Feeds:
Posts
Comments

Archive for August, 2018

লিখাটি যখন লিখছি, তখন কক্সবাজার সহ সারা দেশের সমুদ্র-তীরবর্তী অঞ্চলগুলিকে তিন নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ঘনঘটায় যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাস সহ ঘুর্ণিঝড় বয়ে যেতে পারে। নতুবা প্রবল বর্ষণে তলিয়ে যেতে পারে শহর সহ গ্রাম-বিল।

আমরা দুর্যোগের ঘনঘটা’র কোনটিই আশা করিনা।

প্রিয় শহর কক্সবাজার অনেক কিছু থেকেই আলাদা। সাগরপাড়ের পর্যটন শহর হিসেবে এখানে দৈনিক হাজার হাজার বহিরাগতের অনুঃপ্রবেশ ঘটে।  এই শহরে রয়েছে অভূতপূর্ব অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সংঘাত নেয় বললেই চলে। রয়েছে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সুস্থ ধারা।

এত ভাল কিছুর পরও এইবার ঈদের ছুটিতে প্রিয় শহরের কিছু নিন্দনীয় দিক চোখে পড়েছে। তন্মোধ্যে অন্যতম- ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়।

বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- স্থাপিত হয়েছে ১৮৮২ সালে। এই স্কুলের পাশ ঘেঁষেই কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বার্মিজ মার্কেট যেখানে বার্মিজদের বিভিন্ন পণ্য সহ শামুক-ঝিনুক, শ্যুটকি সবকিছু পাওয়া যায়। যার সন্ধানে ভিড় করে হাজারো পর্যটক। স্কুলের পাশ ঘেঁষে ড্রেইনে আবর্জনার স্তুপ – দুর্গন্ধে রাস্তায় হাঁটা দুস্কর। অথচ- সরকারি এই স্কুলে শত শিশুরা পাঠক্রমে ব্যস্ত।

পুরো শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন ময়লার স্তুপ পড়ে রয়েছে। এলাকাবাসী ও যেন সয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা জেনেছি, কক্সবাজার পৌরসভায় বর্জ্য অপসারণের জন্য ৩০টি ট্রলি থাকলেও ১০টি বিকল।  ৮টি ট্রাকের ৭টি বিকল। ঠেলাগাড়ি রয়েছে ২৭টি যা অপ্রতুল। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এছাড়া শহর থেকে অনেক দূরে ডাম্পিং স্টেশন। সে কারণে প্রথমে অলিগলির ময়লা-আবর্জনা ট্রান্সফার স্টেশনে রাখা হয়। তাও দখল হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রধান সড়কের পাশেই ময়লার স্তূপ জমানো হয়। পরে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে নেওয়া হয়না। বার্মিজ স্কুলের উত্তর দিকে প্রধান সড়কের ময়লার পাহাড়ের পাশেই যাত্রি ছাউনি যা আবর্জনায় ঢাকা পড়ে আছে। রোহিঙ্গা প্রজেক্টে বেশি বেতনের চাকুরীর লোভে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনার মানব-সংকটের কথা ও শুনা যাচ্ছে। উপরিউক্ত, সবকিছুই সমস্যা আর বাস্তবতা। এসব সমস্যার সমাধানের পথ নিশ্চই আছে।

অথচ, এই শহরে চল্লিশের অধিক স্থানে সিসিটিভি সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। কউক সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছে পুরোদমে। বৃহত্তর কক্সবাজার ঘিরে চলছে অনেক মেগা-প্রজেক্ট। সবকিছুই করা হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কক্সবাজার গড়ার প্রত্যয়ে।

শহরের নতুন মেয়র জনপ্রিয় ও অনেকের আস্থাভাজন। তিনি শীঘ্রই শহরকে আবর্জনামুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। নতুন প্রশাসন নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনে নগর-পরিকল্পনাবিদ কিংবা বিশেষজ্ঞ দের সঙ্গে বসে দূরদর্শী গঠনমুলক উদ্যোগ নিবেন আশা করি।  প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট করে শহরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব-সচেতন করা যেতে পারে।

সম্প্রতি ভারতের কেরালায় শতাব্দির ভয়াবহতম যে বন্যা ঘটে গেছে তা থেকে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে কেরালা শহরে তার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক যাতীয় জিনিসের ড্রেইন দখল করে রাখা। আমাদের শহরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে হলে নাগরিক সচেতনতার দরকার সবচেয়ে বেশি। ডাস্টবিনের বাইরে ড্রেইনে আবর্জনা-প্লাস্টিক ফেলে রাখলে তা নিষ্কাসন ব্যবস্থাকে বাঁধা দেয়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। কথার কথা, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড হয়েছে- ৪ নং ওয়ার্ড। সুস্থ ধারার এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নাগরিক সচেতনতা উৎসাহিত হবে বৈকি।

আমরা যারা রুজি-প্রয়োজনে বাইরে থাকি, তারা সুযোগ পেলেই ব্র্যান্ডিং করি- কক্সবাজার স্বাস্থ্যকর স্থান। আমাদের প্রশ্বাসে এই শহরের বাতাস প্রবিষ্ট হয় প্রতি মুহুর্তে। প্রিয় শহরকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে অন্তত ময়লা-আবর্জনা মুক্ত রাখাটা কঠিন কিছু না। নব-নির্বাচিত পৌরসভা পরিষদ উদ্যোগ নিলেই এ অসম্ভবটি আমাদের আবিষ্টের মধ্যে চলে আসবে। নাগরিক ধর্তব্যের মধ্যেই বিবেচিত হবে- প্রিয় শহরকে আবর্জনামুক্ত রাখার অঙ্গীকার।

Read Full Post »