Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘দুর্নীতি’ Category

দুর্নীতি নিয়ে কথার তীর, অভিযোগ – পাল্টা অভিযোগ এখন আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ্ব নেয়। বিগত এক দশক ধরে আমরা খেয়াল করেছি দেশী মিডিয়া, আদালতের রায়, দুদকের মতামত, এসব দুর্নীতি পর্যবেক্ষন কেন যেন আমাদের মনে আস্থা সৃষ্টি করতে পারছেনা। বিদেশের মিডিয়া, বিদেশের বিশেষ কোন সংস্থা প্রতিবেদন করলেই আমাদের চোখ ছানা বড়া  হয়ে যায়। মজার ব্যপার হচ্ছে , এ বিষয়টি নিয়ে দেশের বৃহৎ দু দলই অভিযোগ করে আর অভিযুক্ত হয়। এক ট্রান্সপেরেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির র‍্যাঙ্কিং যেদিন প্রকাশিত হয় সেদিন বিরোধী দল যেন তুরুপের তাস পেয়ে বসে সরকারকে চেপে ধরার। সরকার ই বা চুপ করে বসে থাকবে কেন। তাদের যুক্তি, আগে নীচের দিক থেকে এক ছিলাম এখন দু কিংবা তিন। বিষয়টা এমন – তুমি যখন গোল রক্ষক তখন খেয়েছিলে তিনগোল আর আমি খেয়েছি দু গোল , তাই আমি ভাল। কিন্তু দু জনই যে হেরে যাচ্ছে তাতে মনে হয়না কারো মাথাব্যথা আছে।
পদ্মা সেতু ইস্যুতে হাসান – হোসেনের দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে কানাডা পুলিশ অভিযুক্ত করল বিগত (৯৬ – ২০০১) আওয়ামি সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসানকে। আর এতে মনে হল আমাদের অর্থমন্ত্রী হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ভাগ্যিস- হোসেনের নাম তো আসেনি। যেহেতু হোসেনের নাম আসেনি আর হাসান তো আওয়ামিলীগ ছেড়ে পিডিবি তে গিয়েছেন আগেই, সেহেতু নিজেদের বিজয় দাবি করছেন সরকারি মহল। দুর্নীতি কমিশন ও সন্তুষ্টি জানিয়েছেন কানাডার এ রায়ে। অভিযুক্ত কেভিন ওয়ালেস দুদকের তালিকায় আগে থেকেই ছিলেন বলে নিজেদের দুর্নীতি পর্যবেক্ষনের বিচক্ষণতা নিয়ে আত্ন প্রশংসা করলেন দুদক কর্মকর্তারা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক জালিয়াতি হলমার্ক ইস্যুতে দুদকের প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। হলমার্কের এমডি আটককৃত তানভীর স্বীকারুক্তিতে ১৬৪ ধারায় পরিচালনা পরিষদের কতিপয় সদস্যের নাম আনলে ও তা আমলে নেয়নি দুদক। অভিযুক্ত তালিকায় আনা হয়নি তখনকার পরিচালনা পরিষদের কারো নাম। পাছে দুর্নীতির অভিযোগে কতিপয় অভিযুক্তের দোষে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।  এ কারণেই হয়ত আওয়ামিলীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ দম্ভোক্তি করেন , “কানাডার রায় প্রমাণ করেছে দুর্নীতিতে সরকারী দলের কেউ জড়িত নেয়”।

তবে পাবলিকের মনে গেঁথে যাওয়া রেলের কালোবিড়াল, শেয়ার বাজার জালিয়াতি, হলমার্ক কেলেংকারি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ইস্যুতে অভিযুক্ত আবুল হোসেনের দেশপ্রেমিক বনে যাওয়া সহ নানা ইস্যুতে ক্ষত তো থেকেই গেল।

 

শুধু কি বড় বড় দুর্নীতি! সরকারের নানা সদিচ্ছা যেখানে জেলা প্রশাসন সহ সরকারি অনেক নথির ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা চালু হয়েছে , এসবের পর ও কতিপয় নিজেদের প্রভাবশালী নেতা দাবি করা হর্তা-কর্তারা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন, এমন কি আমলাদের প্রভাবিত করার পাঁয়তারা করেন আর ভুক্তভোগীদের মিথ্যে আশ্বাস দেন – এসব কে দুর্নীতির কোন স্তরে রাখা হয় তা জনগণ জানে। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে তাইতো এসব কম বেশি দুর্নীতির বিচার হয়েছে মানুষের বিবেকের ধিক্কারে। আপাতত ব্যালেট বাক্সকেই এ বিবেক ধরা হয়। নব্বইএর পর আমাদের দেশের ইতিহাস ও তো তাই বলে।

ইন্টারনেট থেকে পাওয়া একটি গল্প শেয়ার করে ইতি টানছি আজ এখানেই।

 

কনফারেন্স শেষে তিন আমলার দেখা হয়েছে কোন এক রেস্টুরেণ্টে। একজন চীনের, অপরজন ভারতীয় ও অন্যজন আফ্রিকান। তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে বিগত এক দশক ধরে পূর্ব পরিচিত। আড্ডার এক পর্যায়ে তিনজন ই উপলদ্ধি করল তাদের দেখা হয় প্রতিবছর জাতিসংঘের কনফারেন্সে। প্রতিবছর এভাবে দেখা হতে হতে তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আপনজন। তো এবার তারা সিদ্ধান্ত নিল তারা পালাক্রমে প্রতি কনফারেন্সের পর প্রত্যেকের বাড়িতে কটা দিন ছুটি কাটাবেন ও আয়েশ করবেন।

প্রথমেই গেলেন চীনা কূটনীতিবিদের বাড়ি। বেইজিং এয়ারপোর্ট থেকে আরেক ফ্লাইটে কোন এক প্রদেশে গিয়ে ছ লেনের এক রাস্তার শেষ প্রান্তে বিশাল এক জমিদার বাড়ি চীনা কূটনীতিকের। “চমৎকার বাড়ি বানিয়েছ বন্ধু। সরকারি চাকরি করে ও কিভাবে বানালে তুমি?” কৌতুহলী জিজ্ঞাসা আফ্রিকান কূটনীতিবিদের।

“তোমরা কি খেয়াল করেছ যে ছয় লেনের নতুন হাইওয়ে যেটি দিয়ে আমরা এসেছি। ও হাইওয়ের জন্য বরাদ্ধকৃত বাজেটের অল্প কিছু টাকা দিয়ে আমি এ অট্টালিকা বাড়ি বানিয়েছি।“  — চীনা ভদ্রলোকের জবাব।

ভারতীয় ও আফ্রিকান ভদ্রলোক শুনে অবিভূত হলেন ও পরের কদিন ফুর্তি ও আরামে কাটিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন পরের কনফারেন্সের পর যাবেন ভারতীয় কূটনীতিবিদের বাড়ি।

একবছর কেটে গেল। কনফারেন্সের পর পরিকল্পনানুযায়ী দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকে আরেকটি বিমানে আসলেন ভারতের এক প্রদেশে। ওখান থেকে সরু, জীর্ণ এক রাস্তা দিয়ে ঝাঁকুনি খেতে খেতে এসে পৌছালেন প্রাসাদসম এক বাড়ির আঙ্গিনায়। হ্যা, এটি ভারতীয় ভদ্রলোকের বাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই চীনা কূটনীতিবিদ চমকিত হলেন , “এত বড় বাড়ি করতে এত অর্থ পেলে কেমনে?” ।

ভারতীয় ভদ্রলোকের সহজ জবাব , “ আমরা আসার সময় যে রাস্তা দিয়ে এসেছি তার বাজেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে এ বাড়ি করেছি আমি”।

একবছর পর পালাক্রমে কনফারেন্স শেষে এবার তিন বন্ধু মিলে গেলেন আফ্রিকায়। বিমানবন্দর থেকে তারা নামলেন আফ্রিকার জঙ্গলের মধ্যে আরেক এয়ারপোর্টে। ওখান থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে মিলিটারি গার্ড বেস্টিত এক বিশাল প্রাসাদ বাড়িতে এসে পৌছালেন তারা। চীনা ও ভারতীয় কূটনীতিবিদ খেয়াল করে দেখল দু চোখের দৃষ্টি  সীমায় খালি জঙ্গল আর জঙ্গল। দুআমলা ই ভীষণ অবাক হল আর জানতে উদগ্রীব হল কিভাবে তাদের আফ্রিকান বন্ধু এ গহীন অরণ্যে স্বপ্নের মত এ আবাসভূমি করল।

“তোমরা কি আসার সময় কোন হাইওয়ে দেখেছ? “ প্রশ্নের মধ্যেই জবাব আফ্রিকান আমলার।

Read Full Post »