Feeds:
Posts
Comments

Archive for October, 2013

কোন সন্দেহ নেয় সারা দেশ এখন প্রবল উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সবদিকেই রাজনীতির সমকালীন এ প্যাঁচের প্রভাব পড়ছে।  এ মুহুর্তে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নীচের চারটি সম্ভাবনার যে কোন একটির দিকে যাচ্ছে মূলত।

(১) সরকার – বিরোধী দল পারস্পরিক ছাড়ের মানসিকতায় আলোচনায় বসবে। আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা বেরিয়ে আসবে এবং সর্বোদলীয় নির্বাচনের দিকে দেশ অগ্রসর হবে।

(২) ক্ষমতাসীন দল বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের আয়োজন করবে। সহিংসতা বাড়বে। আঠারো দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করবে আর নির্বাচনোত্তর সরকারের স্থায়িত্ব কতদিন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

(৩) সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকবে। বিরোধী দল রাজপথে অধিকার আদায়ের চেষ্টা করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কে ব্যবহার করে জরুরী অবস্থা জারি হবে। সংকট প্রবলতর হবে।

(৪) অগণতান্ত্রিক শক্তির উন্মোচন হবে যার প্রভাব লংটার্মে খুব সুখকর নয়। আমাদের নিকট অতীতে তা আমরা বারবার দেখেছি।

 

অনস্বীকার্য এবং অত্যাবশ্যকীয় হচ্ছে,  আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রথম সম্ভাবনাটির কার্যকরিতাই সবার প্রত্যাশিত ও আকাঙ্ক্ষিত। উপরিউল্লিখিত চারটি সম্ভাবনা অনেকটা ‘যদি-তবে’ নির্ভর, অর্থাৎ যদি প্রথমটি না হয়, তবে দ্বিতীয়টি। যদি দ্বিতীয়টি না হয়, তবে তৃতীয়টি…এভাবে।

আমি আশাবাদি মানুষ এবং বিশ্বাস করি এ দেশের অধিকাংশ মানুষই তাই। প্রথম সম্ভাবনাটিই আলোচনা করি।

 

ঈদের ছুটির রেশ কাটতে না কাটতেই জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জট খুলার প্রথম প্রয়াস ছিল। ‘এক চুল নড়বনা’ ঘোষণা থেকে সরে এসে বিরোধী দল থেকে মন্ত্রীত্বের লিস্ট চেয়ে প্রস্তাব দিলে ও প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে খোলাসা না করাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি মূলত অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক ঠেকে বিরোধী দলের কাছে । পরবর্তীতে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দেওয়া ৯৬ ও ২০০১ সালের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ৫ জন করে উপদেষ্টা নেওয়ার প্রস্তাবে নির্দলীয় তত্বাবধয়ায়ক সরকারের ছায়া থাকলে ও এর সত্যিকারের কার্যকারিতা নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন উঠে। দু নেত্রীর পাল্টাপাল্টি প্রস্তাবদ্বয় যুক্তি-তর্কে শতভাগ গ্রহণযোগ্য না হলেও জাতির সামনে সমস্যা সমাধানের আলো হয়ে আবির্ভূত হয়।  তবে সবচেয়ে প্রত্যাশিত চমকটি  আসে যখন বিরোধী দল সংসদে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করে। সরকারের তরফ থেকে বারবার আহবান করা হচ্ছিল যাতে বিরোধী দল যে কোন প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় জমির উদ্দিন সরকারের মাধ্যমে যখন প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়, সরকারী দলের তোফায়েল আহমেদ তার বাগ্নীতায় প্রস্তাবটি খন্ডান। পরবর্তীতে এম কে আনোয়ার অনেক সহনশীল এবং গঠনমূলক ভাবে প্রস্তাবটির মূল উদ্দেশ্য সংসদে  তুলে ধরেন এবং ক্যাটাগরিক্যালি সরকার প্রধান নিয়ে বিতর্ক সমাধান হলেই বাকি সদস্য অন্তর্ভুক্তির সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু এর পরেই আওয়ামিলীগ সিনিয়র সদস্য শেখ সেলিম অনেকটা অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাসনামাল টেনে আনলে সরকারের সত্যিকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং বিরোধী দল ওয়াক আউট করে। সংসদীয় তর্কাতর্কি তে সমাধানের পথ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়।

 

২৪অক্টোবর প্রেসক্লাবের সেমিনারে বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া পরের দিন (২৫ অক্টোবর)  থেকে বর্তমান সরকারকে অবৈধ  বললে ও পরের দিন  সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের বিশাল সমাবেশে ২৪শে জানুয়ারির আগের নব্বই দিন হিসেব করে বলেছেন এ সরকার কার্যত ২৭ অক্টোবর থেকে  অবৈধ । এই সমাবেশ থেকেই সাতাশ থেকে উনত্রিশ তারিখ পর্যন্ত ষাট ঘন্টার টানা হরতাল ঘোষিত হয়। যদি ও বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যদি আলোচনার পথ উন্মুক্ত না হয়, তবে এ কর্মসূচী কার্যকর হবে।  সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ  বলাটা নীতিগত না হলেও ধরে নিতে হবে এটি একটি রাজনৈতিক বক্তব্য এবং নেতা কর্মীদের রাজপথে উজ্জীবিত করার মন্ত্র। যদিও বেগম জিয়ার মুখ থেকে দুধরণের সময় লাইন ঘোষণা সচেতন নাগরিকদের চিন্তায় ফেলে দেয় কতটুকু হোমওয়ার্ক করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বিরোধী দল।

 

এর পরের দুদিন ছিল দু নেত্রীর ফোনালাপ নাটক। লাল টেলিফোন, সংযোগ পাওয়া না পাওয়া, শিডিউল সীমাবদ্বতা এবং সত্যিকারের সদিচ্ছা নাকি লোকদেখানো বিবিধ নাটককে পাশ কাটিয়ে ২৬শে অক্টোবর ২০১৩ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্নরণীয় হয়ে থাকবে দু নেত্রীর সাইত্রিশ  মিনিটের কথোপকথনের কারণে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর (জুন ২০১১) মাধ্যমে  যেহেতু এ সমস্যার উদ্ভব, তাই এক আলাপে আড়াই বছর আগে সৃষ্ট এ সমস্যা সমাধান হবেনা। তাইতো আটাশ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর ডিনার কাম আলোচনার আহবানকে রাজনীতিকভাবে মোকাবিলা করে বেগম জিয়া বলেছেন হরতাল শেষে অর্থাৎ উনত্রিশ তারিখের পর যে কোন সময়। প্রশ্ন উঠেছে, কেন খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করলেন না। বস্তুত এ মুহুর্তে বিএনপি র সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সরকার বিরোধী তীব্র জনমত যার সর্বোত্তম ব্যবহার দলটি রাজপথে প্রমাণ করতে চায়। তাইতো ঘোষিত হরতাল কে তুলে নেওয়ার কৌশল দলটি নিতে চায়নি। দলটি হয়ত ভাবছে হরতাল তুলে নিলে সাময়িক বাহবা মিলবে কিন্তু নেতা কর্মীদের চাঙ্গাভাব ঢিলে হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে সরকারী দলের মূল অস্ত্র হচ্ছে সংবিধান। সংশোধিত সংবিধানকে দোহাই দিয়ে তাই ক্ষমতাসীনরা নিজেদের বাগ্নীতার মাধ্যমে বিরোধীদের শানিত করছেন। হরতালের সংঘাত-প্রতিঘাতকে ছাপিয়ে এ মুহুর্তের আন্তরিক প্রতীক্ষা আর আকাংখা হচ্ছে ঊনত্রিশ তারিখের পর দু দল আলোচনায় বসা শুরু করবে আর একটি সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে। সরকার প্রধান কে হবেন এ বিতর্কের অবসান সাত নভেম্বর সংসদের শেষ কার্যদিবসের আগেই হয়ে যাবে আশা করতে পারি।

 

যেহেতু ২৪শে জানুয়ারি এখন নব্বই দিনের ফ্রেমে চলে এসেছে, তাই নির্বাচন কমিশন এখন আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা। সাংবিধানিক ভাবে পুরোপুরি শক্তি না থাকলে ও এ মুহুর্ত থেকে যদি নির্বাচন কমিশন লেবেল প্লে ফিল্ড নিশ্চিত করার কিছু এভিডেন্স দেখাতে পারে তবে তা হবে তাদের আস্থা অর্জনের অন্যতম কারণ। যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার  এখন থেকেই সমালোচিত ডিসি, ইউএনও, এস পি বদলির সুপারিশ করেন সরকারের সর্বোচ্চ মহলে তা হবে সবচেয়ে কার্যকরী। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হলে ও যে নির্বাচন কমিশন কে একই মিশনে কাজ করতে হবে। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত দু দলের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটানো মাঠ পর্যায়ে যাতে ২৪ জানুয়ারীর আগেই নবনির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।

 

আপাতত প্রত্যাশিত মনে তাকিয়ে রয়লাম দুদলের খোলা মনের আলোচনার সম্ভাবনার দিকে। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করে বিশ্ব রাজনীতিতে রুল মডেল হওয়ার এ চান্স মিস করতে আমরা কেন চাইব?

 

Read Full Post »

পূজা, ঈদের ছুটি শেষে চাপা অস্থিরতায় কোনোমতে কর্মস্থলে ফিরেছে ব্যস্ত মানুষ,  মনের গহীনে অস্থিরতা আগত দিনগুলিতে দেশ কোনদিকে যাচ্ছে। ঈদের পর পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, এর পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের সাক্ষাৎ, আওয়ামিলীগ-জাতিয় পার্টির যৌথ সংবাদ সম্মেলন- তাতে বিএনপি নির্বাচনে না এলে ও নির্বাচন করার ঘোষণা,  পরের দিন এরশাদের ইউটার্ণ  ও বিএনপি না এলে জাতিয় পার্টি  নির্বাচন বয়কট করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো, এরপর বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রেস কনফারেন্সে নতুন ফর্মুলা, বিএনপি থেকে আওয়ামিলীগ কে আনুষ্ঠানিক  চিঠি, তদোত্তরে সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব কে আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদকের ফোন তথাপি কূটনীতিবিদদের তৎপরতা; আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে  বহুল প্রত্যাশিত প্রশান্তির বৃষ্টির প্রাক্কালে মেঘের বরফ কণাগুলো জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। গত বাহাত্তর ঘণ্টায় যেভাবে দেশের দু প্রধান দল ব্যপ্তিময়তা দেখাচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা আশার প্রয়াসই খুঁজে পাচ্ছি। নিন্দুকেরা যতই নিন্দা আর হতাশা দেখাক না কেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাকপটু রাজনীতিময় সমসাময়িক এ সময়ে অহিংসতার পথ ছেড়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকেই হাটছে এ দেশের রাজনীতির আগত সময়, অনুধাবনযোগ্য। কার্যত, সহিংসতা আর অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতে দীর্ঘসময় যে দেশ নিরাপদ নয়, তা বড় দুদলের চেয়ে ভাল আর কে বুঝে। আর জনগণের নার্ভ বুঝার ক্ষমতাও দু দলের হর্তাকর্তাদের আছে।

 

কিছুদিন আগে হলে ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ফর্মুলা এখন পুরনো কিন্তু জট খুলার প্রথম প্রয়াস। বিরোধী দল থেকে মন্ত্রীত্বের লিস্ট চেয়ে তিনি  বিএনপি কে নিজেদের নমনীয়তা দেখিয়েছেন আর বুঝিয়েছেন আলোচনার দ্বার উন্মোক্ত হলো। নিন্দুকেরা সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব সমাধানের পথ খুলবেনা। আশাবাদীরা বুঝেছেন এক চুল নাড়াতে পারবেনা বলে ঘোষণা দেওয়া নেত্রী যখন এ ধরণের সমঝোতার ডাক দিয়েছেন, তখন এর মধ্যে আশার দৃপ্তি তো আছেই। তাইতো ট্র্যাডিশনাল ধারায় বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন, ফর্মুলাকে গ্রহণ করেন নি কিন্তু নিজেরা ফর্মুলা দেওয়ার হোম ওয়ার্কে বসেছেন এবং দু দিন পরেই বিরোধী দলীয় নেত্রী অনেকটা তত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নতুন প্যাকেটে নিয়ে এসেছেন আর রাজনীতির মজ্জা বিশ্লেষকদের ঘুম হারাম করেছেন। কারণ এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার প্রয়াসে ৯৬/২০০১ উপদেষ্টাদের জীবিত যারা আছেন তাদের শারীরিক সামর্থ্য আর আগ্রহ নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। প্রধানমন্ত্রী গতানুগতিক ধারায় এ ফর্মুলাকে ব্যাকডেটেড বলে রিজেক্ট করেছেন কিন্তু আগের মত সেই হুঙ্কার অনুপস্থিত।  এসবের মাঝেই গণতন্ত্রের মধুর নির্যাস সুপায়িত হচ্ছে।

 

পঙ্কজ – মজিনা বৈঠক , জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের খবরদারি, দাতা দেশগুলোর মধ্যে প্রাণ আসা সহ নানা কারণে মনে হচ্ছে দেশ সঠিক পথেই এগুচ্ছে। যদি ও, তাত্বিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় একজন সংবাদ সম্মেলন ও অপরজন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নিজ নিজ ফর্মুলা দিলেও কার্যত দুজন তাদের পূর্বাবস্থাতেই আছেন। কিন্তু দু দলের সহ অধিনায়ক দুজনের  [ফখরুল – আশরাফ] অভিব্যক্তি আশাব্যঞ্জক ও অনুপ্ররণীয় শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য। বিশেষ করে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন চলার সময় আশরাফুল ইসলামের ফোন ও অতঃপর ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘হয়ে গেছে’ অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে যে মুচকি হাসি হেসেছেন তাতে সস্তি পেয়েছেন শান্তিকামীরা। অপরদিকে বিএনপির দেওয়া চিঠি পেয়ে পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে আওয়ামিলীগ ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন আর ব্যখ্যা দিয়েছেন সম্পর্ক যাতে তিক্ততার দিকে না যায় সেদিকে তারা ওয়াকিবহাল। এইতো গঠন শীল আর বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির প্রয়াস।

 

চেরাগের আলোর দীপ্তির নিচে ও কালি জন্মে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে সহিংসতা বন্ধ হবে নাকি অস্থিরতা বাড়বে, তা বোধগম্য নয়। তবে পঁচিশ তারিখের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে পরস্পর বিরোধী কথাযুদ্ধ থাকলে ও তা যাতে রক্তাক্ততার দিকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। বিরোধীদল সংসদে নিজেদের প্রস্তাব উত্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা দেরীতে হলে ও প্রশংসনীয়।

 

দুনেত্রীর দুফর্মুলার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আছে, সর্বমহলের সন্তুষ্টি অর্জন করা ও রাতারাতি সম্ভব নয়। অন্তত পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার যে পথের সূচনা হয়েছে তা যাতে অবরুদ্ধ না হয়। প্রয়োজনে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিন্তু জনকল্যাণকর কোন প্রস্তাব ও সমাধানের পথে হাঁটা সম্ভব চলমান সংসদ অধিবেশনকে কাজে লাগিয়ে এবং শীঘ্রই। লক্ষনীয় এবং আবশ্যক হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার প্রধাণ  যাতে নির্দলীয় হয় যার প্রস্তাব বিএনপি চেয়ারপার্সনের লিখিত বক্তব্যে আছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনুপস্থিত।  এ মৌলিক ইস্যুটি সমাধান হলেই কার্যত সমাধানের রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যায়।

 

তাইতো পুরো দেশ আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে রাজনীতির সস্তির বৃষ্টির প্রতীক্ষায়।

Read Full Post »

পুরো দেশ এখন উৎসবের আনন্দে ভাসছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় পূজা আর পবিত্র ঈদুল আযহার নির্মলতার মাঝে এক ধরনের চাপা গুমোট আর অনিশ্চিয়তার নিমিত্তে বিষণ্ণতা কাজ করছে সবার মাঝে। ২৪ অক্টোবরের পর দেশের পরিস্থিতি কি হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে সরকার, বিরোধী দল কেউই নিশ্চিত না তাদের কর্মোপন্থা কি হবে দেশের বিপজ্জনক এই সময়ে। কূটনীতিক পাড়ায় ও থমথমে অবস্থা বিরাজমান।

 

বায়োস্কোপের জানালায় তাকিয়ে দেখি সাম্প্রতিক সময়ে সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন, সুশীল সমাজ কিভাবে সময় পার করছে আর জনগণের প্রত্যাশার আহবান ই বা কতটুকু।

 

গেল মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের ৬৮তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য রেকর্ড সংখ্যক ১৪০ জনের বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বহর যখন নিউইয়র্ক জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ম্যানহাটন গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল পর্যন্ত পৌছুতে চল্লিশ মিনিটের রাস্তা ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে আড়াই ঘন্টা সময় নেয়, তখন যাত্রালগ্নে  চিরাচরিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠে। পুরো সফরকালীন সময়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সফরকারীদের শপিং-ঘুরাফেরা, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্বলিত পুস্তিকার  প্যাকেটকে নিরাপত্তা রক্ষীরা বোমা সন্দেহ করলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের সামনে আতংক ছড়িয়ে পড়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অফ দ্যা রেকর্ড মুন্নি সাহার কথোপকথনের রেকর্ডকৃত ট্যাব জব্দ  করা সহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান কেন্দ্রিক মিশনে নিউইয়র্ক যেন মুহুর্তের বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। এতকিছুর পর ও পুরো দেশ তাকিয়ে ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিকে। দেশের জন্য নতুন কোন নির্দেশনা কিংবা গাইডলাইন না থাকলেও বিরোধী দলের প্রতি বিষোদ্গার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহবান ঠিকই ছিল। এরপর দেশে ফিরে ঢাকা, চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার উদ্ভোবন সহ বিভিন্ন প্রকল্প চালু করে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছেন আর সংসদ বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে সংসদে বলেছিলেন, চলমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবেনা। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার কি হবে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি যেভাবে নির্দেশনা দিবেন, সেভাবেই সরকার বহাল থাকবে। আর এখন সরকার দলীয় সিনিয়র নেতারা পাল্লা করে বলছেন নির্বাচন পর্যন্ত অধিবেশন চলবে।

বিএনএফ নামের নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিই দেয় এবং তাও যদি গমের শীষ কিংবা ধান গাছ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে , তা হবে বর্তমান কমিশনের আস্থা হারানোর চূড়ান্ত ধাপ। একইভাবে বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেংকারিতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলেও তাতে নাম নেয় তখনকার পরিচালনা পরিষদের কারো, যাতে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বয়ং প্রশ্নবিদ্ধ।

 

প্রথম আলোর জরিপে সম্প্রতি ফুটে উঠেছে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের প্রতি জনগণের আকাংখা।  এক ই জরিপে বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও চিহ্নিত হয়েছে। সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাসের এ সুযোগকে বিরোধী দল এখনো সীমাবদ্ধ রেখেছে সেমিনার ও কর্মী সমাবেশে। কিছু দিন পর পর বিভাগীয় শহরগুলিতে বিরোধীদলীয় নেতা বিশাল বিশাল সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক দিলেও কর্মীদের চাঙ্গাভাব এখনো রাজপথে প্রসারিত হয়নি। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বেগম জিয়া কি বার্তা পৌছান , তাই দেখার পালা এখন।  পঁচিশে অক্টোবর সরকারী দল ও বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছেন রাজধানীতে। এর পরের দিনগুলি যে সংঘাতময় তা বুঝার জন্য মনে হয় ম্যাগ্নিফাইয়িং গ্লাসের প্রয়োজন নেয়। কিন্তু এরপর ও দু দলের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যদি নির্বাচন কেন্দ্রিক দুটানার অবসান হয়,  তবে তা হবে পুরো দেশবাসির জন্য প্রশান্তিময়।

 

গেল সপ্তাহ ছিল আমাদের কক্সবাজারের জন্য অর্জন ও হারানোর  আনন্দ – শোকে উদ্বেলময় সময়। জেলার কৃতী সন্তান মমিনুল হক সৌরভ বাংলাদেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ্বে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানের কাব্যিক ইনিংস খেলে তারিফ পেয়েছেন পুরো দেশের। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করে ব্যারিষ্টার হওয়ার স্বপ্নময় পথ পাড়ি দেওয়ার যাত্রায় বন্ধুদের লোলুপ ফাঁদে পড়ে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়নের রিফাত। একবিংশ শতাব্দির এ সময়ে এ দেশের তারুণ্যের একাংশ যেখানে প্রযুক্তি ও কল্যাণের প্রয়োজনে নিজেদেরকে উত্তরিত করে চলছেন বীরদর্পে, আরেকাংশ সেখানে বেকারত্ব, দারিদ্র্যের অভিশাপে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে মাদক, রাজনীতির ঢাল, সন্ত্রাসে ভর করে তারূণ্যের শক্তিকে পচন ধরাচ্ছে। এ ধরণের পচনশীল তারুণ্যের শিকার মেধাবী রিফাত। দল মতের উর্দ্ধে থেকে যদি এ দেশের রাজনীতিবিদ তথা দিক নির্দেশনাকারীরা তারুণ্যেকে গাইড করতে না পারে তাহলে এ দেশের মূলশক্তিই যে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাবে। যে দেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের ও বেশি তরুণ সে দেশের সোনালী সম্ভাবনা কে দাঁড় করাতে পারে এ দেশের রাজনীতিবিদরা।

ঈদুল আযহার ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কল্যাণে নিবেদিত হোক আমাদের পথ প্রদর্শকরা, যাতে একটি স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত হয় অন্তত।

Read Full Post »