Feeds:
Posts
Comments

Archive for November, 2013

বিস্নয়করভাবে বাংলাদেশ এখন কয়েকটি  দন্ত্য ‘স’ এর বলয়ে আবদ্ধ। সংকট, সংশয়, সংঘাত, সংলাপ, সর্বদলীয়, সমঝোতা এসব চলমান শব্দের ভীড়ে সংবিধানের সমীকরণে সমাধান বেরিয়ে আসবে সময়ের পরিক্রমায়।

সন্দেহ নেয় আমরা একটি সংকটময় সময় পার করছি।  আড়ালের দেন-দরবার কে  রৌদ্রুজ্জল করে বকাটে হাসির আভিজাত্যে এরশাদের জাতিয় পার্টি নির্বাচনকালীন সরকারে যে বেশভূষা অন্তত পেল তা দেখে লোলুভ নেতাদের বস্তুগত চাহিদা আরো বেড়ে গেছে। এখন তাদের তৃপ্তির ঢেকুর তুলাটা উপভোগ করবে খোদ সরকারী দল। কথিত নির্বাচনকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রীর পদ পাওয়া যমুনা গ্রুপ কর্ণধার বাবুলের স্ত্রী জাতিয় পার্টি নেত্রী সালমা ইসলামের কদমবুচির জবাবে প্রধানমন্ত্রী যখন আদুরে গলায় আহ্লাদ করে ‘এবার খুশি তো?’  বলে, তখন জাতি হিসেবে আমরা প্রহসনের চুড়ান্ত সক্রেটিস মঞ্চনাটক উপভোগ করি যেন। এ মঞ্চ নাটকের উপকরণগুলো এত বিশেষায়িত যে নির্বাচিতদের অধীনে নির্বাচনের যে স্ব-প্ররোচিত আস্ফালন তা হুমকির মুখে দাঁড়ায়। তাইতো ঊনত্রিশ জন নির্বাচিত মন্ত্রীর (টেকনোক্রেট সহ) বিপরীতে এগারজন অনির্বাচিত উপদেষ্টা নিয়োগ কে সংবিধানের আলোকে অবৈধ বলা না গেলেও নীতির প্রশ্নে তা জাতির সঙ্গে চরম এবং চুড়ান্ত পরিহাস। এ পরিহাসের মাত্রা এতটা জন্ডিসাক্রান্ত যে জাতিয় পার্টির আটাশ জন নির্বাচিত সাংসদের বিপরীতে সাতজনের মন্ত্রীত্বলাভ ছাপিয়ে যায় আওয়ামিলীগের দুশ বিশ জন সাংসদের বিপরীতে বিশজনের মন্ত্রীত্বলাভকে। ছিয়াশির নির্বাচনের প্রতিদান হিসেবে না দেখলে ও কিসের আকাঙ্ক্ষায় হু মো এরশাদ এত মন্ত্রীত্ব বাহুমন্ডিত করলেন তার বিশ্লেষণে যাওয়াটা সময়েক্ষেপন করার নামান্তর। পরাজিত স্বৈরশাসক গণতন্ত্রের নির্যাস কে নিজের সুবিধাভোগের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবে, তাইতো স্বাভাবিক।

অপরদিকে আওয়ামিলীগ গণতন্ত্রের ধারার রাজনৈতিক দল।  বিরোধী দল কে  রাজনৈতিক ভাবে কূপোকাত করতে তারা সবধরনের কৌশল প্রয়োগ করবেন- তাই স্বাভাবিক। একদিকে জাতিয় পার্টিকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে খুশিতে বুঁদ করে নির্বাচনোত্তর সরকার গঠনের অভিলাসের দিবা স্বপ্ন দেখাচ্ছে, অন্যদিকে অনেক মৌলিক বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিএনপি কে এরশাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। আমরা সবিস্নয়ে লক্ষ্য করি – বিএনপি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের দাবিকে পাশ কাটিয়ে এরশাদ বিরোধী বিশাল মিছিল করে রাজপথ গরম করছে। আপাতত বিএনপি কে দৃষ্টিভ্রম করার কৌশলটি পরিস্থিতিকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কার্যত।

কথিত সর্বদলীয় সরকারের যাত্রা শুরুর তারিখ নিয়েও পরস্পর বিরোধী তথ্য-বিতর্কে যুক্ত হয়েছে সরকারী দল। কেউ বললেন প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া ভাষণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে নির্বাচন কালীন সরকারের, আবার কেহ বললেন নির্বাচন কমিশনের তফসির ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হবে। যখনই শুরু হোক না কেন, এ জি-হুজুর সরকারের মধ্য থেকে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসণের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব তুলে দেবার মত বিশ্বস্ত কাউকে খুঁজে পেলেন না প্রধানমন্ত্রী। সাময়িক বাহবা পাওয়ার নেশায় যারা এ সরকারকে সর্বদলীয় কিংবা তথ্য মন্ত্রীর ভাষায় বহুদলীয় সরকার বলেন – তাদের বিবেকের দংশন কি সোহরাওয়ার্দি, ভাসানি, বঙ্গবন্ধু , তাজউদ্দিনের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে-না। বলতে সমস্যা কোথায় – চলমান মহাজোট সরকারের পরিশোধিত রুপের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। রাশেদ খান মেনন যখন একই মন্ত্রীসভায় স্বৈরাচার এরশাদের মনোনিত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশ(!) নির্ধারণ করবেন , নুর হোসেনের আত্নার করুণ আহাজারি এ প্রহসন কে আরো পলাশীময় করে তুলবে।

সংলাপ আয়োজন নিয়েই যেখানে অনেক মিথ্যাচার হচ্ছে সেখানে পরবর্তীতে গঠনমূলক আলোচনা ও ফল আসা করাটা এ মুহুর্তে অমাবস্যার চাঁদ। তাইতো মহাসচিব-সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের আলোচনা থেকে ভাল কিছু আশা করতে হলে অতিমাত্রায় আশাবাদি হতে হবে। তারপর ও একটু আশাবাদি হওয়ার কারণ  হচ্ছে – এ প্রথম দু দলের দু দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছেন আর তা গোপন করতে চাচ্ছেন। এটি ভাল লক্ষণ, প্রথমত-  এতে সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি বলে ক্যামেরা দেখানো আড়ম্বর নেয় আর দ্বিতীয়ত- যেহেতু সরকারী দলের সাধারণ সম্পাদক বিরোধী দলের কতিপয় সাংসদের বাসায় আলাপ করতে গেছে বলে খবরে প্রকাশ, তাতে সরকারের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা কিঞ্চিৎ থাকতে পারে বৈকি।

সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দেশের অস্থির এ সময়ে। বহুল প্রচলিত দৈনিক প্রথম আলো সংবিধান বিশ্লেষণের ধারাবাহিক লিখনীতে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোকে স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে তুলনা করে নীতিহীন বলেছেন। ইত্তেফাক তাদের জরিপে আওয়ামিলীগের জনপ্রিয়তা  বেশি বলে খবর ছাপানোর কিছুদিনের মধ্যে আনোয়ার হোসেনকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করে পুরুস্কৃত করা হয়েছে। আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা  নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে শংকা প্রকাশ করে সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের আশংকা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের নানাবিধ চাপে পড়তে পারে যদি উদ্ভূত পরিস্থিতির উন্নতি না হয়। রিপোর্টটিতে চলমান সংকটের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দায়ি করা হয়েছে এবং বিচার ব্যবস্থার স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়েছে।

সরকার আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে তাদের নিজেদের মত হিসেব করে রেখেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে দীপু মনিকে সরিয়ে অভিজ্ঞ ডিপ্লোম্যাট মাহমুদ আলিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে ভারত-চীন কে সামলে যুক্তরাষ্ট্র কে মানিয়ে চলতে কতটুকু পারদর্শিতার পরিচয় এ ক্ষণকায় সরকার দিবে তা বুঝতে হলে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। টিকফা চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার সন্তুষ্টি অর্জন কতটুকু সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথাটি হল – যদি চলমান সরকারটি সত্যিকার অর্থেই নির্বাচনকালীন সরকার ই হয়, তাহলে যেকোন ধরণের চুক্তি সাক্ষর সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের আওতার মধ্যে পড়ে যার একতিয়ার নিয়ে সংবিধানে প্রশ্ন উঠতে পারে। রোববার থেকে নব্য সরকারের মন্ত্রীরা দাফতরিক অফিস করা শুরু করেছেন । একইদিন  অর্থমন্ত্রী নিজের আকর্ষিত ভঙ্গিমায় দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন – নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যসূচী শুরু হবে নির্বাচন কমিশনের তফসির ঘোষণার মধ্য দিয়ে। যদি তাই হয়- তবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত নতুন মন্ত্রীদের দাফতরিক কার্যক্রমকে নির্বাচন কালীন সরকারের অংশ নাকি মহাজোট সরকারের কার্যক্রম বলা যাবে তার ব্যখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। পাছে বেশি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবার স্টুপিড বলে বসেন। অর্থমন্ত্রীর এ ব্যখ্যার মধ্য দিয়ে টিকফা চুক্তি  সম্পাদনের জন্য নির্বাচন কালীন সরকারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর এড়ানোর খেয়াল আছে হয়ত। সত্যিই স্টুপিড জনগণ।

সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলছে যে বিষয়টি – তা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সমণ্বয়হীনতা ও অসামাঞ্জস্যতা। এখনো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছাড়া আস্থা অর্জনের মত কোন কিছু এ কমিশন করে দেখাতে পারেনি। উল্টো ধোঁয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে অনেক মৌলিক বিষয় নিয়ে। এর আগে কমিশনার জাভেদ আলি বিএনপির সঙ্গে আলোচনা এগুচ্ছে বলে বিরাগভাজন হয়েছেন নিজেদের মধ্যে। অতিরিক্ত সরকার তোয়াজ ও মিডিয়ায় অপ্রিয় কথা বলাকে কেন্দ্র করে অধুনা কমিশনারদের মধ্যে মনস্তাত্বিক বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে বলে সংবাদ এসেছে। নাটকীয় এ সরকারের সব কার্যসূচীর বাইরে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছে শান্তিকামী মানুষ।

সংকটময় এ পরিস্থিতির সুস্থ সমাধানের স্বপ্ন সফলময় নাকি অঙ্কুরে বিনষ্ট হবে তা নিশ্চিত করবে শক্তিশালী দন্ত্যস ‘সময়’।

একমাত্র সময় ই বলে দিবে আমাদের আগামির পথচলা। রাজনীতিবিদ দের এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা – একমাত্র সময় ই  তাদের  উচ্চাসনে বসায় অথবা আস্তাখুড়ে নিক্ষেপ করে। পলাশির প্রান্তরের মীর জাফর কে যেমন আমরা ঘৃনাভরে স্নরণ করি একইভাবে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্নরণ করি স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু, ভাসানি, শহীদ জিয়াসহ মহান দেশপ্রেমিক নায়কদের। অনেক নিন্দা, সীমাবদ্ধতার পর ও আমরা বীরদের স্নরণ করি কারণ দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারা নিজেদের ব্যক্তিসার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের মানুষের সার্থে নিজেদের আত্ননিবেদিত করেছিল।

সময়ের একফোড় শেষ হওয়ার আগেই সজাগ হতে হবে আমাদের রাজনীতিবিদদের অন্যথায় ওয়ান-ইলেভেনের মত অসময় এসে গেলে সংকটের নতুন মাত্রা যোগ হবে।

Read Full Post »

ফুটবলে ইনজুরি টাইম কিংবা ক্রিকেটে স্লগ ওভারে যখন খেলা গড়ায় তখন মাঠে থাকা খেলোয়াড়েরা এমনকি সংশ্লিষ্ট সাপোর্টার রা নিয়ম কানন মেনে চলা, সহনশীলতা প্রদর্শনের চেয়ে নিজেদের লক্ষ্যে পৌছুতে উদগ্রীব থাকে বেশি। বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট এখন ইনজুরি টাইম কিংবা স্লগ ওভারে গড়িয়েছে। স্নায়ুচাপে ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত ফাউল করা অথবা স্ট্যাম্প ছেড়ে রিস্ক নিয়ে সজোরে ব্যাট চালানোর মতই ঘটনা প্রবাহ চলমান বর্তমান সময়ের এ সংকটময় মুহুর্তে।

 

ইনজুরি সময় শুরু হয়েছে মূলত ২৭শে অক্টোবর যেদিন থেকে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। উদ্দেশ্যহীন ফোনালাপ ও বিএনপি সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকারের স্নায়ুচাপের যে বাউন্স বলগুলি ছিল, বিরোধী দল তা ঠেকিয়েছে হরতাল ও বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে। আপাত ফলাফল কয়েকটি অকাল মৃত্যু ও নাগরিক জীবনে তীব্র দুর্ভোগ। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াকু মানুষগুলির মাঝে যখন ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দেখানো কিছু দায়িত্বশীল(!) ব্যক্তির বিবেক পুনর্জীবিত হয়, তখন অনেকেই রাজনীতির ঘূর্ণিয়মান সংকটে নিজেদের ভাগ্য সঁপে দেয় মনের অজান্তে। কি আর করা,  আমাদের কপালটাই এরকম – এ টাইপ। আর আমাদের দায়িত্বশীলতাই এরকম যে, হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ মৃত্যুশয্যায় রোগী দেখা শেষ করে ‘মিট দ্য প্রেস’ স্টাইলে বিপক্ষ দলের মনুষ্যত্বের জাত  নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাহবা নেয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম খেটে খাওয়া সাধারণ সিএনজি চালক কিংবা একজন দোকান কর্মচারী যখন অন্নের তাড়নায় বাইরে বের হয় আর ভাগ্যের নির্মমতাকে বরণ করে অগ্নিদগ্ধ হয়, তখন স্বজনদের অশ্রুর প্রতিটি কণায় ধিক্কার জন্মে আমাদের দেশের  গতানুগতিক রাজনীতির প্রভাবকদের প্রতি। এ অশ্রু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাক করানো নয়। এ অশ্রু সদ্য বিধবা হওয়া কোন রমণীর কিংবা পিতা হারানো অবুঝ কোন নির্বাক শিশুর।

 

অপরদিকে ক্যামেরার ফ্ল্যাশে চাকচিক্যময় হয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে আশির্বাদ নেওয়া কতিপয় মন্ত্রীদের পদত্যাগ পত্র প্রদানের পর্ব।  পূর্ব ঘোষণা দিয়ে তারিখ বিহীন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র পেশ হীরক রাজার দেশের উপাখ্যান হয়ে দাঁড়ায় যেন। অতঃপর নিজ নিজ দাপ্তরিক কাজ বহাল তাগিয়দে চালিয়ে যাওয়া এবং দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের স্ববিরোধী যুক্তি উপস্থাপন কে ছাপিয়ে উঠেছে সংবিধানের প্রকৃত বিশ্লেষণ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেখানে তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি বারবার প্রত্যাখ্যিত হয় সরকারের কাছ হতে, সেই সরকার পদত্যাগ নাটকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপন করার যে প্রেক্ষাপট সাজিয়েছে তাতে সংবিধানের তাৎপর্য্য নাকি সুবিধাপ্রাপ্তির হাতিয়ার, এ প্রশ্ন সাধারণ আম জনতার জাগতেই পারে বৈকি। স্লগ ওভারে এ ধরণের ঘটনাপ্রবাহ স্নায়ুচাপের ফল হিসেবেই গণ্য হতে পারে।

 

সতের তারিখ সহিংস রাজনীতির এ সময়ে মোটামুটি অন্যরকম একটি দিন। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের খালাস হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের আনন্দ মিছিল ছিল গত পাঁচ বছরের আদালত প্রাঙ্গনের বিপরীতে অন্য ধরণের এক চিত্র।  একই দিন পাঁচ বিএনপি নেতার রিমান্ড স্থগিত হওয়াটা ও ব্যতিক্রম এবং আকর্ষিত, চমকানো ছিল শান্তিকামী আশাবাদি জনগণের। তৃতীয় নয়নে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে – মার্কিন প্রতিমন্ত্রী নিশা দেশাই কে উপহার নয়তো? নাকি কথিত সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের নিমিত্তে সামান্য উপঢৌকন।

 

অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনীতির বহুমাত্রিক সেলিব্রিটি হু মো এরশাদ নিজেকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন  নিজের কথার মাত্রাতিরিক্ত বরখেলাপ করে। একদিকে – গত পাঁচ বছরে নিজ ভাইকে মন্ত্রীসভায় রেখে সরকারের প্রভাবকে ব্যবহার করা, ব্যাংক নিজ নামে অনুমোদন নেওয়া , অন্যদিকে মাঝে মধ্যে সরকারের চড়কদার সমালোচনা করে নিজেকে জিহাদি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে জাহির করেছেন। আর আমাদের দেশের মিডিয়া কিংবা বিশ্বাসী জনতা বার বার তার কথায় দুকানে দুরকম শুনে উত্তর – দক্ষিণ মেরুতে তাকে দুলিয়েছেন। শেষমেষ খোলস ছেড়ে – সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের সিদ্বান্ত নিয়ে এরশাদ  মুহুর্তের যে ভেলকি দেখিয়েছেন, তা তারই স্ব-উপলদ্ধি বেইমান হওয়ার আশংকা কে ফ্যাক্টে পরিণত করেছে।  পদুয়া কামরুল হাসানের বিখ্যাত বিশ্ব বেহায়া পোট্রেটের কথা এ প্রজন্ম না জানলে ও নতুনভাবে জানার উপলক্ষ্য তো অন্তত হল।

 

কূটনীতিক পাড়ায় চামচের ঝনঝন শব্দের প্রতিধধনি  বেড়ে গিয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মজিনার বাসায় বিএনপি-আ লীগ – জামায়াত প্রতিনিধি যখন ঝলমলে আলোতে ডিনার করে তখন সেই ডিনারে চামচের আওয়াজে বিভিন্ন ব্যখ্যার সুরধধনি শ্রবিত হয়। সমঝোতার সুরালয়ে এ সুরধধনি থেকে শ্রুতিমধুর সঙ্গীত নিঃসৃত হলে তা হবে ষোল কোটি মানুষের জন্য বাড়তি পাওনা।  ভারত-আমেরিকা যৌথ উদ্যোগে আমাদের দেশের রাজনীতির সংকট নিরসনে সপ্রণোদিত হয়ে সমাধানের যে মেডিসিন বানাচ্ছেন তার কার্যকরিতা এখনো বুঝা যাচ্ছেনা। তবে অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করার কোন হঠকারী, অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেসক্রিপশন যদি সরকার বিদেশী মহল থেকে পায়, তা হবে সন্নিকটের ধোঁয়াশার নতুন নামান্তর। এ সময়ের অতিথি প্রভাবক নিশা দেশাই এক প্রবন্ধে তো লিখেই ফেলেছেন – বাংলাদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে আসতে পারে দু দলের ব্যর্থতার সুযোগে।

 

আপাতত স্লগ ওভারের সময় কিংবা স্নায়ুচাপ এখন ই শেষ হচ্ছেনা। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কদিন। দেখা যাক – শেষ কথা বলে কিছু না থাকা রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকে ইনজুরি টাইমের শেষ বাঁশিটি সন্তোষজনক হয় কিনা।

 

বিঃদ্রঃ– গত সতের তারিখ ছিল মজলুম জনতা মাওলানা ভাসানির ৩৭ তম মৃত্যুদিবস। আজীবন সংগ্রামী এ কালজয়ী  রাজনীতিবিদ আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে নিঃসার্থভাবে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে কাজ করে যেতে হয়। উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর মাওলানা ভাসানি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন এ দেশের মাটি, নিপীড়িত মানুষের জন্য। ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ও ফারাক্কা লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন মজলুম এই জননেতা।  আজকের বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় অনেক রাজনীতিবিদের আদর্শিক গুরু মাওলানা ভাসানি। মুল্যবোধের রাজনীতির অভাব পূরণে ভাসানির দেখানো পথে এ সময়ের রাজনীতি আলোকিত হোক।

 

Read Full Post »

উত্তপ্ত রাজনীতির এ সময়ে প্রতি মুহুর্তে পরিস্থিতি যতই প্রত্যাশার বিপরীতে বদলে যাচ্ছে  এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ততই আশাহত হচ্ছে। হতাশার শেষ কৌণিক বিন্দুতে লুকোয়িত থাকা আশার শেষ বিন্দুটি ও ধোঁয়াশা প্রায়। গত দু সপ্তায় আমরা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখলাম প্রহসন ও প্রতিহিংসার রাজনীতি যার ফলাফল কেবল  সহিংসতা আর গণগ্রেফতারই শুধু নয় এর ফলে অর্থনীতির মন্দাবস্থার ভয়াবহ পরিণতি সন্নিকটে। উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে ঘাত-প্রতিঘাত-সংঘাত, আশার ব্যপ্তহীনতা কমবেশি থাকবে তা অস্বাভাবিক নয়, তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটা আবশ্যক। এশিয়ার উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশগুলো এ লক্ষ্য অনেকাংশেই অর্জন করেছে কিংবা করছে। যে দেশের মানুষ শান্তিতে নোবেল পুরুস্কার পায় সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কোন্দলের কারণে আমাদের চরিত্রে অশান্তির ছায়া আচ্ছাদিত হয়, ব্যপারটা কেমন যেন আমাদের সঙ্গে যায় না, যাওয়া উচিত না।  

 

সর্বিশেষ দু নেত্রীর সংলাপ নাটককে প্রহসন ব্যখ্যা দেওয়া যায়। পুরো বিশ্ব শুনল বাংলাদেশের গত দুদশকের নেতৃত্বে থাকা দু নেত্রীর অপ্রাসঙ্গিক আলাপ অথবা  ঘ্যানর ঘ্যানর , সোজা বাংলায় যাকে ঝগড়ার প্রারম্ভিকতা বলা যায়। একজন মূল প্রসঙ্গের বাইরে অন্য ইস্যু (তা যতই গুরুত্বপুর্ণ হোক)  তুলে উস্কে দিয়েছেন, আর দ্বিতীয়জন তার জবাব দিয়েছেন। দাওয়াতের ধরণটিই এমন যে আটাশ তারিখেই যেতে হবে অন্য কোন দিনগ্রহণ যোগ্য নয়।  আর অন্যজনের ও যে হরতাল তুলে নিলে আপোশহীন উপমা প্রশ্নবিদ্দ্ব হবে।  দু দলের অন্ধ সমর্থকরা তাদের স্ব স্ব নেত্রী ফোনালাপে জয়ী হয়েছেন বলে দম্ভোক্তি করলে ও মূলত এ ব্যর্থ ফোনালাপের মাধ্যমে হেরে গিয়েছে এ দেশের ষোল কোটি মানুষ। আশাহত হয়েছে এ দেশের এক কোটি প্রবাসী যাদের কষ্টার্জিত শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত রেমিট্যান্সের উপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াচ্ছে প্রিয় এ স্বদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলীয় নেত্রীকে পরচুলা পড়ে বলে ব্যক্তিগত খোঁচা দেন , তখন রুপক অর্থে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের পরচুলা রুপই যেন উন্মোচিত হয়। দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা খুব রসিকতাময় নিউজ করে – ফোনালাপ টি দুজন বিবাহিত মহিলার স্রেফ ঝগড়া ছাড়া কিছু নয়। পত্রিকাটি আমাদের গণতন্ত্রকে পুতুল নাচের সঙ্গে তুলনা করে।  হতে পারত এ ফোনালাপটি বিশ্ব রাজনীতির জন্যই শিক্ষনীয় যেখানে থাকত রাষ্ট্রনায়কোচিত ও নেতৃত্বের যুক্তি তর্ক। অথচ একজনের পিতা ও অন্যজনের স্বামী এ দেশের রাজনীতির ধারাবাহিকতা কে সুসংহত করে অনেক দেশের সামনে নিজেদের পরামর্শদাতা ক্যাটাগরিতে নিজেদের নিয়ে গিয়েছিলেন।  

 

ব্যর্থ এ ফোনালাপের পর ও আশা মরে যায় নি। সেমিনার – মিটিং য়ে দু দলের পজিটিভ কিছু নেতাদের মন্তব্যে মনে হচ্ছিল ব্যাকডোর সংলাপ মনে হয় চলছে। যখন বিএনপি ঘোষণা দেয় তারা নিঃশর্ত সংলাপে রাজি ( যদি ও তারা হরতালের সংস্কৃতি থেকে বেরুতে প্রস্তুত নয়) তখন মনে ধারণা জন্মে ভাল কিছু একটা হলে ও হতে পারে।  কিন্তু হঠাৎ  করে বিএনপির পাঁচ জন থিঙ্ক ট্যাংক কে গ্রেফতার করাটা শাসকের স্বরুপ উন্মোচন করে যেন। সরকার থেকে দেওয়া ব্যখ্যাটা ও মূলত শিশুসুলভ কিংবা অযৌক্তিক। কারণ তাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সহিংসতা আরো বেড়েছে, বিরোধী দল হরতাল প্রসারিত করার নতুন উপলক্ষ পেয়েছে, নেতাদের আঞ্চলিক জনপ্রিয়তার উপর ভেদ করে বিভিদ অঞ্ছলে অবরোধ, হরতাল আরো প্রসারিত হচ্ছে এবং জন মনে উদ্ভিগ্নতা বাড়ছে। সরকারের নীতি নির্ধারকরা যদি বিএনপি র কর্ম কৌশল কিংবা ইতিহাস কে অ্যানালাইসিস  করে ভালভাবে, তাদের বুঝা উচিত দলটিতে পিউর পলিটিসিয়ান কম কিংবা পেশাজীবি বেশি থাকলে ও দলটির নেতৃত্ব অনেক পোড় খাওয়া। এ দলটি এরশাদ আমলে নির্বাচনে না গিয়ে স্বৈরাচার পতনে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছিল আর ওয়ান ইলেভেনের পর শত কূটনীতিতে ও দলটি অবিভিক্ত জনপ্রিয়তায় ফিরে এসেছে। মূলত ২০০৯ সাল থেকে বিএনপি ভেঙ্গে পড়া জনপ্রিয়তাকে ক্রমাগত বাড়িয়েছে যার প্রমাণ সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচন আর কিছু জরিপে পাওয়া যায়। এ অবস্থায় এ দলের উপরসারির নেতাদের গ্রেফতার দলটির জনপ্রিয়তাকে আরো বাড়িয়ে দিবে। ছোট একটি উদাহরন- শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির মধ্যম সারির নেতা, কিন্তু তার গ্রেফতারকে ইস্যু করে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দেওয়া উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা তার ব্যক্তি জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে অন্তত আমাদের দেশের রাজনীতির সংস্কৃতির আলোকে।  আওয়ামিলীগের মত পুরনো এবং ঝানু সরকারী দল কেন এসব পুরনো শামুকে পা কাটছেন তা বোধগম্য নয়। অতীতে ছিয়ানব্বইর পনের ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন পরবর্তী প্রেক্ষাপটগুলিকে খতিয়ে দেখতে পারে সরকারি দল, যাতে তারা বোধগম্য হয়  বিরোধী দল বিহীন নির্বাচনের এফেক্ট নিয়ে।  

 

অবস্থার প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে প্রহসনের এক নির্বাচন।  নির্বাচনকালীন নব্বই দিনের ফ্রেমে চলে আসা সাম্প্রতিক এ সময়ে নির্বাচন কমিশনার কদিন পর পর সাংবাদিক দের ডেকে বিশেষ এক দলের নিবন্ধন বাতিল কিংবা বিশেষিত অন্য এক নব দলের নিবন্ধন অন্তর্ভুক্তির সংবাদ শুনালেও প্রশাসনের পরিবর্তন কিংবা পরিবেশ নিয়ে জনমনে আস্থা আসার মত কোন মন্তব্য করছেনা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ট্যালেন্ট হত্যাযজ্ঞ বিডিআর ষড়যন্ত্রের বিচারের রায় হল গেল সপ্তায়। সামরিক অফিসার হত্যার এ রায়ে আর্মিতে সরকারের  প্রতি আস্থা বেড়েছে ধারণা করা গেলে ও সিএনএন এর এক ব্লগে পাঠকের লিখা এক তথ্যের উপর ভিক্তি করে সরকারী প্রভাবশালী মন্ত্রীরা যখন সিএনএন ছেপেছে বলে বক্তব্য দেয়, তখন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে এ ইস্যুটি ও রাজনীতিকরণের আওতায় আসছে কিনা।

 

গত দশ নভেম্বর ছিল নূর হোসেন দিবস। “বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়” খ্যাত এ যুবক নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে সাতাশি সালে যে গণতন্ত্রের মুক্তির চেতনার জন্ম দিয়েছিল আজ ছাব্বিশ বছর পর ও আমরা সে গণতন্ত্রের কতটুকু কাছাকাছি আসতে পেরেছি।  অথচ এ গণতন্ত্রের জন্যই আমাদের বর্তমান দু নেত্রী পাশাপাশি এসেছিলেন , একই সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন। এ মুহুর্তে তাদের মধ্যে যোজন বিযোজন দূরত্ব কাটাতে পারে তাদের দুজনের উপদেষ্টা কিংবা পরামর্শদাতারা। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদটি অন্তত নির্দলীয় নিশ্চিত হলেই মনে হয় পরিস্থিতির উন্নতি হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি – ষোল কোটি মানুষের আর্তনাদ কি শুনছেন না?  প্রতিহিংসাময় রাজনীতির এ প্রহসনময় সাম্প্রতিক ঘটনা আবহে ভাল কিছুর প্রতীক্ষায়  থাকাটাই একমাত্র ভেলা।

 

ভাল থাকুন। নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে রাখুন। 

Read Full Post »