Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘জাতীয় রাজনীতি’ Category

জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। বিগত কয়েক মাস ধরেই প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারী অনেক সাংসদ, মন্ত্রীরা সভা, সমাবেশে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। এ যাত্রায় সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি একটু পিছিয়েই ছিল। প্রথাগত সভা-সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া, নেতা-কর্মীদের মামলা-মোকদ্দমার ভয় সহ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার হতাশা আচ্ছন্ন করে রেখেছে জনসমর্থন নির্ভর অন্যতম এই রাজনৈতিক দলকে। এর উপর নতুন ভোটারদের আকর্ষণ করার মত দিকনির্দেশনা ও দিতে পারছিলনা দলটি। দলের হাইকমান্ডে ক্যারিশমাটিক তরুণ নেতৃত্বের অভাব অনেকদিন ধরেই চিহ্নিত। জাতীয় নির্বাচনের বছরখানেক আগে ২০৩০ সালের রোডম্যাপ ঘোষণা নির্বাচনের হাওয়ার নতুন পাল বলে ধরেই নেওয়া যায়।

২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং রাজনীতিকে বিএনপি কোথায় নিতে চায়, বুধবার তার একটি রূপকল্প দিয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন  খালেদা জিয়া। একানব্বইতে গনতন্ত্র আসার পর দুদফায় পূর্ণমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের ভিশন বা রুপকল্প ঘোষণা তে প্রতিক্রিয়া হবে , সরকারী দল সমালোচনা করবে –  এটাই স্বাভাবিক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পিছনে তৎকালীন মহাজোটের “ভিশন ২০২১” অন্যতম প্রভাবক ছিল ও তরুণদের আকর্ষণ করেছিল। বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক  প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করাটা সুস্থ রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার।

বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ শিরোনামের লিখিত বক্তব্য শেষ হতে না হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রশংসা, প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে জোরালোভাবে। তবে সমালোচনার সব তকমাকে ছাপিয়ে গেছে সরকারী কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি বর্গের প্রতিক্রিয়া। বেগম জিয়ার বক্তব্য শেষ না হওয়ার আগেই অনেকটা কৈশোরশুলভ বাল্যিখেলাপনে ফেসবুকে ব্যঙ্গার্থক শ্লেষমূলক স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করলেন বর্তমান সময়ের তারুণ্যের আইডল খ্যাত একজন প্রতিমন্ত্রী। বেগম জিয়া তাঁর ভিশনে 3G (Good Governance, Good Government এবং Good Policy) বুঝালেও ঐ প্রতিমন্ত্রী টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি (3G) হিসেবে ধরে শ্লেষাত্নক স্ট্যাটাস দেন। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলার কে পড়তে গিয়ে ৫০০ ডলার বলায় সেই সু্যোগ টি নিতেও ছাড়েনি তরুণ এই মন্ত্রী। অথচ, পরের দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন- খালেদা জিয়ার এই নতুন রূপরেখা দেশের জন্য ভাল। কয়েক ঘন্টার মধ্যে এ ধরণের প্রতিক্রিয়ায় মনে হতেই পারে-  বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ এর ঝাঁজ ভালই আছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণদের প্রতিক্রিয়ায় মনে করা যেতে পারে – বাংলাদেশের অনেক তরুণ এই ভিশনে  উৎসাহিত হবে। যে তরুণরা বিএনপিকে সমর্থন করেন, তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হবে। প্রযুক্তি বিমুখ বলে বিএনপি’র যে তকমা ছিল তা কিছুটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছে দলটি – তাদের ভিশনের মাধ্যমে। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি খাতকে প্রধান রফতানি খাত হিসেবে পরিকল্পনায় রাখায় উৎসাহিত হবে প্রযুক্তি নির্ভর তরুণ প্রজন্ম।

ধর্মঘেষা ও কিছুটা সাম্প্রদায়িক চেতনার হিসেবে সমালোচনাটুকু ও কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টা আছে এই রুপকল্পে। বিশেষ করে রংধনু (Rainbow) জাতি হিসেবে প্রতিষ্টা করার পরিকল্পনা টুকু আকর্ষণীয় ও নতুন। এই পরিকল্পনানুযায়ী দেশের যে কোন গোত্র, ধর্ম, বর্ণ সমানভাবে অধিকার আদায় করতে পারবে।

বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ এর ঝাঁজ সবচেয়ে বেশি এসেছে – প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সংকুচিত করার পরিকল্পনা থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোন প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করলেন, বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বেশি। রুপকল্পে সংবিধানিক বিষয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে তা হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস করে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করা , সংবিধানের বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলি পুনঃসংস্কার, সরকারি হিসাব কমিটিসহ সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়া। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ ধরণের আশ্বাস বা পরিকল্পনা ক্ষমতায় আসার আগে অনেকেই বলে, কিন্তু যেই ক্ষমতা কুক্ষিগত সেই বেমালুম ভুলে যাওয়া হয়।

২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ঘোষিত ভিশন ২০২১ এর অনেক অংশের সংগেই সম্পূরক ভাবে মিল রয়েছে বিএনপি ঘোষিত ভিশন ২০৩০ এর। বিশেষ করে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও কৃষক, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ইত্যাদিতে যেসব অঙ্গীকার প্রতিধ্বনিত হয়েছে তা বর্তমান সরকারের রূপকল্পের সঙ্গে অনেকাংশেই মিলে যায়। ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি দু অংকে পৌছানোর বাস্তবসম্মত অভিলাস রয়েছে এই রুপকল্পে। এই ভিশনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫+৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এতে।

ঘোষিত ভিশনে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাক্যটি উল্লেখ করা যেতে পারে “ বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোন প্রভু নেই।“। মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলার করার আশ্বাস থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা উল্লেখ নেয়।  ভিশনে তথ্য প্রযুক্তি খাতে উল্লেখ করেছে “ বর্তমান সরকার ICT সেক্টরে উন্নয়নের বাগাড়ম্বর করলেও বাস্তব চিত্র সুখকর নয়।“ রুপকল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে রূপান্তর করার কথা লিপিবদ্ধ আছে। ভিওআইপি (VOIP) কে উন্মুক্ত করার কথা উল্লেখ আছে এতে। তথ্য প্রযুক্তি খাতের কাল আইন ৫৭ ধারা বাতিলের কথা বলা হয়েছে এতে। তথ্য প্রযুক্তি খাতকে বিএনপি’র বিশেষ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ই-গভর্ন্মেন্টের (E Government) এর কথা উল্লেখ নেয় এতে।

আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপি আঞ্চলিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ থাকলেও তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেয় এতে।  সমুদ্রের উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পদের মজুদ  নির্ভর নীল অর্থনীতির আকাংখার (blue economy) উল্লেখ রয়েছে এই ভিশনে।

ধারণা করা হয়, বিএনপি শাসনামলের সবেচেয়ে অবহেলিত খাত ছিল বিদ্যুৎ খাত। ভিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ৩৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কে স্বচ্ছতায় আনার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মুল্যে সরবরাহ করার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে এই রুপকল্পে।

পর্যটন খাত নিয়ে গৎবাঁধা স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। এই রুপকল্পে পর্যটন খাতকে বিশেষভাবে মূল্যায়িত করা হয়নি।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন পরিকল্পনা নেয় এই রূপকল্পে। তথ্য প্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হলে ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনার উল্লেখ করা হয়নি।

আগেই বলেছি, ২০০৮ সালের নির্বাচনের জয়ের পিছনে বিশেষ প্রভাবক ছিল আওয়ামীলীগ ঘোষিত তখনকার ভিশন ২০২১। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ তাদের এ রূপকল্পের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’কাছ থেকে এ ধরণের কোন পরিকল্পনা শোনা যায়নি। দেরিতে হলেও দলটি হয়তো এখন অনুধাবন করেছে যে তাদের প্রতিপক্ষের সাথে তাল মিলিয়ে রাজনীতি এবং ভোটারদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে একটি রূপকল্প উপস্থাপন করা জরুরী।

তাই বিএনপি ঘোষিত এই ভিশনকে সরকারী দলের নেতারা ভ্রান্তিবিলাস, মেধাশূন্য প্রলাপ, ভাঁওতাবাজি সহ নানা উপমা দিলেও সরকার যে বিএনপি’র এই স্ট্রাটেজি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন  – তা তরুণ প্রতিমন্ত্রীর বাল্যিখেলাপনা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখলেই বুঝা যায়।

ভিশনের এই ঝাঁজ জনগণের কাছে তখনই পৌছুবে যদি বিএনপি আগামিতে এই ঘোষণা অনুযায়ী তাদের পরিকল্পনা পরিচালিত করে। আর সরকারী দল যদি তাদের আত্ন-অহংকারে ভোগা মন্ত্রীদের কথার লাগাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন – তাইলে ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পরবেন বৈকি।

দেশের মানুষের জন্য বিশেষ পাওয়া হবে যদি রাজনীতিবিদ রা তাদের স্বঘোষিত ভিশনের ব্যপারে আন্তরিক থাকে মনে-প্রাণে।

Read Full Post »

গেল সপ্তাহে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ  নির্বাচনের প্রথম কয়েকটি  ধাপ সম্পন্ন হল। নানা দিক দিয়ে এবারের ইউপি নির্বাচন ব্যতিক্রমী, আলোচিত ও সমালোচিত। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে বাংলাদেশে এবারই প্রথম ইউ পি নির্বাচন  হচ্ছে।

 

গত ১৯ মার্চ, বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় না দেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন। নিজ উঠানে কবর খুঁড়ে কাফনের কাপড় পড়ে তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন  ওই বিদ্রোহী প্রার্থী।  পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে উঠিয়ে সোজা কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। কবরবাসের চেয়ে কারাবাস উত্তম। এই ঘটনাটি হাস্যরস -বেদনাত্নক হলেও সমগ্র দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতন্ত্রের সমন্বয়য়ের যেন রুপক শিল্পায়ন এটি।

 

নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রথম দুদিনেই নির্বাচনী ঝড়ে (সহিংসতায়) প্রাণ হারিয়েছে বাইশ জন। বরিশালের মুলাদী উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে কেবল নিজের কবর নিজেই খুঁড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কবর খুঁড়তে হয়েছে বাইশটি। ভোট চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হাজারের উপর। তাদের অনেকেই হাঁসপাতালে হাঁসফাঁস করছেন, কাতরাচ্ছেন। নার্স, ডাক্তার তাদের শুশ্রূষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের চলমান নির্বাচন প্রক্রিয়াটি  যে রুগ্ন, অসুস্থ তাতে কোন সন্দেহ নেয়। কিন্তু কার বা কাদের সেবায় সুস্থ হবে এটি? কি বিজিবি মহাপরিচালক নতুবা নির্বাচন কমিশন কেউই এই অসুস্থতার দায় নিতে নারাজ। নির্বাচনী কমিশনার নিশ্চিন্তে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুস্থ হচ্ছে। সহিংসতায় তাদের কোন দায় নেয়।

 

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি  র তেমন মনঃসংযোগ নেয় বললেই চলে। “অংশগ্রহণই মূল কথা “ এই ধারণার উপর অনেকেই লড়ছেন। তাদের ভিতর অভ্যন্তরীণ গনতন্ত্র কতটা আছে তাও প্রশ্নের উদ্রেগ করে। আওয়ামীলীগের বেলায় এ উপমা প্রযোজ্য নয়। এবারের নির্বাচনের দুপ্রান্তেই তাদের অফিসিয়াল আওয়ামিলীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ। এ,বি টিমের এই দ্বন্ধ কখনো মনস্তাত্বিক, কখনো সাংঘর্ষিক। মাঝে মধ্যে এটি সংঘাতে রুপ নিচ্ছে। টাকার অবাধ ব্যবহার নেতাদের পেছন পেছন ঘুরছে, পাছে ‘এ’  টিমের মনোনয়ন পাওয়ার আশায়। পুলিশ আগে থেকেই সরকারি দল হিসেবে কাজ করে। এ নির্বাচনে তারা কখনো এ টিম কখনো বি টিম।

 

এই ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বনাম বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন করে মাথাচারা দিচ্ছে। সম্প্রতি, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নির্বাচন কে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের বিবৃতি, অভিযোগ তাই প্রমাণ দিচ্ছে। রামু উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে মনোনয়ন বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এবারের ইউপি নির্বাচন দশ থেকে বারটি ধাপে সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে দুটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। জয়ী প্রার্থীদের ৮০ শতাংশই আওয়ামিলীগ কিংবা বিদ্রোহী আওয়ামিলীগ। সরকারি দল এতে হয়ত খুশি, তাদের আত্নতৃপ্ত জনপ্রিয়তা দেখে। কিন্তু এ জনপ্রিয়তা কতটা আসল এবং নির্ভেজাল তা ভাবনার বিষয়।

 

অনেক দিক দিয়েই ব্যতিক্রম এবারের নির্বাচন। প্রথমত, ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর একটি প্রশ্নবিদ্ধ্ব (!) নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছে। যে নির্বাচনে অর্ধেকের ও বেশি সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত। এই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত সাংসদরা যখন স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় প্রার্থী মনোনিত  করবেন, তারা তখন কতটা ডেমোক্র্যাটিক থাকবেন, কতটা প্রকৃত নির্বাচনের পথে হাঁটবেন। স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের নিবিড়তাই বা কতটুকু।

 

দ্বিতীয়ত- এবারই প্রথম, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে  বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আগেই অনুমেয় ছিল। আমাদের দেশে  নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক দলীয়করণ। দুর্ভাগ্যবশত, পক্ষপাতদুষ্টতার গুরুতর অভিযোগ আমাদের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও রয়েছে। দলীয় প্রতীকে একটি  অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যে ধরণের শক্ত কমিশন দরকার, তা চলমান নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুপস্থিত।   অতীতে অধিকাংশ প্রার্থীর দলীয় পরিচিতি থাকলেও ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ব্যবহৃত হতো না। তাই নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত দলবাজ কর্মকর্তারাও তাঁদের দলীয় প্রার্থীদের প্রতি একধরনের নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতেন। ফলে  নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হতো। কিন্তু দলভিত্তিক নির্বাচনে দলান্ধ কর্মকর্তারা তাঁদের দল মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গত কয়েক মাস ধরে চলা পৌরসভা, ইউনিয়ন নির্বাচনে এসব অসামঞ্জস্যতা প্রতিফলিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগের সেই উৎসব, কোলাহল, প্রাণচাঞ্চল্য অনেকাংশেই অনুপস্থিত।  দলীয় নির্বাচনের ফলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ক গুলি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে বৈকি!

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনকে একটি বিকৃত ও আস্থাহীন নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি মনোনয়ন বানিজ্যের প্রভাব ও বিস্তৃতি এখন তৃনমূল পর্যায়ে পৌছে গেছে বলে আখ্যা দেন। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্রের কার্যকরিতা কতটুকু থাকে তা নিয়ে ও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

 

পিরোজপুরের কোন এক ইউনিয়নে পছন্দের প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হলে উল্লাস করবেন বলে রং কিনে পকেটে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক মোহাম্মদ কামাল। কিন্তু সেই রঙের বদলে তাঁর হাতে লেগেছে নিজের ভাই বেলালের রক্ত। নির্বাচনে গোলমাল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন তার ভাই। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, ফলাফল ঘোষণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ আছে হাজারো। প্রিজাইডিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রাট রা ও অনেক সময় কিংকর্তব্যবিমূড়, অসহায় হয়ে পড়ছেন।

 

কোন সন্দেহ নেয়, আমাদের গণতন্ত্র এ সময় একটি কঠিন সময় পার করছে।   এই কাঠিন্য থেকে উত্তরিত হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন নির্বাচন নামের খোলসের মধ্যে আটকে গেছে প্রহসন আর বল্প্রয়োগ। যতদিন রাজনীতি থেকে বলপ্রয়োগ ও প্রহসনের বাড়াবাড়ি বিদায় না হবে, তত দিন নির্বাচন কমিশন কে “নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে” এ ধরণের বুলি আওড়াতেই থাকতে হবে। অথচ বাংলার ইতিহাসে বারবার নির্বাচন ও শান্তি সমার্থক  ছিল। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে শেরেবাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি জমিদারদের কংগ্রেস ও অভিজাত্দের মুসলিম লীগকে পরাজিত করে।  বাঙালি মুসলমানের রাজনীতির এই ধারাই ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নামে ভোটবিপ্লব ঘটিয়ে স্বাধীনতার দাবিকে আরো প্রচণ্ড ও অবধারিত করে তোলে।  বৃটিশ ও পাকিস্তানিরা সুষ্ঠু নির্বাচনে ত্রাস হতে পারেনি। শান্তিপুর্ণ নির্বাচন সুস্থ গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত।

 

এখন গণতন্ত্র আছে লিখিত রুপে আর বাগ্নীতায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র নিখোঁজ। নিখোঁজ গণতন্ত্রে নির্বাচন তো নির্বাসিত হবেই।।

Read Full Post »

(১)

গত এগার তারিখ প্যারিসে হয়ে গেল ৪০ লক্ষ মানুষের শান্তি র‍্যালি, যেখানে বিশ্বের ৪৪ টি দেশের বিশ্বনেতারা অংশ নিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছাড়া ও একই কাতারে অংশ নিয়েছেন বৃটেন, স্পেন ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, ছিলেন ফিলিস্তিন, নাইজার, মালির প্রেসিডেন্ট, জার্মান চ্যান্সেলর প্রমুখ। ব্যঙ্গ সাময়িকী শার্লি এবদোর কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন ও দুদিন পরে একই ঘটনার জেরে আরো পাঁচজনসহ মোট ১৭ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই শান্তি র‍্যালি। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল প্যারিসের সেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-পদযাত্রার জনসমুদ্র্য। মুহুর্তের মধ্যে শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে ধিক্কার জানিয়েছে বর্বরোচিত এই হত্যাকান্ডের। হামলা পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যেই এর দায় স্বীকার করেছেন উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়দা ইয়েমেন শাখা। যদি ও এর তদন্ত এখনো চলছে। কিছু সংবাদ মাধ্যম এর সঙ্গে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার সম্ভাবনা ও ওড়িয়ে দিচ্ছেনা।

 

উদ্বিগ্ন হওয়ার মত খবর হচ্ছে এই হামলার পর থেকে পশ্চিমা মুসলিমরা আশঙ্কার মধ্যে সময় অতিবাহিত করছেন। অথচ নয় তারিখে প্যারিসে ইহুদি মার্কেটে ‘জঙ্গি’দের হামলার ঘটনায় অনেক ফরাসি নাগরিককে বাঁচিয়েছেন জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম তরুণ। শার্লী এবদোর ঘটনায় আহমেদ মেরাবাত নামের একজন মুসলিম পুলিশ অফিসার মারা গেছে যে কিনা ঐ পত্রিকার নিরাপত্তা রক্ষার্থেই জীবন দিয়েছে।

 

ফ্রান্সের ব্যঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি এবদো এর সৃষ্টিকাল থেকেই বিতর্কিত কার্টুন ছেপে আসছে। প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসের বরাদে জানা যায়, বাকস্বাধীনতার নামে পত্রিকাটি মহানবী (সাঃ) এর ব্যাঙ্গার্থক কার্টুন  ছেপেছিল ২০১১ সালে। ও সময় সমালোচনা মুখর ছিল পুরো বিশ্ব। পত্রিকা অফিসে বোমা হামলা হয়েছিল। পরের বছর ফরাসি সরকারের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে পত্রিকাটি আবার মহানবীর ব্যাঙ্গ কার্টুন ছাপায়। এরপর পত্রিকা অফিসটিতে পুলিশ পাহারা বসে।

 

সম্প্রতি গত সপ্তাহে ঐ পত্রিকা অফিসটিতে সন্ত্রাসী হামলা ও এতে কিছু বিপদগামী উগ্র্যপন্থী মুসলিম জড়িত ছিল মর্মে  – পত্রিকাটি মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে আবারো ব্যাঙ্গার্থক কার্টুন ছেপেছে। আবেগ কে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে এরা প্রায় তিরিশ লাখ কপি ছাপিয়েছে। তারা মূল প্রচারনায়  স্লোগান দিচ্ছে  ‪#‎JeSuisCharlie অর্থাৎ ‘আমি ই শার্লি’। এর মানে আপনি শার্লি এবদো হত্যাকান্ডের বিরোধী থাকলে আপনাকে বাধ্য করে বলাতে চায় যে একটি ধর্মকে নিয়ে কৌতুক ও বিদ্রুপ করা এবং কয়েক শত কোটি মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় মহাপুরুষ কে নিয়ে কার্টুন আঁকা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। অনেক মুসলিম দেশ পত্রিকাটির এই বিতর্কিত সংস্করণ নিষিদ্ধ করেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেখানে পুরো বিশ্ব ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে একত্রীভূত হয়েছে , এ সময় এ ধরণের প্রচারণা উস্কানিমূলক তো বটেই।

 

আমরা বিবেকবান সমাজ ভুলে যায় আজ সন্ত্রাসবাদে শুধু শার্লি এবদো’ই আক্রান্ত নয়। আজ সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। এক বিবেকবান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমি শার্লি না, আমি আহমেদ। আমি সেই ৩ বছর বয়সী সিরিয়ার শিশু আহমেদ, যার মৃত্যু হয়েছে এই অর্থ ও ক্ষমতালোভীদের সৃষ্ট যুদ্ধে, আমি ইরাকের লক্ষ লক্ষ শিশূ আহমেদ, যারা মারা গেছে ম্যাডেলিন অলব্রাইটের দেয়া অবরোধে, আমি আফগানিস্তানের এতিমখানার আহমেদ যে মারা গেছে মিসাইলে, আমি পেশোয়ারের শিশু আহমেদ, যে তার দাদীর সাথে খেলতে খেলতে মারা গেছে ড্রোন হামলায়, আমি প্যালেস্টাইনের ১০ বছরের শিশু আহমেদ, যাকে সন্ত্রাসী বানিয়ে মাথায় গুলি করে মেরেছে ইসরায়েলী সৈনিক, আমি কাশ্মিরের আহমেদ, যার মৃত্যু হয়েছে বোনের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে, আমি ৪২ বছর বয়সী ফরাসী পুলিশ আহমেদ যে শার্লি এবদোর নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতার অধিকার বাঁচাতে গিয়ে ‍নিহত হয়েছে, সেই শার্লি এবদো পত্রিকা যা তার পূর্ব পুরূষ ও তার নিজের ধর্ম, সংস্কুতি ও শ্রদ্ধাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো।“

 

নারী বিদ্বেষী, অ্যান্টি সেমেটিক, বর্ণবাদী, সাম্প্রদায়িক উপমা গুলি কালিমা হয়ে যায় কিন্তু পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষের ধর্ম ও এর সবচাইতে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে নিয়ে তামাশা করলে সেটি হয় বাক স্বাধীনতা।

 

আমরা আশা করব, ফ্রান্স সহ সর্বত্র মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার এবং ধর্মের নামে নৃশংসতা রোধে সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবে। সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কে উস্কে দেওয়া দুটিই মারাত্নক অপরাধ। সব ধর্মের প্রতি সুবিচার ও পরমত সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করাই আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম উপকরণ।

 

(২)

আমাদের দেশে গত দু সপ্তাহ ধরে চলমান অশান্তিময় পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে পর্যালোচোনা করার কিছু নেয়। অসুস্থ রাজনীতির বলিতে প্রতিদিন নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। শুধু বোমা হামলায় দগ্ধ হয়েই নয়, সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন। অবরোধে চালকদের ভীতি, উৎকণ্ঠা আর অসেচতনতার খেসাড়ত দিতে হচ্ছে অনেক কে। কবে থামবে এই ধংসলীলা। গণতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক চর্চার স্বীকার এ দেশের জনগণ। রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মানসিকতা কখনোই শুভকর নয়। সংলাপে বসলেই যেখানে আপাত সমস্যার সমাধানের পথ উন্মোচিত হয়, সেখানে যারা সরকারকে রুঢ়তার পরামর্শ দেয় তারা সরকার কে ভুল পথে পরিচালিত করছেন বৈকি। পুলিশ ও র‍্যাবে নতুন নিয়োগ পাওয়া কান্ডারিগণ রাজনৈতিক ভাষণের চেয়ে বোমাবাজদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে পারলে ‘কথার চেয়ে কাজ ভাল’ উপমা  প্রতিষ্ঠিত হত। বিরোধী দলের উচিত তাদের দাবিকে নাগরিক সমাজে আরো প্রতিষ্ঠিত করা এবং নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ তরাণ্বিত করা। অন্তসার শূন্যতা কোন পর্যায়ে গেলে আন্ত যোগাযোগের অনলাইন ভিক্তিক মাধ্যম ভাইভার/ট্যাঙ্গো বন্ধ করে দেয় ডিজিটাল সরকার। কার্যত সরকারের পরামর্শকরা রাজনৈতিক কৌশল নিতে চাচ্ছেনা। ক্ষমতার দাম্ভিকতা দিয়ে হুংকার করে গণতন্ত্র কখনো শান্তির পথ বেয়ে আনবেনা। শান্তির পথ বের করতে বিদেশ নির্ভরতা কিংবা অশুভ শক্তির উদয় হওয়াটা ও আমাদের জন্য শুভকর নয়।

 

অতঃপর, আবারো, আরাধ্য শান্তি কে খুঁজে ফিরি প্রতিটি মূহূর্তে – কোথায় পাব তারে।।

Read Full Post »

এক উদ্ভট সংকটের মধ্য দিয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। সংকট, সংঘাতের সমন্বয়ে সৃষ্ট ভ্রষ্ট রাজনীতির চিরচেনা ঘোর থেকে বের হওয়া দূরহ হয়ে পড়ছে। অর্থনীতি নির্ভর বিশ্ব রাজনীতির এ সময়ে আমাদের রাজনীতির অন্তর্কোন্দল আর এর থেকে পরিত্রানের জন্য নিস্পৃহ লোক দেখানো অপচেষ্টা রীতিমত হতাশ করছে দেশবাসীকে।

 

আমাদের ইন্দ্রিয় অনুভূতির সংবেদনশীলতা লোপ পাচ্ছে দিনদিন। প্রতিবেশী দেশের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান এক রাজনীতিবিদ কে ফোন করা নিয়ে রীতিমত নাটকীয়তা ও তাতে আমাদের মুহর্মুহ মনযোগী নিবিষ্টতা ও অবুঝ করতালি(!)  অনেক প্রশ্নের উদ্রেগ করে। সাত দফাকে নিয়ে অবরোধ চলছে সারাদেশে, তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে দু দলই ব্যস্ত সংবাদ সম্মেলনে যার মূল আলোচ্য থাকে এ ধরণের অপ্রয়োজনীয় বিষয়। আমাদের নেতৃত্বের হামবড়া ভাব এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা কেয়ামতের আগে কোন সংলাপ নয় – এ ধরণের দম্ভোক্তি করতে পিছুপা হয়না। অন্যদিকে নব্বইয়ের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর তিন দফা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি’র আন্তর্জাতিক কূটনীতি এতটা অপরিপক্ক যার নির্ভেজাল প্রমাণ ধরা পড়ে সইজাল করা বিবৃতিতে যার মুলে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে দলটির লন্ডন কেন্দ্রিক সমান্তরাল নেতৃত্ব। চেইন অব কম্যান্ডের ঘাটতি বিশেষ লক্ষণীয়। পাঁচই জানুয়ারীর এক তরফা সাংবিধানিক কিন্তু অগণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রশ্নবিদ্ধ গ্রহনযোগ্যতা কে আন্তর্জাতিক মহলে চিন্তিত করার মত দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে কার্যত এখনো সফল হয়নি দলটি। সাত দফা নির্ভর অবরোধ চলাকালীন সময়ে পাশের দেশের বিজেপি প্রধানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রয়েছে প্রমাণ করে সরকারের ভ্রুক্ষেপ করানো যাবে ঠিকই, কিন্তু দাবি আদায়ের পর্যাপ্ততা ভাবা উচিত হবেনা।

 

একতরফা ও সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে আওয়ামিলীগের অন্যতম নির্বাচনী ইশতিহার ছিল জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলা। কিন্তু ঐক্যমত তো দূরের কথা, এর ধারপাশ দিয়ে ও হাটেনি দলটি। ঢাকাকেই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু মনে করার স্ট্রাটেজিটি ঠিক কি বেঠিক, তা ভবিষ্যতে কোন সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন হলে বোধগম্য হবে। প্রভাবমুক্ত প্রশাসন রাখার ইশতিহারের অভিলাস ও এর ফলাফল সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে এইচ টি ইমামের কথায়। পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতির উপর ভর করে জিডিপি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এতে সরকারের প্রশংসা নেওয়ার জো খুব একটা নেয়। পদ্মা  সেতু, গভীর সমুদ্র্য বন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ অনেক বড় বড় প্রজেক্টে হাত দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কিভাবে অর্থায়ন হবে তার কোন নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেয়। রামপাল প্রজেক্ট ইস্যুতে পরিবেশকে বিবেচনায় রাখা হয়নি, সুন্দরবনে তেল উদগমন ইস্যুতে সরকার বিরোধী কার্যকর প্রতিরোধ ও গড়ে তুলা সম্ভব হয়নি।

 

সমসাময়িক সময়ে যদি প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকার দিকে নজর দিই, তামিল বিদ্রোহীদের নির্মূলের মাধ্যমে নজরকাড়া এক সময়ের জাতীয় নায়ক রাজাপাকশে একটি সুষ্ঠূ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন , ফলাফল মেনে নিয়েছেন আর সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন একসময় তারই মন্ত্রীসভার সিরিসেনাকে। গত এক দশক ধরে শ্রীলংকা আঞ্চলিক রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে ব্যবসাবান্ধব রাজনীতির পথে হাটছে। চীন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে অত্রাঞ্চলের সিঙ্গাপুর হওয়ার পথপ্রায় দেশটি।

 

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ক্ষমতায় আসেন ২০১২ সালে। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতায় আসার কথা ২০১৬ সালে। নির্বাচিত হওয়ার পর তার নেওয়া অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে আপত্তি উঠেছিল। সমর্থন পরীক্ষার জন্য আগাম নির্বাচন দিয়ে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। জনগণের রায়ের প্রতি আস্থা রাখা আবে আগাম নির্বাচিত দিয়ে পুন নির্বাচিত হয়েছেন এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন তার গ্রহীত প্রশ্নবিদ্ধ নীতিমালার বৈধতা রয়েছে।

 

রাজাপাকশে ব্যপক উন্নয়ন করার পর ও বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন, স্বজনপ্রীতির কারণে সমালোচিত হয়েছেন যার ছাপ পড়েছে সাম্প্রতিক রাজনীতিতে। কিন্তু নির্বাচনে পরাজয় ই যে শেষ নয়, তা মাথায় রেখেই তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন দেশের সুন্দর আগামির কথা চিন্তা করে।

 

প্রযুক্তির এ সময়ে রাজনীতি এখন দুপক্ষের দাবা খেলার মধ্যেই শুধু সীমাবদ্দ্ব নেয়। এপক্ষ – ওপক্ষ র ঘাড়ের উপর বসে আছে জনগণ। বালুর ট্রাকের রসদে টেবিল রাজনীতির আড্ডা হতে পারে ঠিকই, কিন্তু আমরা যে সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে পিছিয়ে পড়ছি  তাতে মনযোগী হওয়া দরকার সবারই। অবরোধে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ও পরিবার আছে, তারা নিঃস্ব হচ্ছে। সহায়হীন হচ্ছে। বিরোধী দল নিপীড়ণ করতে গিয়ে সরকার কন্ঠরুদ্ধ করছে গণমাধ্যমের, এতে বাক স্বাধীনতা হারাচ্ছে সাধারণ নাগরিক ও। দিনশেষে বিএনপি আওয়ামিলীগ যারা করেন তারা একই এলাকায় পারস্পরিক আত্নীয়তায় আবদ্ধিত অনেক ক্ষেত্রে। মূল জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে সবারই। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় হুকুম আর পিকনিক আমেজে আন্দোলনের গতি পরিমাপ করার চেয়ে ঐক্যের ডাক দেওয়াটা জরুরী সবেচেয়ে বেশি এখন। দায়টা সরকারের ই বেশি।

Read Full Post »

তেইশ বছর আগে (৬ ডিসেম্বর ১৯৯০) স্বৈরাচার পতনের মাধ্যমে যে গণতন্ত্রের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছিল, নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাঁধা, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে যে ট্রেন কখনো ধীর, কখনো স্থির গতিতে এগুচ্ছিল, আজ সে ট্রেনের যাত্রা অনেকটাই থমকে গেছে। ষোল কোটি মানুষকে ফেরি করা ট্রেনের চালকদের নিজেদের ভেতরকার অন্তর্কোন্দল  ও প্রতিহিংসায় সৃষ্ট গুহায় আটকে গেছে গণ মানুষের ভাগ্য।

 

বহু প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের ট্রেন আটকে গেছে অনেক সংকটের মারপ্যাঁচের খপ্পরে।

 

সংকট ছড়িয়ে পড়ছে সবদিকে। শুধু কথিত নির্বাচন কালীন সরকারকে নিয়েই নিজেদের ফাঁদে পড়েছে সরকার।  প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিতদের মাধ্যমে নির্বাচন করার অহমিকাময় ঘোষণার  ফসল যে এগারজন অনির্বাচিত উপদেষ্টা আস্ফালন আর এর মধ্যে মন্ত্রীত্বের লোলুপ আকর্ষণের বহিঃপ্রকাশ ও জনগণের সামনে প্রকাশিত হয়েছে। সেই আস্ফালনের নির্যাস এত তিক্ত হয়েছে যে, পরিবর্তনশীল কথা-রাজনীতিবিদ হু মো এরশাদের মুহুর্তের ভেলকিতে জাপা মন্ত্রীদের পদত্যাগ পত্র  পেশ সরকারের একচোখা দর্শন কে করেছে বিচলিত ও হতভম্বিত।

 

গণতন্ত্রের অন্যতম (একমাত্র নয়) মাপকাঠি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনী পন্থায় যদি কোন বিতর্ক থাকে তা থেকে উত্তরণের নির্দেশনা হচ্ছে সংলাপ ও সমঝোতা। যদি তার ব্যতি ঘটে তাহলে অহিংস আন্দোলন কিংবা বিপ্লবের মাধ্যমে জনদাবি আদায় করে নিতে হয়। যেহেতু দু পক্ষের ‘ইগো’ ফ্যাক্টরের কারণে প্রত্যাশিত কোন সমাধানে পৌছানো সম্ভব হয়নি, বিরোধী দল তাদের ভাষায় জনদাবিকে প্রতিষ্টা করার লক্ষ্যে টানা অবরোধের মত কর্মসূচী পালন করছে। টানা অবরোধে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের যাতায়াত অবকাঠামো এবং স্বাভাবিকভাবেই এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতি সহ অন্য সব সেক্টরে। কার্যত সরকারের কার্যক্রম ও সীমিত হয়ে পড়েছে রাজধানী কেন্দ্রিক। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে সর্বদলীয় অংশগ্রহন যে এখন রুপকথার উপাখ্যান, তা সরকারের দায়িত্বশীল মহল বুঝে ও না বুঝার ভান করছে এবং প্রকারান্তরে ছেলেভুলানো প্রলাপ বকছেন। এতদিন সরকার যদি ভাবত তাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি – জামায়াত, এখন তাদের ভাবতে হচ্ছে প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত-জাপা, সুশীল সমাজের বিশালাংশ। এই বিশাল প্রতিপক্ষের পেছনে যে জনগণের গণসমর্থন আছে, তা ও বুঝতে দেরি নেয় সরকারের। কিন্তু বাঁধ সেজেছে এ মুহুর্তে সমাধানের প্রক্রিয়া নিয়ে।

 

সরকার থেকে আজ দোহাই দেওয়া হচ্ছে সংবিধানের বাইরে নড়ার কোন একতিয়ার নেয়। অথচ গত এক বছরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা স্থগিত করে, ছুটিতে যাওয়া, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সহ অনেক প্রস্তাব দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে দিয়েছেন। বিরোধী দল থেকে ও আকারে ইঙ্গিতে বুঝা গিয়েছে – শুধু প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা রহিত হলেই সমস্যার বরফ গলা শুরু হতো।

 

মানলাম, সরকার বিরোধী দলকে রাজপথে দাঁড়াতে দিচ্ছেনা কিংবা গ্রেফতার করছে। অনেক জায়গায় সরাসরি গুলি করতে দ্বিধা করছেনা। তথাপি, বিরোধী দল আন্ডার ওয়ার্ল্ড স্টাইলে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে দলীয় কর্মসূচী ঘোষণা দিচ্ছে। এটি তাদের নিজস্ব কর্মপন্থা কিংবা আত্নরক্ষাত্বক কৌশল হতে পারে। কিন্তু যেখানে তারা বার্তা দিচ্ছে গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোর , সেখানে নেতাদের আত্নরক্ষাত্নক কৌশল কর্মীদের চাঙ্গাভাব নষ্ট করতে পারে। আর মাঠে অদৃশ্যমান নেতৃত্বের চক্ষু ফাঁকি দিয়ে অপ্রত্যাশিত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়তে পারে  কর্মীরা। এ কারণেই চলমান সহিংসতা কিংবা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর দায়ভার কোনভাবে এড়াতে পারেনা দেশের বৃহত্তম বিরোধী দলীয় জোট। যদি ও বাস পুড়ানোর রহস্যানুসন্ধান করার প্রকৃত সাহস সরকার দেখাতে পারেনি। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে – স্টাইলে বিরোধী দলের প্রথম সারির নেতাদের বাস পুড়ানো মামলা দিয়ে কারাগারে ঠেলছে, আবার একই ধরণের ২০০৪ সালে করা বাস পুড়ানো মামলায় আওয়ামি নেতাদের মামলা থেকে মুক্তি ও দিয়েছে। এ ধরণের প্রেক্ষাপটে রঙ্গিন চশমা পড়ে ও নিরপেক্ষতার সন্দেহ চোখে পড়ে।  মানুষের জন্য যারা রাজনীতি করে তাদের বিবেকের দংশনের কাছে এসব দগ্ধ, পুড়ে মারা যাওয়া মানুষের প্রেতাত্না ভর কি করেনা?

 

তাইতো বাসের আগুনে দগ্ধ এক গীতা সেনের করুণ আর্তনাদে ভর করে অসুস্থ সরকার না চাওয়ার আকুতি, সাথে এসব সহিংস রাজনীতির প্রতি প্রবল ঘৃনা।

 

সরকার যদি ভেবেই থাকে অবরোধ কর্মসূচী ব্যর্থ হয়েছে কিংবা সরকার ঠিক পথেই আছে – তাহলে ধারনাটি নিতান্তই অমূলক এবং শিশুসুলভ। ঢাকা মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সারা দেশ থেকে। প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মুসা মজা করেই বলেছেন সরকার এখন গণপ্রজাতন্ত্রী ঢাকা সরকার, বাংলাদেশ সরকার আর নেয়।

 

অহিংসতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সরকারের দায়িত্বশীল মহল কতটা আন্তরিক তা প্রশ্নবিদ্ধ্ব হয় যখন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিরোধী নেতাদের মাঠে নামার আমন্ত্রন দেয় আর পার্টি অফিসে মধ্যরাতে ঘুমন্ত নেতাদের বগলদাবা করে গ্রেফতার করে সরকারী মদতে আইন শৃংখলা বাহিনী। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সরকার বিরোধী আন্দোলনে আমরা দেখি মন্ত্রনালয় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও করার সময় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রোটেস্টদের কোন বাঁধা দেয় নি। গণতন্ত্রের মূল অস্ত্রই হচ্ছে প্রতিবাদ করতে দেওয়া, বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

 

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে দেশ এগিয়ে যাক – তা কেউই চায়না মূলত। এই একতরফা নির্বাচনে শুভংকরের কর ফাঁকি দেওয়ার মত জনগণের মতামত কে ফাঁকি দিয়ে পাছে ব্যাংক লুটেতরাজ, সন্ত্রাসীরা না সংসদের প্রতিনিধিত্ব করে বসে আবার।

 

এ মুহুর্তে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো র দিকেই তাকিয়ে আছে দেশ এক মুটো আশা নিয়ে। গত তিন দিনের সর্বমহলে তার ছুটাছুটি / সংলাপ আমাদের বিষণ্ণ মনণে কি কিছুটা আলো দেখাচ্ছে না?   লিখাটি যখন পাঠক কূলের কাছে পঠিত হচ্ছে, তখন কি থমকে যাওয়া গণতন্ত্রের ট্রেণের হুইশেল ধ্বনি শ্রবিত হচ্ছে আমাদের কানে?

Read Full Post »

ফুটবলে ইনজুরি টাইম কিংবা ক্রিকেটে স্লগ ওভারে যখন খেলা গড়ায় তখন মাঠে থাকা খেলোয়াড়েরা এমনকি সংশ্লিষ্ট সাপোর্টার রা নিয়ম কানন মেনে চলা, সহনশীলতা প্রদর্শনের চেয়ে নিজেদের লক্ষ্যে পৌছুতে উদগ্রীব থাকে বেশি। বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট এখন ইনজুরি টাইম কিংবা স্লগ ওভারে গড়িয়েছে। স্নায়ুচাপে ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত ফাউল করা অথবা স্ট্যাম্প ছেড়ে রিস্ক নিয়ে সজোরে ব্যাট চালানোর মতই ঘটনা প্রবাহ চলমান বর্তমান সময়ের এ সংকটময় মুহুর্তে।

 

ইনজুরি সময় শুরু হয়েছে মূলত ২৭শে অক্টোবর যেদিন থেকে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। উদ্দেশ্যহীন ফোনালাপ ও বিএনপি সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকারের স্নায়ুচাপের যে বাউন্স বলগুলি ছিল, বিরোধী দল তা ঠেকিয়েছে হরতাল ও বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে। আপাত ফলাফল কয়েকটি অকাল মৃত্যু ও নাগরিক জীবনে তীব্র দুর্ভোগ। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াকু মানুষগুলির মাঝে যখন ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দেখানো কিছু দায়িত্বশীল(!) ব্যক্তির বিবেক পুনর্জীবিত হয়, তখন অনেকেই রাজনীতির ঘূর্ণিয়মান সংকটে নিজেদের ভাগ্য সঁপে দেয় মনের অজান্তে। কি আর করা,  আমাদের কপালটাই এরকম – এ টাইপ। আর আমাদের দায়িত্বশীলতাই এরকম যে, হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ মৃত্যুশয্যায় রোগী দেখা শেষ করে ‘মিট দ্য প্রেস’ স্টাইলে বিপক্ষ দলের মনুষ্যত্বের জাত  নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাহবা নেয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম খেটে খাওয়া সাধারণ সিএনজি চালক কিংবা একজন দোকান কর্মচারী যখন অন্নের তাড়নায় বাইরে বের হয় আর ভাগ্যের নির্মমতাকে বরণ করে অগ্নিদগ্ধ হয়, তখন স্বজনদের অশ্রুর প্রতিটি কণায় ধিক্কার জন্মে আমাদের দেশের  গতানুগতিক রাজনীতির প্রভাবকদের প্রতি। এ অশ্রু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাক করানো নয়। এ অশ্রু সদ্য বিধবা হওয়া কোন রমণীর কিংবা পিতা হারানো অবুঝ কোন নির্বাক শিশুর।

 

অপরদিকে ক্যামেরার ফ্ল্যাশে চাকচিক্যময় হয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে আশির্বাদ নেওয়া কতিপয় মন্ত্রীদের পদত্যাগ পত্র প্রদানের পর্ব।  পূর্ব ঘোষণা দিয়ে তারিখ বিহীন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র পেশ হীরক রাজার দেশের উপাখ্যান হয়ে দাঁড়ায় যেন। অতঃপর নিজ নিজ দাপ্তরিক কাজ বহাল তাগিয়দে চালিয়ে যাওয়া এবং দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের স্ববিরোধী যুক্তি উপস্থাপন কে ছাপিয়ে উঠেছে সংবিধানের প্রকৃত বিশ্লেষণ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেখানে তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি বারবার প্রত্যাখ্যিত হয় সরকারের কাছ হতে, সেই সরকার পদত্যাগ নাটকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপন করার যে প্রেক্ষাপট সাজিয়েছে তাতে সংবিধানের তাৎপর্য্য নাকি সুবিধাপ্রাপ্তির হাতিয়ার, এ প্রশ্ন সাধারণ আম জনতার জাগতেই পারে বৈকি। স্লগ ওভারে এ ধরণের ঘটনাপ্রবাহ স্নায়ুচাপের ফল হিসেবেই গণ্য হতে পারে।

 

সতের তারিখ সহিংস রাজনীতির এ সময়ে মোটামুটি অন্যরকম একটি দিন। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের খালাস হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের আনন্দ মিছিল ছিল গত পাঁচ বছরের আদালত প্রাঙ্গনের বিপরীতে অন্য ধরণের এক চিত্র।  একই দিন পাঁচ বিএনপি নেতার রিমান্ড স্থগিত হওয়াটা ও ব্যতিক্রম এবং আকর্ষিত, চমকানো ছিল শান্তিকামী আশাবাদি জনগণের। তৃতীয় নয়নে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে – মার্কিন প্রতিমন্ত্রী নিশা দেশাই কে উপহার নয়তো? নাকি কথিত সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের নিমিত্তে সামান্য উপঢৌকন।

 

অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনীতির বহুমাত্রিক সেলিব্রিটি হু মো এরশাদ নিজেকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন  নিজের কথার মাত্রাতিরিক্ত বরখেলাপ করে। একদিকে – গত পাঁচ বছরে নিজ ভাইকে মন্ত্রীসভায় রেখে সরকারের প্রভাবকে ব্যবহার করা, ব্যাংক নিজ নামে অনুমোদন নেওয়া , অন্যদিকে মাঝে মধ্যে সরকারের চড়কদার সমালোচনা করে নিজেকে জিহাদি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে জাহির করেছেন। আর আমাদের দেশের মিডিয়া কিংবা বিশ্বাসী জনতা বার বার তার কথায় দুকানে দুরকম শুনে উত্তর – দক্ষিণ মেরুতে তাকে দুলিয়েছেন। শেষমেষ খোলস ছেড়ে – সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের সিদ্বান্ত নিয়ে এরশাদ  মুহুর্তের যে ভেলকি দেখিয়েছেন, তা তারই স্ব-উপলদ্ধি বেইমান হওয়ার আশংকা কে ফ্যাক্টে পরিণত করেছে।  পদুয়া কামরুল হাসানের বিখ্যাত বিশ্ব বেহায়া পোট্রেটের কথা এ প্রজন্ম না জানলে ও নতুনভাবে জানার উপলক্ষ্য তো অন্তত হল।

 

কূটনীতিক পাড়ায় চামচের ঝনঝন শব্দের প্রতিধধনি  বেড়ে গিয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মজিনার বাসায় বিএনপি-আ লীগ – জামায়াত প্রতিনিধি যখন ঝলমলে আলোতে ডিনার করে তখন সেই ডিনারে চামচের আওয়াজে বিভিন্ন ব্যখ্যার সুরধধনি শ্রবিত হয়। সমঝোতার সুরালয়ে এ সুরধধনি থেকে শ্রুতিমধুর সঙ্গীত নিঃসৃত হলে তা হবে ষোল কোটি মানুষের জন্য বাড়তি পাওনা।  ভারত-আমেরিকা যৌথ উদ্যোগে আমাদের দেশের রাজনীতির সংকট নিরসনে সপ্রণোদিত হয়ে সমাধানের যে মেডিসিন বানাচ্ছেন তার কার্যকরিতা এখনো বুঝা যাচ্ছেনা। তবে অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করার কোন হঠকারী, অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেসক্রিপশন যদি সরকার বিদেশী মহল থেকে পায়, তা হবে সন্নিকটের ধোঁয়াশার নতুন নামান্তর। এ সময়ের অতিথি প্রভাবক নিশা দেশাই এক প্রবন্ধে তো লিখেই ফেলেছেন – বাংলাদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে আসতে পারে দু দলের ব্যর্থতার সুযোগে।

 

আপাতত স্লগ ওভারের সময় কিংবা স্নায়ুচাপ এখন ই শেষ হচ্ছেনা। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কদিন। দেখা যাক – শেষ কথা বলে কিছু না থাকা রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকে ইনজুরি টাইমের শেষ বাঁশিটি সন্তোষজনক হয় কিনা।

 

বিঃদ্রঃ– গত সতের তারিখ ছিল মজলুম জনতা মাওলানা ভাসানির ৩৭ তম মৃত্যুদিবস। আজীবন সংগ্রামী এ কালজয়ী  রাজনীতিবিদ আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে নিঃসার্থভাবে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে কাজ করে যেতে হয়। উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর মাওলানা ভাসানি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন এ দেশের মাটি, নিপীড়িত মানুষের জন্য। ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ও ফারাক্কা লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন মজলুম এই জননেতা।  আজকের বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় অনেক রাজনীতিবিদের আদর্শিক গুরু মাওলানা ভাসানি। মুল্যবোধের রাজনীতির অভাব পূরণে ভাসানির দেখানো পথে এ সময়ের রাজনীতি আলোকিত হোক।

 

Read Full Post »

কোন সন্দেহ নেয় সারা দেশ এখন প্রবল উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সবদিকেই রাজনীতির সমকালীন এ প্যাঁচের প্রভাব পড়ছে।  এ মুহুর্তে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নীচের চারটি সম্ভাবনার যে কোন একটির দিকে যাচ্ছে মূলত।

(১) সরকার – বিরোধী দল পারস্পরিক ছাড়ের মানসিকতায় আলোচনায় বসবে। আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা বেরিয়ে আসবে এবং সর্বোদলীয় নির্বাচনের দিকে দেশ অগ্রসর হবে।

(২) ক্ষমতাসীন দল বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের আয়োজন করবে। সহিংসতা বাড়বে। আঠারো দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করবে আর নির্বাচনোত্তর সরকারের স্থায়িত্ব কতদিন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

(৩) সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকবে। বিরোধী দল রাজপথে অধিকার আদায়ের চেষ্টা করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কে ব্যবহার করে জরুরী অবস্থা জারি হবে। সংকট প্রবলতর হবে।

(৪) অগণতান্ত্রিক শক্তির উন্মোচন হবে যার প্রভাব লংটার্মে খুব সুখকর নয়। আমাদের নিকট অতীতে তা আমরা বারবার দেখেছি।

 

অনস্বীকার্য এবং অত্যাবশ্যকীয় হচ্ছে,  আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রথম সম্ভাবনাটির কার্যকরিতাই সবার প্রত্যাশিত ও আকাঙ্ক্ষিত। উপরিউল্লিখিত চারটি সম্ভাবনা অনেকটা ‘যদি-তবে’ নির্ভর, অর্থাৎ যদি প্রথমটি না হয়, তবে দ্বিতীয়টি। যদি দ্বিতীয়টি না হয়, তবে তৃতীয়টি…এভাবে।

আমি আশাবাদি মানুষ এবং বিশ্বাস করি এ দেশের অধিকাংশ মানুষই তাই। প্রথম সম্ভাবনাটিই আলোচনা করি।

 

ঈদের ছুটির রেশ কাটতে না কাটতেই জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জট খুলার প্রথম প্রয়াস ছিল। ‘এক চুল নড়বনা’ ঘোষণা থেকে সরে এসে বিরোধী দল থেকে মন্ত্রীত্বের লিস্ট চেয়ে প্রস্তাব দিলে ও প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে খোলাসা না করাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি মূলত অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক ঠেকে বিরোধী দলের কাছে । পরবর্তীতে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দেওয়া ৯৬ ও ২০০১ সালের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ৫ জন করে উপদেষ্টা নেওয়ার প্রস্তাবে নির্দলীয় তত্বাবধয়ায়ক সরকারের ছায়া থাকলে ও এর সত্যিকারের কার্যকারিতা নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন উঠে। দু নেত্রীর পাল্টাপাল্টি প্রস্তাবদ্বয় যুক্তি-তর্কে শতভাগ গ্রহণযোগ্য না হলেও জাতির সামনে সমস্যা সমাধানের আলো হয়ে আবির্ভূত হয়।  তবে সবচেয়ে প্রত্যাশিত চমকটি  আসে যখন বিরোধী দল সংসদে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করে। সরকারের তরফ থেকে বারবার আহবান করা হচ্ছিল যাতে বিরোধী দল যে কোন প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় জমির উদ্দিন সরকারের মাধ্যমে যখন প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়, সরকারী দলের তোফায়েল আহমেদ তার বাগ্নীতায় প্রস্তাবটি খন্ডান। পরবর্তীতে এম কে আনোয়ার অনেক সহনশীল এবং গঠনমূলক ভাবে প্রস্তাবটির মূল উদ্দেশ্য সংসদে  তুলে ধরেন এবং ক্যাটাগরিক্যালি সরকার প্রধান নিয়ে বিতর্ক সমাধান হলেই বাকি সদস্য অন্তর্ভুক্তির সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু এর পরেই আওয়ামিলীগ সিনিয়র সদস্য শেখ সেলিম অনেকটা অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাসনামাল টেনে আনলে সরকারের সত্যিকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং বিরোধী দল ওয়াক আউট করে। সংসদীয় তর্কাতর্কি তে সমাধানের পথ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়।

 

২৪অক্টোবর প্রেসক্লাবের সেমিনারে বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া পরের দিন (২৫ অক্টোবর)  থেকে বর্তমান সরকারকে অবৈধ  বললে ও পরের দিন  সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের বিশাল সমাবেশে ২৪শে জানুয়ারির আগের নব্বই দিন হিসেব করে বলেছেন এ সরকার কার্যত ২৭ অক্টোবর থেকে  অবৈধ । এই সমাবেশ থেকেই সাতাশ থেকে উনত্রিশ তারিখ পর্যন্ত ষাট ঘন্টার টানা হরতাল ঘোষিত হয়। যদি ও বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যদি আলোচনার পথ উন্মুক্ত না হয়, তবে এ কর্মসূচী কার্যকর হবে।  সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ  বলাটা নীতিগত না হলেও ধরে নিতে হবে এটি একটি রাজনৈতিক বক্তব্য এবং নেতা কর্মীদের রাজপথে উজ্জীবিত করার মন্ত্র। যদিও বেগম জিয়ার মুখ থেকে দুধরণের সময় লাইন ঘোষণা সচেতন নাগরিকদের চিন্তায় ফেলে দেয় কতটুকু হোমওয়ার্ক করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বিরোধী দল।

 

এর পরের দুদিন ছিল দু নেত্রীর ফোনালাপ নাটক। লাল টেলিফোন, সংযোগ পাওয়া না পাওয়া, শিডিউল সীমাবদ্বতা এবং সত্যিকারের সদিচ্ছা নাকি লোকদেখানো বিবিধ নাটককে পাশ কাটিয়ে ২৬শে অক্টোবর ২০১৩ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্নরণীয় হয়ে থাকবে দু নেত্রীর সাইত্রিশ  মিনিটের কথোপকথনের কারণে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর (জুন ২০১১) মাধ্যমে  যেহেতু এ সমস্যার উদ্ভব, তাই এক আলাপে আড়াই বছর আগে সৃষ্ট এ সমস্যা সমাধান হবেনা। তাইতো আটাশ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর ডিনার কাম আলোচনার আহবানকে রাজনীতিকভাবে মোকাবিলা করে বেগম জিয়া বলেছেন হরতাল শেষে অর্থাৎ উনত্রিশ তারিখের পর যে কোন সময়। প্রশ্ন উঠেছে, কেন খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করলেন না। বস্তুত এ মুহুর্তে বিএনপি র সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সরকার বিরোধী তীব্র জনমত যার সর্বোত্তম ব্যবহার দলটি রাজপথে প্রমাণ করতে চায়। তাইতো ঘোষিত হরতাল কে তুলে নেওয়ার কৌশল দলটি নিতে চায়নি। দলটি হয়ত ভাবছে হরতাল তুলে নিলে সাময়িক বাহবা মিলবে কিন্তু নেতা কর্মীদের চাঙ্গাভাব ঢিলে হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে সরকারী দলের মূল অস্ত্র হচ্ছে সংবিধান। সংশোধিত সংবিধানকে দোহাই দিয়ে তাই ক্ষমতাসীনরা নিজেদের বাগ্নীতার মাধ্যমে বিরোধীদের শানিত করছেন। হরতালের সংঘাত-প্রতিঘাতকে ছাপিয়ে এ মুহুর্তের আন্তরিক প্রতীক্ষা আর আকাংখা হচ্ছে ঊনত্রিশ তারিখের পর দু দল আলোচনায় বসা শুরু করবে আর একটি সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে। সরকার প্রধান কে হবেন এ বিতর্কের অবসান সাত নভেম্বর সংসদের শেষ কার্যদিবসের আগেই হয়ে যাবে আশা করতে পারি।

 

যেহেতু ২৪শে জানুয়ারি এখন নব্বই দিনের ফ্রেমে চলে এসেছে, তাই নির্বাচন কমিশন এখন আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা। সাংবিধানিক ভাবে পুরোপুরি শক্তি না থাকলে ও এ মুহুর্ত থেকে যদি নির্বাচন কমিশন লেবেল প্লে ফিল্ড নিশ্চিত করার কিছু এভিডেন্স দেখাতে পারে তবে তা হবে তাদের আস্থা অর্জনের অন্যতম কারণ। যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার  এখন থেকেই সমালোচিত ডিসি, ইউএনও, এস পি বদলির সুপারিশ করেন সরকারের সর্বোচ্চ মহলে তা হবে সবচেয়ে কার্যকরী। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হলে ও যে নির্বাচন কমিশন কে একই মিশনে কাজ করতে হবে। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত দু দলের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটানো মাঠ পর্যায়ে যাতে ২৪ জানুয়ারীর আগেই নবনির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।

 

আপাতত প্রত্যাশিত মনে তাকিয়ে রয়লাম দুদলের খোলা মনের আলোচনার সম্ভাবনার দিকে। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করে বিশ্ব রাজনীতিতে রুল মডেল হওয়ার এ চান্স মিস করতে আমরা কেন চাইব?

 

Read Full Post »

পূজা, ঈদের ছুটি শেষে চাপা অস্থিরতায় কোনোমতে কর্মস্থলে ফিরেছে ব্যস্ত মানুষ,  মনের গহীনে অস্থিরতা আগত দিনগুলিতে দেশ কোনদিকে যাচ্ছে। ঈদের পর পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, এর পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের সাক্ষাৎ, আওয়ামিলীগ-জাতিয় পার্টির যৌথ সংবাদ সম্মেলন- তাতে বিএনপি নির্বাচনে না এলে ও নির্বাচন করার ঘোষণা,  পরের দিন এরশাদের ইউটার্ণ  ও বিএনপি না এলে জাতিয় পার্টি  নির্বাচন বয়কট করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো, এরপর বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রেস কনফারেন্সে নতুন ফর্মুলা, বিএনপি থেকে আওয়ামিলীগ কে আনুষ্ঠানিক  চিঠি, তদোত্তরে সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব কে আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদকের ফোন তথাপি কূটনীতিবিদদের তৎপরতা; আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে  বহুল প্রত্যাশিত প্রশান্তির বৃষ্টির প্রাক্কালে মেঘের বরফ কণাগুলো জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। গত বাহাত্তর ঘণ্টায় যেভাবে দেশের দু প্রধান দল ব্যপ্তিময়তা দেখাচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা আশার প্রয়াসই খুঁজে পাচ্ছি। নিন্দুকেরা যতই নিন্দা আর হতাশা দেখাক না কেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাকপটু রাজনীতিময় সমসাময়িক এ সময়ে অহিংসতার পথ ছেড়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকেই হাটছে এ দেশের রাজনীতির আগত সময়, অনুধাবনযোগ্য। কার্যত, সহিংসতা আর অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতে দীর্ঘসময় যে দেশ নিরাপদ নয়, তা বড় দুদলের চেয়ে ভাল আর কে বুঝে। আর জনগণের নার্ভ বুঝার ক্ষমতাও দু দলের হর্তাকর্তাদের আছে।

 

কিছুদিন আগে হলে ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ফর্মুলা এখন পুরনো কিন্তু জট খুলার প্রথম প্রয়াস। বিরোধী দল থেকে মন্ত্রীত্বের লিস্ট চেয়ে তিনি  বিএনপি কে নিজেদের নমনীয়তা দেখিয়েছেন আর বুঝিয়েছেন আলোচনার দ্বার উন্মোক্ত হলো। নিন্দুকেরা সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব সমাধানের পথ খুলবেনা। আশাবাদীরা বুঝেছেন এক চুল নাড়াতে পারবেনা বলে ঘোষণা দেওয়া নেত্রী যখন এ ধরণের সমঝোতার ডাক দিয়েছেন, তখন এর মধ্যে আশার দৃপ্তি তো আছেই। তাইতো ট্র্যাডিশনাল ধারায় বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন, ফর্মুলাকে গ্রহণ করেন নি কিন্তু নিজেরা ফর্মুলা দেওয়ার হোম ওয়ার্কে বসেছেন এবং দু দিন পরেই বিরোধী দলীয় নেত্রী অনেকটা তত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নতুন প্যাকেটে নিয়ে এসেছেন আর রাজনীতির মজ্জা বিশ্লেষকদের ঘুম হারাম করেছেন। কারণ এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার প্রয়াসে ৯৬/২০০১ উপদেষ্টাদের জীবিত যারা আছেন তাদের শারীরিক সামর্থ্য আর আগ্রহ নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। প্রধানমন্ত্রী গতানুগতিক ধারায় এ ফর্মুলাকে ব্যাকডেটেড বলে রিজেক্ট করেছেন কিন্তু আগের মত সেই হুঙ্কার অনুপস্থিত।  এসবের মাঝেই গণতন্ত্রের মধুর নির্যাস সুপায়িত হচ্ছে।

 

পঙ্কজ – মজিনা বৈঠক , জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের খবরদারি, দাতা দেশগুলোর মধ্যে প্রাণ আসা সহ নানা কারণে মনে হচ্ছে দেশ সঠিক পথেই এগুচ্ছে। যদি ও, তাত্বিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় একজন সংবাদ সম্মেলন ও অপরজন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নিজ নিজ ফর্মুলা দিলেও কার্যত দুজন তাদের পূর্বাবস্থাতেই আছেন। কিন্তু দু দলের সহ অধিনায়ক দুজনের  [ফখরুল – আশরাফ] অভিব্যক্তি আশাব্যঞ্জক ও অনুপ্ররণীয় শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য। বিশেষ করে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন চলার সময় আশরাফুল ইসলামের ফোন ও অতঃপর ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘হয়ে গেছে’ অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে যে মুচকি হাসি হেসেছেন তাতে সস্তি পেয়েছেন শান্তিকামীরা। অপরদিকে বিএনপির দেওয়া চিঠি পেয়ে পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে আওয়ামিলীগ ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন আর ব্যখ্যা দিয়েছেন সম্পর্ক যাতে তিক্ততার দিকে না যায় সেদিকে তারা ওয়াকিবহাল। এইতো গঠন শীল আর বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির প্রয়াস।

 

চেরাগের আলোর দীপ্তির নিচে ও কালি জন্মে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে সহিংসতা বন্ধ হবে নাকি অস্থিরতা বাড়বে, তা বোধগম্য নয়। তবে পঁচিশ তারিখের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে পরস্পর বিরোধী কথাযুদ্ধ থাকলে ও তা যাতে রক্তাক্ততার দিকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। বিরোধীদল সংসদে নিজেদের প্রস্তাব উত্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা দেরীতে হলে ও প্রশংসনীয়।

 

দুনেত্রীর দুফর্মুলার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আছে, সর্বমহলের সন্তুষ্টি অর্জন করা ও রাতারাতি সম্ভব নয়। অন্তত পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার যে পথের সূচনা হয়েছে তা যাতে অবরুদ্ধ না হয়। প্রয়োজনে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিন্তু জনকল্যাণকর কোন প্রস্তাব ও সমাধানের পথে হাঁটা সম্ভব চলমান সংসদ অধিবেশনকে কাজে লাগিয়ে এবং শীঘ্রই। লক্ষনীয় এবং আবশ্যক হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার প্রধাণ  যাতে নির্দলীয় হয় যার প্রস্তাব বিএনপি চেয়ারপার্সনের লিখিত বক্তব্যে আছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনুপস্থিত।  এ মৌলিক ইস্যুটি সমাধান হলেই কার্যত সমাধানের রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যায়।

 

তাইতো পুরো দেশ আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে রাজনীতির সস্তির বৃষ্টির প্রতীক্ষায়।

Read Full Post »

পুরো দেশ এখন উৎসবের আনন্দে ভাসছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় পূজা আর পবিত্র ঈদুল আযহার নির্মলতার মাঝে এক ধরনের চাপা গুমোট আর অনিশ্চিয়তার নিমিত্তে বিষণ্ণতা কাজ করছে সবার মাঝে। ২৪ অক্টোবরের পর দেশের পরিস্থিতি কি হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে সরকার, বিরোধী দল কেউই নিশ্চিত না তাদের কর্মোপন্থা কি হবে দেশের বিপজ্জনক এই সময়ে। কূটনীতিক পাড়ায় ও থমথমে অবস্থা বিরাজমান।

 

বায়োস্কোপের জানালায় তাকিয়ে দেখি সাম্প্রতিক সময়ে সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন, সুশীল সমাজ কিভাবে সময় পার করছে আর জনগণের প্রত্যাশার আহবান ই বা কতটুকু।

 

গেল মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের ৬৮তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য রেকর্ড সংখ্যক ১৪০ জনের বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বহর যখন নিউইয়র্ক জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ম্যানহাটন গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল পর্যন্ত পৌছুতে চল্লিশ মিনিটের রাস্তা ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে আড়াই ঘন্টা সময় নেয়, তখন যাত্রালগ্নে  চিরাচরিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠে। পুরো সফরকালীন সময়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সফরকারীদের শপিং-ঘুরাফেরা, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্বলিত পুস্তিকার  প্যাকেটকে নিরাপত্তা রক্ষীরা বোমা সন্দেহ করলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের সামনে আতংক ছড়িয়ে পড়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অফ দ্যা রেকর্ড মুন্নি সাহার কথোপকথনের রেকর্ডকৃত ট্যাব জব্দ  করা সহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান কেন্দ্রিক মিশনে নিউইয়র্ক যেন মুহুর্তের বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। এতকিছুর পর ও পুরো দেশ তাকিয়ে ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিকে। দেশের জন্য নতুন কোন নির্দেশনা কিংবা গাইডলাইন না থাকলেও বিরোধী দলের প্রতি বিষোদ্গার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহবান ঠিকই ছিল। এরপর দেশে ফিরে ঢাকা, চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার উদ্ভোবন সহ বিভিন্ন প্রকল্প চালু করে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছেন আর সংসদ বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে সংসদে বলেছিলেন, চলমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবেনা। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার কি হবে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি যেভাবে নির্দেশনা দিবেন, সেভাবেই সরকার বহাল থাকবে। আর এখন সরকার দলীয় সিনিয়র নেতারা পাল্লা করে বলছেন নির্বাচন পর্যন্ত অধিবেশন চলবে।

বিএনএফ নামের নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিই দেয় এবং তাও যদি গমের শীষ কিংবা ধান গাছ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে , তা হবে বর্তমান কমিশনের আস্থা হারানোর চূড়ান্ত ধাপ। একইভাবে বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেংকারিতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলেও তাতে নাম নেয় তখনকার পরিচালনা পরিষদের কারো, যাতে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বয়ং প্রশ্নবিদ্ধ।

 

প্রথম আলোর জরিপে সম্প্রতি ফুটে উঠেছে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের প্রতি জনগণের আকাংখা।  এক ই জরিপে বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও চিহ্নিত হয়েছে। সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাসের এ সুযোগকে বিরোধী দল এখনো সীমাবদ্ধ রেখেছে সেমিনার ও কর্মী সমাবেশে। কিছু দিন পর পর বিভাগীয় শহরগুলিতে বিরোধীদলীয় নেতা বিশাল বিশাল সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক দিলেও কর্মীদের চাঙ্গাভাব এখনো রাজপথে প্রসারিত হয়নি। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বেগম জিয়া কি বার্তা পৌছান , তাই দেখার পালা এখন।  পঁচিশে অক্টোবর সরকারী দল ও বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছেন রাজধানীতে। এর পরের দিনগুলি যে সংঘাতময় তা বুঝার জন্য মনে হয় ম্যাগ্নিফাইয়িং গ্লাসের প্রয়োজন নেয়। কিন্তু এরপর ও দু দলের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যদি নির্বাচন কেন্দ্রিক দুটানার অবসান হয়,  তবে তা হবে পুরো দেশবাসির জন্য প্রশান্তিময়।

 

গেল সপ্তাহ ছিল আমাদের কক্সবাজারের জন্য অর্জন ও হারানোর  আনন্দ – শোকে উদ্বেলময় সময়। জেলার কৃতী সন্তান মমিনুল হক সৌরভ বাংলাদেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ্বে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানের কাব্যিক ইনিংস খেলে তারিফ পেয়েছেন পুরো দেশের। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করে ব্যারিষ্টার হওয়ার স্বপ্নময় পথ পাড়ি দেওয়ার যাত্রায় বন্ধুদের লোলুপ ফাঁদে পড়ে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়নের রিফাত। একবিংশ শতাব্দির এ সময়ে এ দেশের তারুণ্যের একাংশ যেখানে প্রযুক্তি ও কল্যাণের প্রয়োজনে নিজেদেরকে উত্তরিত করে চলছেন বীরদর্পে, আরেকাংশ সেখানে বেকারত্ব, দারিদ্র্যের অভিশাপে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে মাদক, রাজনীতির ঢাল, সন্ত্রাসে ভর করে তারূণ্যের শক্তিকে পচন ধরাচ্ছে। এ ধরণের পচনশীল তারুণ্যের শিকার মেধাবী রিফাত। দল মতের উর্দ্ধে থেকে যদি এ দেশের রাজনীতিবিদ তথা দিক নির্দেশনাকারীরা তারুণ্যেকে গাইড করতে না পারে তাহলে এ দেশের মূলশক্তিই যে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাবে। যে দেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের ও বেশি তরুণ সে দেশের সোনালী সম্ভাবনা কে দাঁড় করাতে পারে এ দেশের রাজনীতিবিদরা।

ঈদুল আযহার ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কল্যাণে নিবেদিত হোক আমাদের পথ প্রদর্শকরা, যাতে একটি স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত হয় অন্তত।

Read Full Post »

দুর্নীতি নিয়ে কথার তীর, অভিযোগ – পাল্টা অভিযোগ এখন আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ্ব নেয়। বিগত এক দশক ধরে আমরা খেয়াল করেছি দেশী মিডিয়া, আদালতের রায়, দুদকের মতামত, এসব দুর্নীতি পর্যবেক্ষন কেন যেন আমাদের মনে আস্থা সৃষ্টি করতে পারছেনা। বিদেশের মিডিয়া, বিদেশের বিশেষ কোন সংস্থা প্রতিবেদন করলেই আমাদের চোখ ছানা বড়া  হয়ে যায়। মজার ব্যপার হচ্ছে , এ বিষয়টি নিয়ে দেশের বৃহৎ দু দলই অভিযোগ করে আর অভিযুক্ত হয়। এক ট্রান্সপেরেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির র‍্যাঙ্কিং যেদিন প্রকাশিত হয় সেদিন বিরোধী দল যেন তুরুপের তাস পেয়ে বসে সরকারকে চেপে ধরার। সরকার ই বা চুপ করে বসে থাকবে কেন। তাদের যুক্তি, আগে নীচের দিক থেকে এক ছিলাম এখন দু কিংবা তিন। বিষয়টা এমন – তুমি যখন গোল রক্ষক তখন খেয়েছিলে তিনগোল আর আমি খেয়েছি দু গোল , তাই আমি ভাল। কিন্তু দু জনই যে হেরে যাচ্ছে তাতে মনে হয়না কারো মাথাব্যথা আছে।
পদ্মা সেতু ইস্যুতে হাসান – হোসেনের দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে কানাডা পুলিশ অভিযুক্ত করল বিগত (৯৬ – ২০০১) আওয়ামি সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসানকে। আর এতে মনে হল আমাদের অর্থমন্ত্রী হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ভাগ্যিস- হোসেনের নাম তো আসেনি। যেহেতু হোসেনের নাম আসেনি আর হাসান তো আওয়ামিলীগ ছেড়ে পিডিবি তে গিয়েছেন আগেই, সেহেতু নিজেদের বিজয় দাবি করছেন সরকারি মহল। দুর্নীতি কমিশন ও সন্তুষ্টি জানিয়েছেন কানাডার এ রায়ে। অভিযুক্ত কেভিন ওয়ালেস দুদকের তালিকায় আগে থেকেই ছিলেন বলে নিজেদের দুর্নীতি পর্যবেক্ষনের বিচক্ষণতা নিয়ে আত্ন প্রশংসা করলেন দুদক কর্মকর্তারা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক জালিয়াতি হলমার্ক ইস্যুতে দুদকের প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। হলমার্কের এমডি আটককৃত তানভীর স্বীকারুক্তিতে ১৬৪ ধারায় পরিচালনা পরিষদের কতিপয় সদস্যের নাম আনলে ও তা আমলে নেয়নি দুদক। অভিযুক্ত তালিকায় আনা হয়নি তখনকার পরিচালনা পরিষদের কারো নাম। পাছে দুর্নীতির অভিযোগে কতিপয় অভিযুক্তের দোষে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।  এ কারণেই হয়ত আওয়ামিলীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ দম্ভোক্তি করেন , “কানাডার রায় প্রমাণ করেছে দুর্নীতিতে সরকারী দলের কেউ জড়িত নেয়”।

তবে পাবলিকের মনে গেঁথে যাওয়া রেলের কালোবিড়াল, শেয়ার বাজার জালিয়াতি, হলমার্ক কেলেংকারি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ইস্যুতে অভিযুক্ত আবুল হোসেনের দেশপ্রেমিক বনে যাওয়া সহ নানা ইস্যুতে ক্ষত তো থেকেই গেল।

 

শুধু কি বড় বড় দুর্নীতি! সরকারের নানা সদিচ্ছা যেখানে জেলা প্রশাসন সহ সরকারি অনেক নথির ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা চালু হয়েছে , এসবের পর ও কতিপয় নিজেদের প্রভাবশালী নেতা দাবি করা হর্তা-কর্তারা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন, এমন কি আমলাদের প্রভাবিত করার পাঁয়তারা করেন আর ভুক্তভোগীদের মিথ্যে আশ্বাস দেন – এসব কে দুর্নীতির কোন স্তরে রাখা হয় তা জনগণ জানে। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে তাইতো এসব কম বেশি দুর্নীতির বিচার হয়েছে মানুষের বিবেকের ধিক্কারে। আপাতত ব্যালেট বাক্সকেই এ বিবেক ধরা হয়। নব্বইএর পর আমাদের দেশের ইতিহাস ও তো তাই বলে।

ইন্টারনেট থেকে পাওয়া একটি গল্প শেয়ার করে ইতি টানছি আজ এখানেই।

 

কনফারেন্স শেষে তিন আমলার দেখা হয়েছে কোন এক রেস্টুরেণ্টে। একজন চীনের, অপরজন ভারতীয় ও অন্যজন আফ্রিকান। তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে বিগত এক দশক ধরে পূর্ব পরিচিত। আড্ডার এক পর্যায়ে তিনজন ই উপলদ্ধি করল তাদের দেখা হয় প্রতিবছর জাতিসংঘের কনফারেন্সে। প্রতিবছর এভাবে দেখা হতে হতে তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আপনজন। তো এবার তারা সিদ্ধান্ত নিল তারা পালাক্রমে প্রতি কনফারেন্সের পর প্রত্যেকের বাড়িতে কটা দিন ছুটি কাটাবেন ও আয়েশ করবেন।

প্রথমেই গেলেন চীনা কূটনীতিবিদের বাড়ি। বেইজিং এয়ারপোর্ট থেকে আরেক ফ্লাইটে কোন এক প্রদেশে গিয়ে ছ লেনের এক রাস্তার শেষ প্রান্তে বিশাল এক জমিদার বাড়ি চীনা কূটনীতিকের। “চমৎকার বাড়ি বানিয়েছ বন্ধু। সরকারি চাকরি করে ও কিভাবে বানালে তুমি?” কৌতুহলী জিজ্ঞাসা আফ্রিকান কূটনীতিবিদের।

“তোমরা কি খেয়াল করেছ যে ছয় লেনের নতুন হাইওয়ে যেটি দিয়ে আমরা এসেছি। ও হাইওয়ের জন্য বরাদ্ধকৃত বাজেটের অল্প কিছু টাকা দিয়ে আমি এ অট্টালিকা বাড়ি বানিয়েছি।“  — চীনা ভদ্রলোকের জবাব।

ভারতীয় ও আফ্রিকান ভদ্রলোক শুনে অবিভূত হলেন ও পরের কদিন ফুর্তি ও আরামে কাটিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন পরের কনফারেন্সের পর যাবেন ভারতীয় কূটনীতিবিদের বাড়ি।

একবছর কেটে গেল। কনফারেন্সের পর পরিকল্পনানুযায়ী দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকে আরেকটি বিমানে আসলেন ভারতের এক প্রদেশে। ওখান থেকে সরু, জীর্ণ এক রাস্তা দিয়ে ঝাঁকুনি খেতে খেতে এসে পৌছালেন প্রাসাদসম এক বাড়ির আঙ্গিনায়। হ্যা, এটি ভারতীয় ভদ্রলোকের বাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই চীনা কূটনীতিবিদ চমকিত হলেন , “এত বড় বাড়ি করতে এত অর্থ পেলে কেমনে?” ।

ভারতীয় ভদ্রলোকের সহজ জবাব , “ আমরা আসার সময় যে রাস্তা দিয়ে এসেছি তার বাজেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে এ বাড়ি করেছি আমি”।

একবছর পর পালাক্রমে কনফারেন্স শেষে এবার তিন বন্ধু মিলে গেলেন আফ্রিকায়। বিমানবন্দর থেকে তারা নামলেন আফ্রিকার জঙ্গলের মধ্যে আরেক এয়ারপোর্টে। ওখান থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে মিলিটারি গার্ড বেস্টিত এক বিশাল প্রাসাদ বাড়িতে এসে পৌছালেন তারা। চীনা ও ভারতীয় কূটনীতিবিদ খেয়াল করে দেখল দু চোখের দৃষ্টি  সীমায় খালি জঙ্গল আর জঙ্গল। দুআমলা ই ভীষণ অবাক হল আর জানতে উদগ্রীব হল কিভাবে তাদের আফ্রিকান বন্ধু এ গহীন অরণ্যে স্বপ্নের মত এ আবাসভূমি করল।

“তোমরা কি আসার সময় কোন হাইওয়ে দেখেছ? “ প্রশ্নের মধ্যেই জবাব আফ্রিকান আমলার।

Read Full Post »

Older Posts »