Feeds:
Posts
Comments

Archive for March, 2016

গেল সপ্তাহে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ  নির্বাচনের প্রথম কয়েকটি  ধাপ সম্পন্ন হল। নানা দিক দিয়ে এবারের ইউপি নির্বাচন ব্যতিক্রমী, আলোচিত ও সমালোচিত। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে বাংলাদেশে এবারই প্রথম ইউ পি নির্বাচন  হচ্ছে।

 

গত ১৯ মার্চ, বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় না দেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন। নিজ উঠানে কবর খুঁড়ে কাফনের কাপড় পড়ে তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন  ওই বিদ্রোহী প্রার্থী।  পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে উঠিয়ে সোজা কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। কবরবাসের চেয়ে কারাবাস উত্তম। এই ঘটনাটি হাস্যরস -বেদনাত্নক হলেও সমগ্র দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতন্ত্রের সমন্বয়য়ের যেন রুপক শিল্পায়ন এটি।

 

নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রথম দুদিনেই নির্বাচনী ঝড়ে (সহিংসতায়) প্রাণ হারিয়েছে বাইশ জন। বরিশালের মুলাদী উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে কেবল নিজের কবর নিজেই খুঁড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কবর খুঁড়তে হয়েছে বাইশটি। ভোট চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হাজারের উপর। তাদের অনেকেই হাঁসপাতালে হাঁসফাঁস করছেন, কাতরাচ্ছেন। নার্স, ডাক্তার তাদের শুশ্রূষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের চলমান নির্বাচন প্রক্রিয়াটি  যে রুগ্ন, অসুস্থ তাতে কোন সন্দেহ নেয়। কিন্তু কার বা কাদের সেবায় সুস্থ হবে এটি? কি বিজিবি মহাপরিচালক নতুবা নির্বাচন কমিশন কেউই এই অসুস্থতার দায় নিতে নারাজ। নির্বাচনী কমিশনার নিশ্চিন্তে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুস্থ হচ্ছে। সহিংসতায় তাদের কোন দায় নেয়।

 

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি  র তেমন মনঃসংযোগ নেয় বললেই চলে। “অংশগ্রহণই মূল কথা “ এই ধারণার উপর অনেকেই লড়ছেন। তাদের ভিতর অভ্যন্তরীণ গনতন্ত্র কতটা আছে তাও প্রশ্নের উদ্রেগ করে। আওয়ামীলীগের বেলায় এ উপমা প্রযোজ্য নয়। এবারের নির্বাচনের দুপ্রান্তেই তাদের অফিসিয়াল আওয়ামিলীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ। এ,বি টিমের এই দ্বন্ধ কখনো মনস্তাত্বিক, কখনো সাংঘর্ষিক। মাঝে মধ্যে এটি সংঘাতে রুপ নিচ্ছে। টাকার অবাধ ব্যবহার নেতাদের পেছন পেছন ঘুরছে, পাছে ‘এ’  টিমের মনোনয়ন পাওয়ার আশায়। পুলিশ আগে থেকেই সরকারি দল হিসেবে কাজ করে। এ নির্বাচনে তারা কখনো এ টিম কখনো বি টিম।

 

এই ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বনাম বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন করে মাথাচারা দিচ্ছে। সম্প্রতি, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নির্বাচন কে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের বিবৃতি, অভিযোগ তাই প্রমাণ দিচ্ছে। রামু উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে মনোনয়ন বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এবারের ইউপি নির্বাচন দশ থেকে বারটি ধাপে সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে দুটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। জয়ী প্রার্থীদের ৮০ শতাংশই আওয়ামিলীগ কিংবা বিদ্রোহী আওয়ামিলীগ। সরকারি দল এতে হয়ত খুশি, তাদের আত্নতৃপ্ত জনপ্রিয়তা দেখে। কিন্তু এ জনপ্রিয়তা কতটা আসল এবং নির্ভেজাল তা ভাবনার বিষয়।

 

অনেক দিক দিয়েই ব্যতিক্রম এবারের নির্বাচন। প্রথমত, ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর একটি প্রশ্নবিদ্ধ্ব (!) নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছে। যে নির্বাচনে অর্ধেকের ও বেশি সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত। এই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত সাংসদরা যখন স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় প্রার্থী মনোনিত  করবেন, তারা তখন কতটা ডেমোক্র্যাটিক থাকবেন, কতটা প্রকৃত নির্বাচনের পথে হাঁটবেন। স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের নিবিড়তাই বা কতটুকু।

 

দ্বিতীয়ত- এবারই প্রথম, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে  বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আগেই অনুমেয় ছিল। আমাদের দেশে  নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক দলীয়করণ। দুর্ভাগ্যবশত, পক্ষপাতদুষ্টতার গুরুতর অভিযোগ আমাদের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও রয়েছে। দলীয় প্রতীকে একটি  অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যে ধরণের শক্ত কমিশন দরকার, তা চলমান নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুপস্থিত।   অতীতে অধিকাংশ প্রার্থীর দলীয় পরিচিতি থাকলেও ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ব্যবহৃত হতো না। তাই নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত দলবাজ কর্মকর্তারাও তাঁদের দলীয় প্রার্থীদের প্রতি একধরনের নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতেন। ফলে  নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হতো। কিন্তু দলভিত্তিক নির্বাচনে দলান্ধ কর্মকর্তারা তাঁদের দল মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গত কয়েক মাস ধরে চলা পৌরসভা, ইউনিয়ন নির্বাচনে এসব অসামঞ্জস্যতা প্রতিফলিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগের সেই উৎসব, কোলাহল, প্রাণচাঞ্চল্য অনেকাংশেই অনুপস্থিত।  দলীয় নির্বাচনের ফলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ক গুলি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে বৈকি!

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনকে একটি বিকৃত ও আস্থাহীন নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি মনোনয়ন বানিজ্যের প্রভাব ও বিস্তৃতি এখন তৃনমূল পর্যায়ে পৌছে গেছে বলে আখ্যা দেন। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্রের কার্যকরিতা কতটুকু থাকে তা নিয়ে ও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

 

পিরোজপুরের কোন এক ইউনিয়নে পছন্দের প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হলে উল্লাস করবেন বলে রং কিনে পকেটে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক মোহাম্মদ কামাল। কিন্তু সেই রঙের বদলে তাঁর হাতে লেগেছে নিজের ভাই বেলালের রক্ত। নির্বাচনে গোলমাল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন তার ভাই। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, ফলাফল ঘোষণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ আছে হাজারো। প্রিজাইডিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রাট রা ও অনেক সময় কিংকর্তব্যবিমূড়, অসহায় হয়ে পড়ছেন।

 

কোন সন্দেহ নেয়, আমাদের গণতন্ত্র এ সময় একটি কঠিন সময় পার করছে।   এই কাঠিন্য থেকে উত্তরিত হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন নির্বাচন নামের খোলসের মধ্যে আটকে গেছে প্রহসন আর বল্প্রয়োগ। যতদিন রাজনীতি থেকে বলপ্রয়োগ ও প্রহসনের বাড়াবাড়ি বিদায় না হবে, তত দিন নির্বাচন কমিশন কে “নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে” এ ধরণের বুলি আওড়াতেই থাকতে হবে। অথচ বাংলার ইতিহাসে বারবার নির্বাচন ও শান্তি সমার্থক  ছিল। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে শেরেবাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি জমিদারদের কংগ্রেস ও অভিজাত্দের মুসলিম লীগকে পরাজিত করে।  বাঙালি মুসলমানের রাজনীতির এই ধারাই ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নামে ভোটবিপ্লব ঘটিয়ে স্বাধীনতার দাবিকে আরো প্রচণ্ড ও অবধারিত করে তোলে।  বৃটিশ ও পাকিস্তানিরা সুষ্ঠু নির্বাচনে ত্রাস হতে পারেনি। শান্তিপুর্ণ নির্বাচন সুস্থ গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত।

 

এখন গণতন্ত্র আছে লিখিত রুপে আর বাগ্নীতায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র নিখোঁজ। নিখোঁজ গণতন্ত্রে নির্বাচন তো নির্বাসিত হবেই।।

Read Full Post »

নিরাপত্তা বলতে আমাদের কাছে সবসময় চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই এসব থেকে নিরাপদ থাকাটাই মূলত প্রাধান্য পায়। যুগের প্রজ্ঞাপনে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে প্রযুক্তি ব্যবহারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক কালে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় আর্থিক লেনদেনের অসামঞ্জস্যতা – ‘আমাদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা নিরাপদ’  এ প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

(১)

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থ হ্যাকিং কিংবা পাচার হওয়ার খবর এখন টক অফ দ্য কাউন্ট্রি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ মানি গায়েব হয়ে যাওয়া যেভাবে প্রশ্নের উদ্রেগ করে এর চেয়ে বেশি উদ্বেলিত হওয়ার বিষয় হচ্ছে এক মাস ধরে এ তথ্যটি অর্থ মন্ত্রনালয়ে গোপন রাখা হয়।

প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট একজন হিসেবে মনে করি, সাইবার নিরাপত্তাহীনতার কারণে্ যে কোন ধরণের হ্যাকিং হওয়া অপ্রত্যাশিত হলে ও অসম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘটনাটিকে স্বাভাবিক হ্যাকিং হিসেবে বিবেচনা না করার নানা্বিধ কারণ আছে। মতান্তরে এটিকে প্রত্যক্ষ জালিয়াতি  হিসেবে ও চিহ্নিত করেছেন অনেকে।

নিউইয়র্কের ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি গেছে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (৮০৮ কোটি টাকা, প্রতি ডলার বিনিময় মূল্য ৮০ টাকা ধরে) । এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জমা হয় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) চারটি হিসাবে। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে কয়েক হাত ঘুরে ওই অর্থের ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৩৬৮ কোটি টাকা) ক্যাসিনোতে গেছে বলে জানিয়েছে সে দেশের বিনোদন কেন্দ্র ও ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট গেমিং করপোরেশন (পিএজিসি) ।

সাধারণত হ্যাকিং করে যখন আর্থিক জালিয়াতি করা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হ্যাকাররা বুদ্ধিভিক্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টার্গেট মাধ্যমের ভঙ্গুর টানেলে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে নেয়। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত না করাটাই মূল কারণ হিসেবে চলে আসে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট কোড (এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের সঙ্কেতলিপি) ব্যবহার করেই এ ধরনের ঘটনা ঘটায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ এই কোডের নির্দেশনাসংবলিত সঙ্কেত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট  কিছু কর্মকর্তাদেরই শুধু জানার কথা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয় ম্যালওয়ার ভাইরাস ইন্সটল করে অর্থ চুরি করা এক প্রকার অসম্ভব কারো প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া।

অনুমান করা যায়, ইন্টারনেটের কোনো একটি পথ দিয়ে তৃতীয় পক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক-ব্যবস্থার প্রতিরোধকগুলো ভেঙে সেখানে ঢুকে যায়। আর সেই নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে সুইফটে ঢুকে পড়ে। কোন পথ দিয়ে এ অনুপ্রবেশ ঘটেছে?, কারো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা আছে কিনা এই অনুপ্রবেশে?

এ ঘটনায় শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বৈকি। ঘটনার তদন্তে দেশী এক্সপার্টদের তোয়াক্কা না করা আরো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একজন লোকাল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম পরিদর্শন করে মতামত দিয়েছেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, রিজার্ভের সুইফট কোডের কম্পিউটার আলাদা ছিল না। এটা সাধারণ কম্পিউটারের সঙ্গেই ছিল। এই কম্পিউটারের আলাদা কোন নিরাপত্তা ছিল না।’। বাইরের কোম্পানির ফরেনসিক রিপোর্ট কি বলছে – দেখা যাক। অনেক প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপাতত ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অন্যতম ভিক্তি হচ্ছে গভর্নেন্স। এক মাস ধরে তথ্য গোপন রাখা কোনভাবেই সুস্থ ম্যানেজমেন্ট হতে পারেনা। দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার সমণ্বয়হীনতা স্পষ্টত দৃশ্যমান। পদত্যাগ কিংবা বহিস্কারের মাধ্যমে গভর্নেন্স কে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে ঠিকই কিন্তু সুস্থ ও আণুবীক্ষণিক তদন্তের ফলাফলের উপরই নির্ভর করছে প্রকৃত রহস্য।

 

 

(২)

ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে একটি বেসরকারী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে বেশ কিছু গ্রাহকের টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রযুক্তির নিরাপত্তার বিষয়টি বেশ হট টপিক হয়ে উঠে।

কয়েকজন বিদেশীর পরিকল্পনায় নকল কার্ড বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম হলে ও আন্তর্জাতিক ভাবে নতুন নয়। মন্দের ভাল হচ্ছে – এর ফলে ব্যাংক গুলি সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করবে আরো।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তাদের কম্পিউটার সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য যে অর্থ খরচ করে তার খুব সামান্য অংশই এই আইটি সিস্টেমের নিরাপত্তার জন্য খরচ হয়। মতান্তরে, মোট আই টি প্রকল্পের ২-৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ থাকে নিরাপত্তার জন্য যেটি হওয়া উচিত ২০-২৫ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক আধুনিক সফটওয়ার, হার্ডওয়ার কেনা হচ্ছে কিন্তু এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছেনা।

 

(৩)

বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন নিয়ে বিতর্ক চলছে গত কয়েক মাস ধরে। বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষের কাছেই রয়েছে অন্তত একটি করে মোবাইল ফোন। বিটিআরসি থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক তথ্যমতে, এবছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১৯ লক্ষ ৫৬ হাজার। তবে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন যাচাই করা নিয়ে বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। মোবাইল অপারেটরদের কাছে আঙ্গুলের ছাপ কেন দিতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রশ্ন তুলে অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, আঙ্গুলের ছাপ অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, কোথাও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে প্রথমে পাকিস্তান। সর্বশেষ সৌদি আরবে ও এ নিয়ম চালুর খবর পাওয়া গেছে। তবে উন্নত কোন দেশ এ প্রযুক্তি দিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন করছেনা।

এক ধরণের অবিশ্বাস জন্ম হয়েছে, আঙ্গুলের ছাপ বেসরকারী কোম্পানি যদি সংরক্ষণ করে এবং এ তথ্য যদি অন্য কোথা ও ছড়িয়ে পড়ে, এ দিয়ে বড়সড় কোন ক্রাইম হওয়া অস্বাভাবিক না। কাউকে আক্রোশ থেকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ও সম্ভাবনা থাকে। কেননা মানুষের আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং ডিএনএ তথ্য একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ।

গত এক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংকের এটিএম জালিয়াতি, বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সহ বেশ কিছু ইস্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাইবার নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অতিআবশ্যক হয়ে উঠেছে। আমেরিকা সহ উন্নত বিশ্বে সাইবার সিকিউরিটির উপর আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে, তারা প্রতি সপ্তাহে প্রেস কনফারেন্স করে আপডেট দেয়। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পেইন করে। যে কেউ সাইবার নিরপত্তার পরামর্শ, সাহায্য পেতে পারে ওখান থেকে। আমাদের দেশে ও সাইবার নিরাপত্তা কে জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু জবাবদিহিতা, দায়িত্ববোধের সমণ্বয়হীনতা সুস্থ গভর্নেন্স কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত।

খেয়াল রাখতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা প্রকল্পে বাস্তবায়নের দিক থেকে আমরা এখনো নবীন। উন্নত বিশ্বের মত বড়সর সাইবার হামলার শিকার এখনো আমরা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, নিজেদের অব্যবস্থাপনা ও অনুসন্ধিৎসু এনালাইসিস করতে না পারার কারণে সাইবার ভঙ্গুরতা সৃষ্টি হচ্ছে। আত্ন সচেতনতা ও দায়িত্বের বন্টন এর মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলেই প্রযুক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।

Read Full Post »