প্রভাবক হেফাজত এর প্রকৃত কর্মী সমর্থন স্পষ্টত সরকার বিরোধী শিবিরেই যাবে।  অন্যদিকে এক সময়ের প্রভাবশালী এমপি হাসান সরকার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মান্নান কে সমর্থন দিয়ে বৈরীতা ভুলে গিয়ে  একসঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন। আগের চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতিয় ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে, তা প্রমাণিত। গাজিপুরে ও এর ব্যতিক্রম হবেনা হয়ত।  তবে জাতিয় ইস্যুকে ছাড়িয়ে নতুনভাবে প্রভাবিত করতে পারে বৃষ্টি পরবর্তী সড়ক ব্যবস্থা। বর্ষার মৌসুমে নাজেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাব ব্যালট বাক্সে পড়বে, অনুমেয়। প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা ও আটকে যাবে যদি মিডিয়া প্রভাবিত না হয়। মানলাম- গাজিপুর আওয়ামিলীগের শক্ত ঘাঁটি, তারপর ও ওজানে নৌকা চালাতে মাঝির পারদর্শিতা ছাড়া ও স্রোতের ঢেওকে   নিয়ন্ত্রণের কৌশল আয়ত্ত করতে অন্তরালের রাজনীতিকেই ব্যবহার করতে চাইবে সরকারী দল।

অন্তরালের রাজনীতিতে এক ধাপ এগিয়েই গেছেন বিএনপি। মার্কিন কংগ্রেসনাল এওয়ার্ড অর্জন করায় বিএনপি চেয়ারপার্সন নিজ হাতে লিখা অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন নোবেল লরেট ডঃ ইউনুসকে। বার্তামাফক এই বার্তায় উনি মেসেজ কনভে করেছেন ইউনুসের পাশেই থাকবে বিএনপি। কয়েকদিন পর বিএনপি মহাসচিব স্বশরীরে ইউনুস সেন্টারে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আন্তর্জাতিক লবিং ছাড়া ও অন্তরালের রাজনীতিতে বাড়তি কিছু ঘটছে কিনা ঠাহর করা না গেলেও এটি অনুমান করা যায় ইউনুস সাহেব এ সরকার থেকে পরিত্রান চায়। ইদানিং অর্থমন্ত্রীকে ছাড়িয়ে গেছেন তথ্যমন্ত্রী মহোদয়। গ্রামীন ব্যাংককে কুক্ষিগত করার সরকারী ফাঁদের পক্ষে নিজেদের যৌক্তিক(!) অবস্থানকে হুংকারের ভাষায় কথা বলছেন প্রভাবসালী এই মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া ভাষণে ডঃ ইউনুসের প্রতি আবারো বিষোদ্গার করেছেন।  সমস্যা সমাধানের চেয়ে নিজের ভাষায় সমস্যার নেপথ্যের গল্প শুনানোর  ট্র্যাডিশন অক্ষুণ্ণ থেকেছে তার বক্তব্যে। অপরদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথায় ও নতুনত্বের আঁচ না থাকলে ও বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে স্নরণ করাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায়। আগামি প্রজন্ম যাতে সংসদ কার্যক্রমকে খিস্তি খেওড়ের উপাখ্যান হিসেবে না দেখে তার জন্য সিনিয়র সাংসদরা একমত হয়েছে আগেই, জরিমানা সহ কিছু প্রস্তাব ও এসেছে, এসবের বাস্তব রূপ হওয়া অত্যাবশ্যকীয়।

দেরিতে হলে ও অবশেষে আন্তর্জাতিক মিডিয়া মায়ানমারের প্রকৃত জাতিগত সংঘাত ইস্যুকে সামনে তুলে ধরছে। এ সপ্তাহের (জুলাই) টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ করেছে ‘দ্য ফেস অফ বুড্ডিস্ট টেরোরিস্ট’ (এক বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ) যেখানে ভিরাথু নামের এক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতাকে সাম্প্রতিক দাঙ্গার উস্কানিদাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। সামরিক শাসকরা ও দাঙ্গা উস্কানিদাতাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। শাসকরা শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকেই প্রশ্রয়  দিচ্ছেনা, একই সঙ্গে মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা-বাণিজ্যকে ও বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসেছে মায়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উগ্রপন্থী আন্দোলন যেটি ৯৬৯ ম্যুভমেন্ট নামে পরিচিত সেখানে সরকারের সমর্থন রয়েছে।  এমনকি নোবেল পিস লরেট সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির নেতারা ও এ আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে। আমরা চেয়ে থাকব টাইমের মত মিডিয়া নিকট ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যাকে ও লিড করবে এবং ইতিহাস পর্যালোচনায় সঠিক তথ্যানুসন্ধানে বাংলাদেশ এ সমস্যার অভিশাপমুক্ত হওয়ার দিকে এক পা এগুবে অন্তত।

রাজধানীতে আষাঢ়ের ব্যকুল এ সময়ে বর্ষার ঝাঁজ অতটা না থাকলে ও বৃষ্টিস্নাত বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে ঠাহর করা যায় – পাহাড় ধসে প্রাণহানি হবে,  ঘরবাড়ি প্লাবিত হবে, গবাদি পশু বাস্তুহাড়া হবে, ফসলি জমি নষ্ট হবে, নিঃস হবে অনেক পরিবার। তবে মহান স্রষ্ঠার কাছে প্রার্থনা এসব অনুমান যাতে অতটা প্রকট না হয়।   ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাক করা ত্রান দেওয়া কার্যক্রমের খবরের চেয়ে বাঁধ পুনরোদ্ধার, রাস্তা সংস্কারসহ অনেক গঠনমূলক কাজ সম্পন্ন করার এখনো অনেক সময় আছে। সবচেয়ে মনযোগী হওয়া দরকার ছিল পাহাড় কাটা নিধনে। আমরা সংবাদপত্র মারফত জেনেছি রামুতে  নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে বনায়ন নষ্ট করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম করে জমি দখলের পাঁয়তারা ও করেছে একসময়।  তবে দীর্ঘদিনের সমস্যা বাজারঘাটা রাস্তার প্রয়োজনীয় সংস্কার হওয়াতে সস্তি কিছুটা হলে ও পাচ্ছে কক্সবাজার শহরবাসী। জনগণকে সাথে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সচেতনতা ও পূর্বসতর্কতা [প্রো অ্যাকটিভনেস] অনেক বেশি কার্যকর ও শক্তিশালী আগত সমস্যা মোকাবেলার ও সঠিক সমাধানের জন্য।

Read Full Post »

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আমেরিকার অভিজ্ঞতম কয়েকজন রাজনীতিবিদ দের একজন। সত্তর বছর বয়স্ক কেরি ২০০৪ সালে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন করে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান। টানা আটাশ বছর দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন সিনেটর হিসেবে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের। আগামি ২৫ শে জুন কেরির ঢাকা সফরের কথা ছিল কয়েক ঘন্টার জন্য। ভারত – যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ অংশিদারী সংলাপে অংশ নিতে কেরি ২৪ জুন ভারত সফর করছেন এবং পরদিন নব নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে পাকিস্তান সফরের মধ্যে ঢাকায় সফরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ঢাকা সফর বাতিল করা হল। অতিথিদের মোড়ল ভাবার বিশেষত আমেরিকার মত দেশের বিশেষ ব্যক্তিদের সফর কে অগ্রাধিকার দেওয়ার তাড়না আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তার উপর চলমান বছর টি নির্বাচনের বছর। সিরিয়া ইস্যুতে প্রচন্ড চাপের মধ্যে থাকা কেরির আসন্ন সফরে অগ্রাধিকার মূলক বাজার সুবিধার ( জি এস পি ) বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষনা করার কথা ছিল। সাভারের রানা প্লাজার ঘটনার পর বাংলাদেশে জি এস পি সুবিধা অব্যাহত রাখা না রাখা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষ বিপক্ষে ব্যপক জনমত গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে জি এস পি বাতিলের দাবি জোরালো হচ্ছে আমেরিকায়। এ অবস্থায় কেরির সফর বাতিল আমাদের জন্য খোদ উদ্বেগের বিষয়।

ধারণা করা হচ্ছে আগামি ৩০ শে জুন ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের বানিজ্যিক সুবিধা কমানোর ঘোষনা দিতে পারেন। ওবামা প্রশাসন মনে করছে এ ঘোষনা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রয়োজনীয় শ্রম পরিবেশ সংস্কারে যথেষ্ট উৎসাহ যুগাবে। জি এস পি সুবিধা না কমানোর জন্য আমাদের সরকার কতটুকু আন্তরিক তা পরিস্কার নয়। তবে যদি এই সুবিধা সংকোচিত কিংবা বাদ দেওয়া হয়েই থাকে, তা আমাদের শাস্তি হিসেবে না নিয়ে বরং সচেতনতা বৃদ্দ্বির জন্য নেওয়া উচিত হবে।

আমাদের ভ্রমন পিপাসু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর মধ্যে বিশ মিনিটের জন্য নিউইঅর্কে যাত্রা বিরতি করে অংশ নিয়েছেন ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক সেমিনারে। এর আগে আজারবাইজানে ফিলিস্তিন বিষয়ক একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে ছুটেছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে সন্ত্রাস বিষয়ক আরেক টি সেমিনারে অংশ নিতে। উপরিউক্ত তিনটি সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উপস্থিতির গুরুত্বের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা ডিপ্লোম্যাটরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে আজারবাইজানের সেমিনার টি আমাদের জন্য অংশগ্রহন ই প্রাপ্তি টাইপ, নিউই অর্কের টা সংস্কৃতি মন্ত্রীদের সম্মেলন আরে জেনেভার টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সেমিনার। সৌখিন ভ্রমনপিপাসু এই মন্ত্রী সম্প্রতি সমকামিদের অধিকার নিয়ে ও কথাবার্তা বলেছেন বলে মিডিয়াতে এসেছে। আমাদের মত স্বল্পোন্নত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এ ধরনের সেমিনারমুখিতা ও আসল কূটনীতিবিমুখতা কতটা যৌক্তিক তা পরিমাপ করা দরকার।

১১ জুন যশোর সীমান্তে বি এস এফ কতৃক খুন হল দুজন বাংলাদেশী। এর চব্বিশ ঘন্টা পর সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা শুন্যে নেমে এসেছে বলে দম্ভোক্তি করেছেন ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ। গত ছয় মাসে সীমান্তে বি এস এফ এর হাতে একজন বাংলাদেশি ও প্রাণ হারাননি বলে দাবি করেছেন তিনি। যদি ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ( বি জে বি ) অব্যাহত চাপে শেষ পর্যন্ত বি এস এফ সীমান্তে হত্যার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ও তাদের চার স্টাফ বরখাস্ত করেছেন। মিট দ্য প্রেস অনুষ্টানে মিস্টার পঙ্কজ সরণ ক্যাটাগরিকালি গত চার বছর টার্ম উল্লেখ করে ভারত – বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়েছেন। টিফাইমুখ বাঁধে বিদ্যুৎ সুবিধা নেওয়ার টোপ দেখিয়েছেন । যদি ও ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক টি কমিটি গঠন করেছেন টিপাইমুখ প্রকল্প যাচাইয়ে পরিবেশ গত বিপর্যয় যাচায়ে। প্রস্তাবিত বাঁধ অঞ্চলে গিয়ে এই কমিটি পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় যেমন খতিয়ে দেখবে , একইভাবে সাধারন মানুষের উপর এর কি প্রভাব পড়বে তা ও খতিয়ে দেখবে। তবে সরণ স্বীকার করেছেন তিস্তা চুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে ভারতের কারণে। মেয়াদপূর্ণের ঠিক পূর্বমুহুর্তে আগামি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রধান মন্ত্রীর ভারত সফরের কর্মসুচী চুড়ান্ত করার পরিকল্পনার কথা ও হাইকমিশনারের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তবে শেখ হাসিনার এই সফর কতটা ইস্যুভিক্তিক নাকি আগত নির্বাচনের হিসেবি তদবির – তা নিয়ে আমজনতা ভাবতে পারে।

এদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। একই সময়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হু মো এরশাদ ও অবস্থান করছেন সেখানে। কানাঘুষা চলছে বি এন পি – জাতীয় পার্টি র ঐক্যের। এর আগে ফেব্রুয়ারীতে ও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন বেগম জিয়া। তখন ও আওয়ামীলীগ সিনিয়র নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন এ সফরের উদ্দেশ্যে নিয়ে। তবে বিরোধীদলীয় নেতা বিদেশ সফর করলে যে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে যায় তা অনুমান করা খুব কঠিন নয়। তারেক রহমান কে নিয়ে চাপে থাকা বেগম জিয়া স্বাভাবিক ভাবেই আন্তর্জাতিক লবিং ধরার চেষ্টা করবেন এবং তাতে এরশাদ কে সাথে পেলে দল ভারি হওয়া ছাড়া ও কূটনীতিক পাল্লা ও ভারি হবে। এরশাদের এখনো মিডল ইস্ট, ভারত , আমেরিকা লবিং শক্তিশালী ধারণা করা যায়।

সৌদি আরবে একামা জটিলতা নিরশনে সরকারের উদ্যোগ প্রশংশনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রবাসী যারা মূলত অবৈধ কাগজ পত্র নিয়ে আছেন তারা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সরকারের উচিত ছিল হেল্পডেস্ক খুলে পরামর্শগত সহযোগিতা নিশ্চিত করা। আমাদের কক্সবাজারের উন্নয়ন অর্থনীতির একটি লভ্যাংশ সৌদিয়ারব রেমিট্যান্স কেন্দ্রিক। এখানকার অধিকাংশ প্রবাসীরা ও এখনো একামা জটিলতা সমাধান করতে পারেন নি। আতংকে দিন রাত অতিবাহিত করছেন। তাদের অনেকেই এতটা অসহায় যে নিজ এলাকার কোন আঞ্চলিক নেতা ওমরা করতে গেলে তাকে ও তাদের সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিচ্ছেন। দেশে দূর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ক্ষমতাসীন দলের কক্সবাজারের এক নেতা সম্প্রতি মক্কা সফরে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। তার এই আশ্বাস যেন ভোটের রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকে।

অবৈধ উপায়ে নৌপথে মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা ও দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা কিংবা কক্সবাজারের নাগরিক। অতি সম্প্রতি নৌ ডুবি, দালালদের খপ্পরে পড়া সহ নানাবিধ কারণে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেক ভাগ্যসন্ধানী লোকজন। প্রবাস কল্যান মন্ত্রনালয়ের সাড়ে তেত্রিশ হাজার টাকায় মালেশিয়ায় কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ প্রশংশনীয় হলে ও সংখ্যার দিক দিয়ে খুব অপ্রতুল। সারা দেশ থেকে সাড়ে চৌদ্দ লাখ মানুষ আবেদন করলে ও মাত্র ১১ হাজার সাতশ আটান্ন জন প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত করেছেন। প্রশংশনীয় এ উদ্যোগ আরো আলোর মুখ দেখবে যদি কূটনৈতিক ভাবে তদবির করে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো যায়। আমাদের মত স্বল্পোন্নত দেশে রেমিট্যান্স এর স্রোত প্রত্যাশিত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারে।

আগের লিখাগুলিতে বারবার উল্লেখ করেছি ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে আমাদের আগামিদিনের উজ্জ্বল অর্থনীতির নিয়ামক। আশির দশকের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির অগ্রযাত্রার সঙ্গে এর তুলনা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে ইন্টারনেট এর গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার। তবে সরকারের যে প্রতিনিধি যখন ই বিদেশ সফর করে, সময় সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ কারিদের কাছে আমাদের ফ্রিল্যান্সিং কে প্রমোট করতে হবে। বুঝতে হবে ফ্রিল্যান্সিং এক টি প্রোডাক্ট ( দক্ষ সফট ওয়ার প্রকৌশলী, যারা দেশ থেকেই মান সম্মত কাজ ডেলিভার করতে পারে ইণ্টারনেটের মাধ্যমে)।
এই প্রোডাক্ট কে ব্র্যান্ডিং করার দায়িত্ব সরকার কোনভাবে এড়াতে পারেন না।

সরকার শেষ সময়ে এসে তাদের নির্বাচনী মেনফেস্টোনুযায়ী সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, এশিয়ান হাইওয়ে, মহেশখালিতে এল এন জি টার্মিনাল নির্মান সহ বড় কয়েক টি প্র্কল্পে প্রাণ সঞ্ছার করতে চাচ্ছেন। নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থায়ন সংগ্রহ সহ প্রকল্প পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কূটনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে তা প্রকল্পের অগ্রসরতাই প্রমাণ করবে। সহনশীল রাজনীতির এই সময়ে আমরা আশা করতেই পারি আমাদের মেনটর রা সঠিক কূটনৈতিক দূতিয়ালি করে আমাদের বন্ধুর পথকে মসৃণ করবেন, এতে উপকৃত হবে আমাদের শ্রমিক, কমবে বেকারত্ব, জি ডি পি র উন্নয়নের শতকরা অংশে বানিজ্যের প্রভাব বাড়বে।

Read Full Post »

বিশ্ব সমুদ্র্য  দিবসঃ জুন
বঙ্গোপসাগর, আমাদের কূটনীতি এবং অবারিত সম্ভাবনা

 

১৯৯২ সালের ব্রাজিলের রিওডিজেনেরিও আর্থ সম্মেলনে কানাডা কতৃক প্রস্তাবিত ও ২০০৮ সালে জাতিসংঘ হতে আনুষ্ঠানিক অনুমোদিত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিবছর ৮ ই জুন বিশ্ব সমুদ্র্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের সব সমুদ্র্যকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশ্ব সমুদ্র্য দিবস একটি সু্যোগ। বিশেষ এই দিনটিতে আমরা অন্তত সবধরণের সামুদ্রিক পণ্য, সামুদ্রিক খাবার ও সমুদ্র্য কেন্দ্রিক যাবতীয় সুবিধার সমণ্বয়মূলক মেলা উদযাপন করতে পারি। একই সঙ্গে সমুদ্র্যসীমা দিয়ে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের তাৎপর্য্য নিয়ে ভাবতে পারি। সমুদ্র্য দূষণ , সমুদ্র্য সন্ত্রাস ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্রকে ক্ষতির প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য কিছু নির্দেশনামূলক প্রস্তাবনা আলোকপাত করা যেতে পারে। সমুদ্র্যবিজ্ঞান নিয়ে বিশেষ পড়াশোনা না থাকলে ও দীর্ঘতম সমুদ্র্য পাড়ের সন্তান হিসেবে ব্যক্তিগত দায়বদ্দ্বতা ও আগ্রহের কারণে কিছু মৌলিক বাস্তবতা ও আমাদের অবস্থান চিহ্নিত করাই এই লিখার মূল উদ্দেশ্য। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলাসহ নানবিধ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর কারণে সমুদ্র্য সম্পর্কে সচেতন থাকাটা শুধু উপকূল বাসি নয়, বাংলাদেশীদের জন্য ও খুব দরকারী বিষয়। প্রকৃতপক্ষে জলদস্যুতা, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার, ঘের দখল, সমুদ্র্য দূষণ সহ নানাবিধ মানবসৃষ্ট  কারণে  সাগরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ংকর ক্ষত । সাম্প্রতিক সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছ্বাস অনাগত ভয়ংকর দূর্যোগের পূর্ভাবাস দেয়।

কিছুটা আলোকপাত করা যাক আমাদের বঙ্গোপসাগরের স্ট্রাটেজিক গুরুত্বের উপর। মধ্য এশিয়া থেকে ফিলিপাইন সাগরের মাঝবর্তী অবস্থিত আপাতত ত্রিমাত্রিক মাপের এ সাগরের উত্তরে বাংলাদেশ, পশ্চিমে শ্রীলঙ্কা ও ভারত, পূর্বে মায়ানমার, আন্দামান, নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ । বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র্য সৈকত কক্সবাজার। একুশলক্ষ বাহাত্তর হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সাগরে পতিত হয়েছে গঙ্গা (পদ্মা , হুগলি), ব্রহ্মপূত্র (মেঘনা, যমুনা) সহ ছোট বড় অনেক নদ-নদী। রয়েছে চেন্নাই, কলকাতা, ইয়াঙ্গুন,  চট্টগ্রাম, তৃণকমলি, পন্ডিচেরী,তুতিকরিন এর মত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বন্দর। সামুদ্রিক বিজ্ঞান অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর নোনা পানির সাগর এবং ভারত মহাসাগরের একটি অংশ । বঙ্গোপসাগর বিশ্বের ৬৪ টি বৃহত্তম প্রাণিবৈচিত্রের একটি। প্রবাল প্রাচির, সামুদ্রিক মাছের অবাধ প্রজনন ক্ষেত্র ও সুন্দরবন নিকটবর্তী ম্যানগ্রূভস পূর্ণ বিশাল এই জলরাশি।  বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের বাৎসরিক মহড়া এই সাগরেই করে থাকে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী সর্বশেষ যৌথ মহড়া করে বঙ্গোপসাগরে।

এক সময়কার বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রফতানিকারক দেশ বার্মা ( বর্তমান মায়ানমার )  সিত্তুই বন্দর (আরাকান রাজ্য) দিয়ে চাল রফতানি করত। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসন কে পাশ কাটিয়ে দেশটি অধুনা মুক্তবানিজ্যের দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। মরিচা ধরা বন্দর সংস্কারের কাজ ও এগুচ্ছে দ্রুত। মায়ানমার ও ভারতের যৌথ অর্থায়নে ১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে কালাদান নদীর অববাহিকায় বন্দরের কাজ চলছে যার সুবিধা পাবে ভারত। মায়ানমারের  সিত্তুই  বন্দর দিয়ে মাল খালাস করে  দুর্গম রাজ্যগুলোর কাছাকাছি মালামাল পাঠানোর পরিকল্পনা দিল্লি সরকারের।  কলকাতা বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়া বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। হুগলি নদীর মোহনায় দেড়শ কোটি মার্কিন ডলার খরচের গভীর সমুদ্র্য বন্দর স্থাপনের কাজ শুরু করছে ভারত সরকার শীঘ্রই। অন্যদিকে চট্টগ্রাম হচ্ছে এই পাশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র্য বন্দর। নানা কারণে এই বন্দরের ও ত্রাহি অবস্থা। সরকারের গভীর মনযোগ ও আধুনিকায়ন ও এ বন্দরের ব্যস্ততা সামাল দিতে পারছেনা। সাম্প্রতিক মায়ানমারের উদার বানিজ্যিক স্ট্র্যাটেজির কারণে দেশটির বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক পরিকল্পনা ও বাড়ছে। সিত্তুই প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ডের অর্থায়নে প্রায় আটশ কোটি মার্কিন ডলার বাজেটের তানাসেরিম উপকূলের ‘দাবেই প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকক কেন্দ্রিক শিল্পোজোন স্থাপিত হবে যা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম সহ সংলিষ্ট এলাকায় নব দিগন্তের ধার উন্মোচন করবে বৈকি। মায়ানমারের এই উন্মুক্তকরণ নীতির সুযোগ নিচ্ছে জাপান ও। ইতিমধ্যে ইয়াঙ্গুনের  থিলাওয়া নদীবন্দর উন্নয়নে ২০ কোটি ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে টোকিও। স্বভাবতই মায়ানমারের বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক এ সমস্ত বড় বড় প্রকল্প চীন নিজ বানিজ্যিক সার্থে ব্যবহার করবে। বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক এসব প্রকল্প পুরোদমে চালু হলে মালেশিয়া ও সিঙ্গাপুরর গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশংকা ও আছে।

প্রতি বছর জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দক্ষিন এশিয়া ও ভারত মহাসাগর থেকে আসা বায়ু দূষণ মেঘ বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়। মনযোগ দেওয়া যাক বহুমুখী ও  অর্থনৈতিক প্রাধান্যে নির্মিতব্য বন্দর নির্মাণের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব। বিশ্বের অন্যতম  জলজ  জীববৈচিত্র্যের অধিকারী বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি টন মাছ ধরা হয় বঙ্গোপসাগর থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এই সাগর। হুমকির মুখে পড়তে পারে এসব জলজ প্রজাতি। BOBLME (Bay Of Bengal Large Marine Ecosystem) [বঙ্গোপসাগর বৃহৎ জলজ  জীববৈচিত্র্যে] নামে একটি পাঁচ বছর মেয়াদী প্রজেক্ট শুরু হয়েছে যেখানে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনিশিয়া, মালেশিয়া, মালদ্বীপ  ও থাইল্যান্ড এর বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতে কাজ করার পরিকল্পনা করেছেন । ম্যানগ্রুভ বনাঞ্ছল, প্রবাল প্রাচীর, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, সমুদ্রের লবনাক্ততা সহ  পরিবেশগত মানোন্নয়ন, উপকূলীয় স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে সংগঠনটি  নানাবিধ সচেতনতামূলক প্রচারণা, সেমিনার করে গ্রুপ ডিসিশন নেওয়া ও তথ্য ভিক্তিক জার্নাল পাবলিশ করার মাধ্যমে জলজ এই জীববৈচিত্র্যে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এবার আসা যাক কিছু আন্তর্জাতিক কূটনীতিক বিষয়ে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র্য বিজয় উদযাপন করলে ও এটি ছিল একটি সীমানা সংক্রান্ত রায় যেটির প্রত্যাশিত ফলাফল মায়ানমার ও বাংলাদেশ দু দেশই পেয়েছে বলে আপাতত ধারণা করা হয়।  ২০১২ সালের ১৪ ই মার্চের এ রায়ের মাধ্যমে সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট সীমার উপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যদি ও এ রায়ের ফলে আমাদের আসল অর্জন কতটুকু তা আমাদের ভবিষ্যত কূটনীতিক তৎপরতাই প্রমাণ করবে । অপেক্ষা করতে হবে ২০১৪ সালের ভারত এর সঙ্গে সীমানা নিস্পত্তির রায়ের জন্য।  আমেরিকা বঙ্গোপসাগরের দিকে  তাদের দীর্ঘদিনের মনযোগ আরো বাড়িয়েছে। এই অঞ্চলে তাদের নানা মাত্রায় ঐক্য ও সমঝোতার ঊদ্যোগের একটি লক্ষ্য হল বঙ্গোপসাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।  অনেকগুলো যদি কে মাথায় রেখে আমাদের কূটনীতিক তৎপরতা বেগবান করতে হবে। যদি সমুদ্রের মালিকানার বিশাল অংশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অসম আধিপত্য (খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তাগিদে) বিস্তৃত হয়, যদি সীমানায় বিদেশী সৈন্যের আধিপত্য ঘটে, যদি মায়ানমার-চীন-ভারত একজোট হয়ে আমাদের বানিজ্যিক অধিকার বঞ্চিত করেঃ এসব যৌগিক কিন্তু প্রাসঙ্গিক বিষয় গুলো কে প্রাধান্য দিতে হবে। স্বীকার করতেই হবে এখন বাংলাদেশ শুধু নদীমাতৃক দেশ নয়, সমুদ্র্যমাতৃকও। সমুদ্রের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে।সমুদ্র্য কেন্দ্রিক দেশের সম্পদ রক্ষা ও সার্বভৌমত্বের মত ইস্যুতে  বিরোধীদলের আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরী। স্থল ভূখন্ড ও সম্পদ নিয়ে জনগণ যেমন সচেতন , সামুদ্রিক ভূখন্ড নিয়ে একই ধরণের সচেতনতা আমাদের সামগ্রিক সমস্টিগত উন্নয়নকে আরো তরাণ্বিত করবে।

উল্লিখিত কিছু প্রকল্প তথ্য থেকে অনুমান করা যায় বঙ্গোপাসাগর কেন্দ্রিক হয়ে এশিয়ার  অর্থনৈতিক হালচাল বদলে যাচ্ছে  যা আমাদের জন্য ও সুবর্ণ সুযোগ। ভৌগলিক অবস্থান আগেই ব্যখ্যা করেছি আমাদের বঙ্গোপসাগরের। বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ও কৌশলগত ভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।  সার্ক (SAARC) এবং আসিয়ানের (ASEAN) মত দুটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক সমষ্টির মাঝে এর অবস্থান। আমাদের মেনটর দের সামনে অবারিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেওয়ার হাতছানি।  দেশ ও মানুষের কল্যাণমুখী কৌশলী পরিকল্পনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভাবে বানিজ্যিক সুবিধা আদায় করে নেওয়ার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

এবারের সমুদ্র্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে  ”আমাদের একত্রিত শক্তিই পারে সমুদ্র্য কে রক্ষা করতে”  [Together we have the power to protect the ocean.] স্থানীয় ঐক্য, জাতীয় ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সমণ্বয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় বঙ্গোপসাগর কে সত্যিকার অর্থে রক্ষা করতে পারি। এতে শুধু আমাদের সামগ্রিক কল্যাণ ই হবেনা , রাষ্ট্রের রাজস্ব কোষাগার ও আলোর মুখ দেখবে আরো বেশি প্রখরতা নিয়ে।

প্রকাশিতঃ ৮ই জুন, ২০১৩ দৈনিক হিমছড়ি,  www.coxsbazarnews.com

Read Full Post »