Feeds:
Posts
Comments

Archive for June, 2013

নবম জাতীয় সংসদের ১৮তম এবং ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সূচনা দিন ৩ জুন ২০১৩, জৌষ্ঠ্যের অপরাহ্ন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি স্নরণীয় মুহুর্ত। এ দিন বিকেলে অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে দেশের  প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী। মহান সংসদের ১২ তম স্পীকার তিনি। জাতীয় সংসদের বর্তমান সদস্যদের মধ্যে যারা স্পিকার হিসেবে দেখেছেন মালেক উকিল, মির্জা গোলাম হাফিজ, শামসুল হুদা চৌধুরী, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, শেখ রাজ্জাক আলি, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, জমির উদ্দিন সরকার এবং সর্বিশেষ আব্দুল হামিদকে, তাদের অনেকেই এখন কন্যাসম শারমিনকে দেখছেন অভিভাবকের চেয়ারে। পাঁচবারের এম পি এবং ডেপুটি স্পিকার হিসেবে অভিজ্ঞ শউকত আলিকে ডিঙ্গিয়ে যখন প্রথমবারের সংসদ সদস্য (তাও আবার মনোনিত নারী আসনের এম পি) শারমিন কে স্পিকার করা হয়, তখন রাজনীতির সব সমীকরণকেই মানিয়ে নিতে হয়।  ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণকারী রাজনীতিবিদ হিসেবে নবীন শিরীন শারমিন কিন্তু একদম উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সচিব। এলএলবি অনার্স ও এলএলএম ডিগ্রি নিয়েছেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে। স্পিকার হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই চার বছর সামলেছেন নারী ও শিশু মন্ত্রনালয়, নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে বিরোধিতা ও সমালোচনা ও শুনেছেন।

 

দেখা যাক এ কদিনে কেমন হ্যান্ডেল করেছেন নতুন এই স্পিকার।  প্রথম দিন নিজ হাতে লিখা যে বক্তব্য শিরীন শারমিন দিয়েছেন তা সর্বিমহলে আলোচিত,প্রশংসিত হয়েছে ইতিবাচক দ্রৃষ্টিভঙ্গের কারণে। জউহরলাল নেহেরু, শেখ মুজিব থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, রবার্ট ফ্রস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে নিজের মেধা ও পান্ডিত্যের প্রমাণ দিয়েছেন। মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, অর্থনীতির সুচক প্রবৃদ্ধি সহ ইতিবাচক দিকগুলোকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে এই অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন সম্মিলিতভাবে সবাইকে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট ও জাতিয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমাধানের পথ খোঁজার বিশ্বাস দেখিয়েছেন লিখিত এই বক্তব্যে। কর্মপ্রেরণা দেখিয়েছেন রবার্ট ফ্রস্টের বিখ্যাত চরণ বলে  … And miles to go before I sleep । শেষ করেছেন রবীন্দ্রনাথে ভর করে  ‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।‘

 

বলা যায় সূচনা দিবসেই একটু ঝাঁজ দেখেছেন নতুন স্পিকার। বিএনপি সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু প্রথম দিনেই প্রশ্ন করেছেন- ‘অনির্বাচিত একজনকে স্পিকার করা গেলে অনির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত তত্বাবধায়ক সরকার মানতে অসুবিধা কোথায়?’ ধারালো এই শুরু দেখেই আঁচ করা যাচ্ছিল সংসদের কথার-তর্কের ক্ষুরগুলো আমাদের সমাধানের পথ দেখাতে পারে। টানা ৮৩ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর চলমান অধিবেশনের প্রথম দিনেই ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ্ব করার প্রতিবাদে ওয়াক আউট করে বিরোধী দল। কিন্তু পরদিন আবার সংসদে ফিরে এসে ইস্যুভিক্তিক তর্কের ঝড় তুলেন বিরোধী দল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা,  স্বরাস্ত্রমন্ত্রীর ব্যাংক ব্যবসা, মানবতাবিরোধী বিচার, মতিঝিলে কোরআন পড়ানো, মতিঝিল হত্যাকান্ড সহ নানা ইস্যুতে সংসদ উত্তপ্ত হয়েছে বারবার। নবাগত স্পিকার নমনীয়তার সঙ্গে ২৭০ ধারা অনুসরণ করে আক্রমনাত্নক, অশোভন ও কটু কথা পরিত্যাগ করে কথা বলার অনুরোধ করেছেন একাধিকবার। এমনকি বিএনপি এম পি আশিফা আশরাফীর উগ্র বক্তব্যের সময় সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী মাইক বন্ধ করার আহবান জানালে ও তাতে সাঁই না দিয়ে পুরো সময় সু্যোগ দিয়েছেন নতুন স্পিকার।

দুর্নীতিবিরোধী ইস্যুতে সোচ্চার ছিল সংসদ সদস্যরা। বিরোধীদলীয় সদস্য গোলাম মোস্তফা হলমার্ক ইস্যুতে সাইমুম, সুভাস ও হেনরির নাম উল্লেখ করে এদের বিচার না করে তানভীরের বিচার করলে বিচারের সাম্যতা থাকবেনা বলে দাবি করেন। হাতেগুনা এসব অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ দের জন্য সরকার যে রীতিমত বিব্রত, তা  নিজ এলাকায় তাদের অনুপস্থিতি, অগ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হ্রাস প্রমাণ করে। ভার্সেটাইল পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে অন্যরকম আত্নবিশ্বাসে থাকা বিজেপি সাংসদ আন্দালিব পার্থ বাগ্নীতার পরিচয় দিয়েছেন আবারো। মার্জিত ভাষায় , যুক্তিকে পুঁজি করে সরকারকে রীতিমত নাকানি চুবানি খাওয়ানোর মত সব ইস্যু একত্রিত করে সেসব কে প্রেসেন্ট করার দক্ষতা আবারো দেখিয়েছেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ। তবে এজন্য পাল্টা কথা ও শুনতে হচ্ছে তাকে। প্রয়াত বাবার বিরুদ্ধে দুর্নীতির পুরাতন অভিযোগের তীরে তীর্য হয়েছেন। পদ্মা সেতু ইস্যুতে আবুল হোসেন ও মশিউর রহমান কে তুলোধুনো করা হয়েছে। সরকার দলীয় সদস্যরা ও ঘুরে ফিরে তুলে ধরেছে হাওয়া ভবন ও বিদ্যুৎ খাতের খাম্বা কেলেংকারি ইস্যু। প্রধান মন্ত্রী স্বয়ং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ১৫ হাজার ১১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বকেয়া থাকার তথ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে, প্রয়াত ভাই ও বিএনপির সাবেক দুই মন্ত্রীসহ কয়েকজন নেতার পনেরটি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু হলমার্ক, ডেসটিনি সহ অর্থ কেলেংকারি ইস্যু যেখানে সরকার দলীয় নেতারা জড়িতের যৌক্তিক অভিযোগ আছে  তা উদ্ধারের কোন পন্থার কথা উল্লেখ করেন নি।

বিরোধীদলের হাতে গুণা কয়েকজন বাগ্নী সংসদ সদস্যরা মূলত হিমশিম খাচ্ছেন সরকারের অজস্র আক্রমনাত্নক সংসদ সদস্যদের কথার তীরে। সরকার বিরোধী অনেক যৌক্তিক ইস্যুগুলো সংসদে ঠিকমত উপস্থাপিত হচ্ছে কিনা প্রশ্ন আসলে স্বাভাবিকভাবেই প্রসিদ্ধ পার্লামেন্টিরিয়ান মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অভাব পরিলক্ষিত হবে বিরোধী শিবিরে। সংসদে কিংবা বাইরে কথা বলতে না পারার জ্বালা মিটানোর চেষ্টা অবশ্য চলছে অবিরত। ট্রাইবুনালে প্রসিকিউটরের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন । রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিদের প্রসিকিউটর শব্দের আদলে ইংরেজি পারসিকিউটর (নির্যাতনকারী) বলতে দ্বিধাবোধ করেন নি নির্বাচিত এই সাংসদ। আড়াই বছর ধরে কারাগারে মানসিক নির্যাতনে রাখার অভিযোগ করেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-১ এ নিজের জবানবন্দিতে পলাশীর যুদ্ধ, খেলাফত আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, চট্টগ্রাম প্রভৃত ঐতিহাসিক ইস্যুতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন তিনি। কথায় কথায় শাসিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষকে এই বলে যে কালের পরিক্রমায় তার এই বক্তব্যগুলোই ডকুমেন্ট হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনির রেফারেন্স টেনে তার পিতা মরহুম ফজলুল কাদের ও শেখ মুজিবের সুসম্পর্কের কথা শুনিয়েছেন ট্রাইবুন্যাল কে। দ্বিজাতিতত্ত্বে বঙ্গবন্ধুর সমর্থন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যতাবাদী শাসকদের হাতে ভারতের মুসলমানদের নির্যাতনের কথা নিজের ভাষায় তুলে ধরেছেন অকপটে। তৃতীয় নয়নে তাকালে আপাত মনে হবে ট্রাইব্যুনাল তর্কটি উপভোগ্য। কারণ রেফারেন্স ধরে ইতিহাস টানা হচ্ছে, তাত্বিক শব্দ প্রয়োগে প্রতিপক্ষকে শাসানো হচ্ছে, যদি ও কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অশুদ্ধ আচরণের অভিযোগ অনেক পুরনো।  তবে সবচেয়ে মৌলিক একটি বিষয় কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক ভাবে তুলে ধরেছেন। রাজনীতিবিদ দের সার্থ-সংস্লিষ্ট কোন সমিতি না থাকা নিয়ে অনুযোগ করেছেন তিনি। জবানবন্দিতে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন- প্রতিটি পেশাজীবি সংগঠনের নিজস্ব সমিতি আছে, কিন্তু রাজনীতিবিদদের নেয়।  তিনি নিজেদের (রাজনীতিবিদদের) মাংশাসী উল্লেখ করে বলেন একমাত্র আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরাই স্বজাতিদের গিলতে উন্মোখ হয়ে থাকে। সংসদের বাইরের এই ট্রাইব্যুনাল আমজনতার কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে এর তথ্য-বিস্তৃতির কারণে।

 

লিখা শুরু করেছিলাম বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পীকারের রুচিশীলতা, তার প্রথম ভাষণ, পরিমিত সংস্কৃতিবোধ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে তার আকাংখার অনবদ্যতা নিয়ে। যে সংসদের নেতৃত্বে মহিলা, সংসদীয় নেতা, উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা মহিলা সে সংসদের নারী প্রতিনিধিদের কাছ থেকে  বর্তমান প্রজন্ম অনেক কিছু আশা করে। বাংলা মিডিয়াম কিংবা ইংলিশ মিডিয়ামের যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসে সংসদীয় বিতর্কে নিজেদের অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে স্বপ্ন দেখে সত্যিকারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার , তারা কি আশাহত হবেনা যখন সত্যিকারের সংসদের অশ্লীল কোন শব্দ তাদের কানে শ্রবিত হবে। হোক সে শব্দ প্রাসঙ্গিক – আশির দশকের সাড়া জাগানো কবি “এখন যৌবন যার , এখনই যুদ্দ্বে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়” খ্যাত হেলাল হাফিজের একটি কবিতা চরণকে উল্লেখ করার মাধ্যমে বি এন পি সাংসদ শাম্মী আক্তার কি নিজের অদম্য সাহসীকতাকে চেনাতে চেয়েছেন হাইকমান্ডের কাছে  নাকি সংগ্রামকে চাঙ্গা করতে চেয়েছেন কর্মীদের কাছে, নাকি সরকারকে ফুসিয়েছেন – তা অনুমেয় নয়। তবে রাজপথের লড়াকু, সরকারের নিপীড়নের স্বীকার এই নারী সদস্য এই পংক্তিচরণ উদ্ধৃত না বললেই পারতেন – বিশেষ করে যেখানে অশ্লীল ও রুচিবিবর্জিত শব্দ আছে। নতুন শিক্ষিত প্রজন্মের কাছে বি এন পি কে জনপ্রিয় করানোর জন্য তরুণ সদস্যদের দায়িত্বের অগ্রাধিকারগুলো ভাবা উচিত এবং তার জন্য তাদের কথা চারণ গুলো আরো মার্জিত ও সংযত হওয়া অবশ্যাম্ভাবী। তবে সব অশ্লীলতাকে ছাড়িয়ে গেছে সরকার দলীয় সদস্য অপু উকিলের কুৎসিত ও রুচিবিবর্জিত বক্তব্য। বিরোধী দলীয় নেত্রী ও তার দু সন্তান সম্বন্ধে যে প্রমাণহীন নোংরা অভিযোগ সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে, তা খবরের কাগজে প্রকাশ করতে গিয়ে দায়িত্বশীল সম্পাদক ও ছাপাতে ইতস্ততবোধ করবে। থু থু উপরের দিকে ছুড়লে তা নিজ গায়ে এসেই পড়ে- ব্যক্তিগত জীবন, রাজনীতি, সামাজিক রীতি সবখানেই এটি প্রযোজ্য। সস্তা জনপ্রিয়তার লেবাসে গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে সাময়িক বাহবা পাওয়া যায় ঠিকই, তবে নিজ এলাকার জনগণের প্রতি , সারা দেশের মানুষের প্রতি যে দায়বদ্দ্বতা একজন পলিসি মেকারের থাকা উচিত তা তাদের বিকৃত কথার মাধ্যমে প্রকাশিত হলে জনগণ সময়মত গলাধাক্কা দিতে মুহুর্ত দেরি করবেনা।

শেষ করছি হেলাল হাফিজের রাখাল কবিতার প্রথম কয়েক টি চরণ দিয়ে

আমি কোনো পোষা পাখি নাকি?

যেমন শেখাবে বুলি

সেভাবেই ঠোঁট নেড়ে যাবো, অথবা প্রত্যহ

মনোরঞ্জনের গান ব্যাকুল আগ্রহে গেয়ে

অনুগত ভঙ্গিমায় অনুকূলে খেলাবো আকাশ,

আমি কোনো সে রকম পোষা পাখি নাকি? ……

বাক স্বাধীনতাকে আলিঙ্গন করে আমাদের সংসদ সদস্যরা যদি যাচ্ছে তা আউড়িয়ে বেড়ায়, সাধারণ জনতাও পোষা পাখির মত অনুগত থাকবে না, প্রয়োজনে নিগৃহীত ও বিতাড়িত হবেন  ইনারা, ব্যাঘ্র জনতার রোষানলে।

Read Full Post »

বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ১৫ ই জুন অনুষ্টিত হয়ে গেল বহু প্রতিক্ষিত চার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে বেশ তাৎপর্য্যপূর্ণ ছিল এ নির্বাচন। সরকার , বিরোধীদল, নির্বাচন কমিশন সবার জন্যই ছিল এসিড টেস্ট। জনমত সরকারের বিরুদ্ধে যাবে তা সহজ অনুমেয় ছিল। তবে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহনযোগ্যতা, প্রশাসনের প্রভাব এবং সেনাবাহিনীর প্রবেশ না থাকা সহ বিবিধ কারণে মনে হচ্ছিল সাজানো নাটক মার্কা ইলেকশন  হতে পারে। সরকার ও সুস্থ নির্বাচন করার আন্তরিকতা দেখিয়েছে মূলত দুটি কারণেঃ ১) নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচায় ২) তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নিস্ক্রিয় করা। তবে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল যে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে তা সহজে অনুমেয়। ফলাফল হতে পারত ২-২ অথবা ৩-১ কিন্তু হয়ে গেল ৪-০।

২০১০ সালের ৩ জুলাই  অধিকাংশ বাংলাদেশি ফুটবল ফ্যান দের জন্য একটি স্নরণীয় ও বেদনাহত দিন। গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জনপ্রিয় আর্জেন্টিনা অপ্রত্যাশিত ভাবে তরুণদের নিয়ে গড়া জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে পরাজিত হয়। আগের রাতে ব্রাজিল হল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়াতে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মন ছিল অনেক উৎফুল্ল। কিন্তু বিধিবাম। বাংলাদেশের মানুষের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ম্যারাডোনার কোচিংয়ের দলটি এই অনাকাংক্ষিত হার নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে। আমি জানি এ উদাহরণটি এসময়ে টানাতে অনেকেই মনোকষ্ট পেয়েছেন কিংবা আমাকে পক্ষোপাতদুষ্ট ভাবছেন। তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আমি বলছি আজকের লিখাটি তাদের জন্য। এটাই স্বাভাবিক যে এ ফলাফলে সত্যিকারের যাতনা  কিংবা কষ্ট পাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ও অন্যতম বৃহত্তম এবং জনপ্রিয়  রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগের সমর্থক, নেতা – কর্মীরা। যারা অন্তস্থঃ থেকে দল টির সমর্থক তাদের জন্য এ পরাজয় একটি ওয়েক আপ কল (wake up call) । যোগাযোগ মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের নির্বাচনের রাতেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে যথার্থ স্ট্যাটাস ই দিয়েছেন এ পরাজয় সরকারের জন্য ওয়েক আপ কল ।  অর্থমন্ত্রী এ রায়কে অশনি সংকেত বলেছেন। ট্র্যাডিশন থেকে বেরিয়ে এসেছেন সিলেটের কামরান। বিজিত প্রার্থী হয়ে তৎক্ষণাৎ  অভিনন্দিত করেছেন জয়ী প্রার্থীকে। রাজশাহীতে জয়ী বুলবুল বিজিত লিটনের বাসায় গিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার সহযোগিতা করেছেন। বি এন পি বলছে জনতার বিজয় আর আওয়ামিলীগ বলছে গণতন্ত্রের জয়। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দিত করেছেন, ক্যাটাগরিকালি তত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন না করার পূর্বাবস্থান আরো জোড়ালোভাবে বলেছেন। বিএনপি ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন, জয়ে স্বস্তি পেয়েছেন, মুখ ফুটে না বললে  ও ভ্রু কুঁচকে গেছে নির্দলয়ী তত্বাবধায়ক ইস্যুতে। কিছু এনালিস্ট ধারণা করছেন যতই আন্দোলন চালাক, শেষ মুহুর্তে সরকার অনড় থাকবে আর বিরোধী দল নির্বাচনে ফিরে আসবে। আবার উল্টা ও হতে পারে – যদি জাতিয় পার্টির হু মো এরশাদ কে বি এন পি ভিড়াতে পারে তবে তত্বাবধায়ক এর দাবির পক্ষে পলিটিকাল স্ট্যান্ড অনেক শক্ত হবে। মহাজোট তখন বামগত দল ছাড়া কাঊকে কাছে পাবেনা। কিছু যদু মধু ছাড়া ইসলামিক দলগুলো সরকারের পক্ষে নাই বললেই চলে। মোদ্দাকথা হচ্ছে রাজনীতি এখন মাথার মধ্যে ( ব্রেইন স্টর্মিং)  আর পর্দার আড়ালে চলে গেছে। পর্দা ও এখন আর দেশে নায়, দেশের সীমানা পেড়িয়ে দাবার চাল খেলা হচ্ছে। তবে গ্রীষ্মের তপ্ত গরমে স্বস্তির কথা হচ্ছে আমরা সহিংসতা থেকে বেড়িয়ে আসছি।

নির্বাচনের কয়েকদিন আগে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক নিউজ ফিডে চোখ রাখছিলাম। নানা জনের নানা মত, দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে অপছন্দের প্রার্থীদের কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া রাজাকার, নাস্তিক অভিহিত করা। এ ধরণের প্রমাণহীণ অভিযোগ কিন্তু আগত প্রজন্মকে ভুল নির্দেশনা দিবে। ধরলাম, অমুক জয়ী হল যাকে রাজাকার বলা হচ্ছিল। তাহলে কি আমরা ধরে নিব জনগণ রাজাকারকে ম্যান্ডেট দিয়েছেন। একইভাবে নাস্তিক অভিযুক্ত ব্যক্তি বিজয়ী হলে আমরা কি ধারণা করব এ দেশে ধার্মিকদের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। আগে আমরা প্রমাণসমেত অভিযোগ করতাম অমুক দুর্নীতিবাজ, অমুক সন্ত্রাসী। কিন্তু নতুন যুক্ত হওয়া রাজাকার কিংবা নাস্তিক ট্রিকস কিন্তু আমাদের ধর্মবিকাশে ও কোন কাজে আসবেনা , না আসবে মুক্তিযুদ্দ্বের চেতনার জাগরণে। আশা করব আগামি নির্বাচনগুলোতে কোন প্রমাণ ছাড়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক এ ধরনের বাজে ট্রিকস গুলো ব্যবহার করা হবে না । অথবা এ ধরণের প্রমাণহীন প্রচারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন তার শক্তি ব্যবহার করবে।

সরকার আর বিরোধী দলের থিঙ্ক ট্যাংকরা কি ভাবছেন জানিনা, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে সরকার – বিরোধী দল উভয়েই স্থানীয় নির্বাচন গুলোকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়েছেন। ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা এবং সদ্য সমাপ্ত রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচন গুলিতে বি এন পি টেক্টফুলি অংশ নিয়েছে, সরকার নিরেপেক্ষতার ভান অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে নিয়েছে এবং অর্জন করেছে। সবকটিতে সরকার বিরোধী ম্যান্ডেট ফুটে ঊঠেছে। অন্যদিকে গত তিন বছরে  কোন সংসদীয় উপ নির্বাচনে (যেসবে বিএনপি অংশ নিয়েছ ) নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে এ কথা স্পষ্টত বলা যাবেনা। ভোলার নির্বাচনের কথা সহজে ভুলা যাবেনা হয়ত। অন্তত গত দুই বছরে বিএনপি কোন সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সম্ভাবনা ছিল গাজিপুরের কাপাসিয়াতে সোহেল তাজের শুন্য আসনে  প্রার্থী দেওয়ার। রাজনীতির মারপ্যাঁচ সমীকরণে তা আর হয়ে উঠে নি। স্বাভাবিক কারণে অহিংস রাজনীতির সাম্প্রতিক এ ভাল সময়ে আমরা আশান্বিত হতে পারছিনা আগত সময়টা প্রশান্তির হবে কিনা। দু নেত্রীর কথাযুদ্ধ্ব এখনো আমাদের আলোর মুখ দেখাচ্ছেনা।

নির্বাচনের এ হালের সময়ে স্বদেশ পেরিয়ে একটু বিদেশ পাড়ি দিয়ে আসি। গত সপ্তায় হয়ে গেল ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সরল জীবন যাপন আর সাহসীকতার কারণে সদ্য মেয়াদুত্তীর্ন প্রেসিডেন্ট আহমেদিনিজাদ আমাদের দেশে ও খুব জনপ্রিয়। আমেরিকার সাম্রাজ্যেবাদের খোলামেলা সমালোচনাকারী এই নেতা সদ্য প্রয়াত ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের ও ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক বন্ধু ছিলেন। প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দেশকে কোন পথে এগিয়ে নিবেন। রুহানির নির্বাচনী ব্র্যান্ডিং ভাষা যদি ও আহমেদিনিজাদের মত সাহসী কিংবা কঠোর ছিল না, ছিল মধ্যপন্থী অবস্থান। ইরানের নির্বাচন আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিদদের কাছে আকর্ষিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশটির মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে মার্কিন দের সঙ্গে আদায় কাচ কলায় সম্পর্ক। মনে রাখতে হবে রুহানি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ইমাম খামেনির আস্থাভাজনদের একজন। আহমেদিনিজাদের মত পারমাণবিক বোমা নিয়ে অদম্য অবস্থান কিংবা মার্কিন সাম্ররাজ্যের প্রতি রক্তচক্ষু রুহানির না থাকলেও এ অমিলটা নিতান্তই বাহ্যিক। বুশ – ওবামা যেই আসুক মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির তফাৎ যেমন খুব একটা  চোখে পড়েনা, ইরানে ও তাদের ফরেইন এক্সটেন্ড খুব একটা পরিবর্তিত হবেনা মূলত। তবে রুহানি বাস্তবতার লেবাসে কিছুটা উদারপন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন হয়ত। ১৯৯৫ সালে তখনকার ইরানি প্রেসিডেন্ট রাফসানজানির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ইরান-বাংলাদেশ সংস্কৃতি, বানিজ্যের এক মজবুত ভীত স্থাপিত হয়েছিল। অধুনা ইরান বাংলাদেশের এনার্জি সেক্টরে ইনভেস্টে আগ্রহ দেখিয়েছে। দেখা যাক বাংলাদেশ – ইরান সম্পর্ক নতুন কোন মোড় নেয় কিনা।

শুরু করেছিলাম ফুটবল ম্যাচের উদাহরণ দিয়ে , শেষ করছি জনপ্রিয় কার্টুন টম এন্ড জেরির (ইদুড়-বিড়াল) উদাহরণ নিয়ে।  টম জেরির মধ্যে দ্বন্ধ-বিভেদ, রাগ-অভিমান থাকলে ও তারা একে অপরকে ভিতরে ভিতরে অনুভব করে, কমন শ্ত্রুর বিরুদ্ধ্বে একত্রীত হয়। দিনশেষে যদি ও বিভেদ শেষ হয় না, অভিমান অক্ষুত থাকে। স্থানীয় নির্বাচনের পর অহিংস এ সময়ে আমাদের সরকার – বিরোধীদলের সম্পর্কটা হয়ে উঠুক টম এন্ড জেরির মত খুনসুটিময় কিন্তু পারস্পরিক অনুভবপূর্ণ ও ঊপভোগ্য। নির্বাচন ঘিরে সিটি নাগরিকদের যে উচ্ছাস ছিল তা যেন হারিয়ে না যায় নব নির্বাচিতদের ঔদ্দ্বত্য কিংবা নেতিবাচক মনোভাবের কারণে। আর হ্যা- সরকার সমর্থেকদের জন্য সত্যিই ওয়েক আপ কল।

Read Full Post »

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আমেরিকার অভিজ্ঞতম কয়েকজন রাজনীতিবিদ দের একজন। সত্তর বছর বয়স্ক কেরি ২০০৪ সালে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন করে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান। টানা আটাশ বছর দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন সিনেটর হিসেবে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের। আগামি ২৫ শে জুন কেরির ঢাকা সফরের কথা ছিল কয়েক ঘন্টার জন্য। ভারত – যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ অংশিদারী সংলাপে অংশ নিতে কেরি ২৪ জুন ভারত সফর করছেন এবং পরদিন নব নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে পাকিস্তান সফরের মধ্যে ঢাকায় সফরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ঢাকা সফর বাতিল করা হল। অতিথিদের মোড়ল ভাবার বিশেষত আমেরিকার মত দেশের বিশেষ ব্যক্তিদের সফর কে অগ্রাধিকার দেওয়ার তাড়না আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তার উপর চলমান বছর টি নির্বাচনের বছর। সিরিয়া ইস্যুতে প্রচন্ড চাপের মধ্যে থাকা কেরির আসন্ন সফরে অগ্রাধিকার মূলক বাজার সুবিধার ( জি এস পি ) বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষনা করার কথা ছিল। সাভারের রানা প্লাজার ঘটনার পর বাংলাদেশে জি এস পি সুবিধা অব্যাহত রাখা না রাখা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষ বিপক্ষে ব্যপক জনমত গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে জি এস পি বাতিলের দাবি জোরালো হচ্ছে আমেরিকায়। এ অবস্থায় কেরির সফর বাতিল আমাদের জন্য খোদ উদ্বেগের বিষয়।

ধারণা করা হচ্ছে আগামি ৩০ শে জুন ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের বানিজ্যিক সুবিধা কমানোর ঘোষনা দিতে পারেন। ওবামা প্রশাসন মনে করছে এ ঘোষনা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রয়োজনীয় শ্রম পরিবেশ সংস্কারে যথেষ্ট উৎসাহ যুগাবে। জি এস পি সুবিধা না কমানোর জন্য আমাদের সরকার কতটুকু আন্তরিক তা পরিস্কার নয়। তবে যদি এই সুবিধা সংকোচিত কিংবা বাদ দেওয়া হয়েই থাকে, তা আমাদের শাস্তি হিসেবে না নিয়ে বরং সচেতনতা বৃদ্দ্বির জন্য নেওয়া উচিত হবে।

আমাদের ভ্রমন পিপাসু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর মধ্যে বিশ মিনিটের জন্য নিউইঅর্কে যাত্রা বিরতি করে অংশ নিয়েছেন ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক সেমিনারে। এর আগে আজারবাইজানে ফিলিস্তিন বিষয়ক একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে ছুটেছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে সন্ত্রাস বিষয়ক আরেক টি সেমিনারে অংশ নিতে। উপরিউক্ত তিনটি সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উপস্থিতির গুরুত্বের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা ডিপ্লোম্যাটরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে আজারবাইজানের সেমিনার টি আমাদের জন্য অংশগ্রহন ই প্রাপ্তি টাইপ, নিউই অর্কের টা সংস্কৃতি মন্ত্রীদের সম্মেলন আরে জেনেভার টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সেমিনার। সৌখিন ভ্রমনপিপাসু এই মন্ত্রী সম্প্রতি সমকামিদের অধিকার নিয়ে ও কথাবার্তা বলেছেন বলে মিডিয়াতে এসেছে। আমাদের মত স্বল্পোন্নত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এ ধরনের সেমিনারমুখিতা ও আসল কূটনীতিবিমুখতা কতটা যৌক্তিক তা পরিমাপ করা দরকার।

১১ জুন যশোর সীমান্তে বি এস এফ কতৃক খুন হল দুজন বাংলাদেশী। এর চব্বিশ ঘন্টা পর সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা শুন্যে নেমে এসেছে বলে দম্ভোক্তি করেছেন ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ। গত ছয় মাসে সীমান্তে বি এস এফ এর হাতে একজন বাংলাদেশি ও প্রাণ হারাননি বলে দাবি করেছেন তিনি। যদি ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ( বি জে বি ) অব্যাহত চাপে শেষ পর্যন্ত বি এস এফ সীমান্তে হত্যার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ও তাদের চার স্টাফ বরখাস্ত করেছেন। মিট দ্য প্রেস অনুষ্টানে মিস্টার পঙ্কজ সরণ ক্যাটাগরিকালি গত চার বছর টার্ম উল্লেখ করে ভারত – বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়েছেন। টিফাইমুখ বাঁধে বিদ্যুৎ সুবিধা নেওয়ার টোপ দেখিয়েছেন । যদি ও ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক টি কমিটি গঠন করেছেন টিপাইমুখ প্রকল্প যাচাইয়ে পরিবেশ গত বিপর্যয় যাচায়ে। প্রস্তাবিত বাঁধ অঞ্চলে গিয়ে এই কমিটি পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় যেমন খতিয়ে দেখবে , একইভাবে সাধারন মানুষের উপর এর কি প্রভাব পড়বে তা ও খতিয়ে দেখবে। তবে সরণ স্বীকার করেছেন তিস্তা চুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে ভারতের কারণে। মেয়াদপূর্ণের ঠিক পূর্বমুহুর্তে আগামি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রধান মন্ত্রীর ভারত সফরের কর্মসুচী চুড়ান্ত করার পরিকল্পনার কথা ও হাইকমিশনারের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তবে শেখ হাসিনার এই সফর কতটা ইস্যুভিক্তিক নাকি আগত নির্বাচনের হিসেবি তদবির – তা নিয়ে আমজনতা ভাবতে পারে।

এদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। একই সময়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হু মো এরশাদ ও অবস্থান করছেন সেখানে। কানাঘুষা চলছে বি এন পি – জাতীয় পার্টি র ঐক্যের। এর আগে ফেব্রুয়ারীতে ও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন বেগম জিয়া। তখন ও আওয়ামীলীগ সিনিয়র নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন এ সফরের উদ্দেশ্যে নিয়ে। তবে বিরোধীদলীয় নেতা বিদেশ সফর করলে যে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে যায় তা অনুমান করা খুব কঠিন নয়। তারেক রহমান কে নিয়ে চাপে থাকা বেগম জিয়া স্বাভাবিক ভাবেই আন্তর্জাতিক লবিং ধরার চেষ্টা করবেন এবং তাতে এরশাদ কে সাথে পেলে দল ভারি হওয়া ছাড়া ও কূটনীতিক পাল্লা ও ভারি হবে। এরশাদের এখনো মিডল ইস্ট, ভারত , আমেরিকা লবিং শক্তিশালী ধারণা করা যায়।

সৌদি আরবে একামা জটিলতা নিরশনে সরকারের উদ্যোগ প্রশংশনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রবাসী যারা মূলত অবৈধ কাগজ পত্র নিয়ে আছেন তারা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সরকারের উচিত ছিল হেল্পডেস্ক খুলে পরামর্শগত সহযোগিতা নিশ্চিত করা। আমাদের কক্সবাজারের উন্নয়ন অর্থনীতির একটি লভ্যাংশ সৌদিয়ারব রেমিট্যান্স কেন্দ্রিক। এখানকার অধিকাংশ প্রবাসীরা ও এখনো একামা জটিলতা সমাধান করতে পারেন নি। আতংকে দিন রাত অতিবাহিত করছেন। তাদের অনেকেই এতটা অসহায় যে নিজ এলাকার কোন আঞ্চলিক নেতা ওমরা করতে গেলে তাকে ও তাদের সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিচ্ছেন। দেশে দূর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ক্ষমতাসীন দলের কক্সবাজারের এক নেতা সম্প্রতি মক্কা সফরে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। তার এই আশ্বাস যেন ভোটের রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকে।

অবৈধ উপায়ে নৌপথে মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা ও দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা কিংবা কক্সবাজারের নাগরিক। অতি সম্প্রতি নৌ ডুবি, দালালদের খপ্পরে পড়া সহ নানাবিধ কারণে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেক ভাগ্যসন্ধানী লোকজন। প্রবাস কল্যান মন্ত্রনালয়ের সাড়ে তেত্রিশ হাজার টাকায় মালেশিয়ায় কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ প্রশংশনীয় হলে ও সংখ্যার দিক দিয়ে খুব অপ্রতুল। সারা দেশ থেকে সাড়ে চৌদ্দ লাখ মানুষ আবেদন করলে ও মাত্র ১১ হাজার সাতশ আটান্ন জন প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত করেছেন। প্রশংশনীয় এ উদ্যোগ আরো আলোর মুখ দেখবে যদি কূটনৈতিক ভাবে তদবির করে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো যায়। আমাদের মত স্বল্পোন্নত দেশে রেমিট্যান্স এর স্রোত প্রত্যাশিত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারে।

আগের লিখাগুলিতে বারবার উল্লেখ করেছি ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে আমাদের আগামিদিনের উজ্জ্বল অর্থনীতির নিয়ামক। আশির দশকের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির অগ্রযাত্রার সঙ্গে এর তুলনা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে ইন্টারনেট এর গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার। তবে সরকারের যে প্রতিনিধি যখন ই বিদেশ সফর করে, সময় সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ কারিদের কাছে আমাদের ফ্রিল্যান্সিং কে প্রমোট করতে হবে। বুঝতে হবে ফ্রিল্যান্সিং এক টি প্রোডাক্ট ( দক্ষ সফট ওয়ার প্রকৌশলী, যারা দেশ থেকেই মান সম্মত কাজ ডেলিভার করতে পারে ইণ্টারনেটের মাধ্যমে)।
এই প্রোডাক্ট কে ব্র্যান্ডিং করার দায়িত্ব সরকার কোনভাবে এড়াতে পারেন না।

সরকার শেষ সময়ে এসে তাদের নির্বাচনী মেনফেস্টোনুযায়ী সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, এশিয়ান হাইওয়ে, মহেশখালিতে এল এন জি টার্মিনাল নির্মান সহ বড় কয়েক টি প্র্কল্পে প্রাণ সঞ্ছার করতে চাচ্ছেন। নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থায়ন সংগ্রহ সহ প্রকল্প পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কূটনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে তা প্রকল্পের অগ্রসরতাই প্রমাণ করবে। সহনশীল রাজনীতির এই সময়ে আমরা আশা করতেই পারি আমাদের মেনটর রা সঠিক কূটনৈতিক দূতিয়ালি করে আমাদের বন্ধুর পথকে মসৃণ করবেন, এতে উপকৃত হবে আমাদের শ্রমিক, কমবে বেকারত্ব, জি ডি পি র উন্নয়নের শতকরা অংশে বানিজ্যের প্রভাব বাড়বে।

Read Full Post »

বাজেটের মত কঠিন ও জ্ঞানসমেত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার মত পান্ডিত্য ও অভিজ্ঞতা কোনটাই না থাকার পর ও চলতি বছরের (২০১৩-২০১৪) বাজেটের উপর নিজের মতামত প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি কয়েকটি কারণেঃ ১) বাজেট প্রণয়ন করা হয় সবার জন্য , যেহেতু এটি মহান সংসদে উত্তাপিত হয়, তাই এটি পর্যালোচনা করার অধিকার ও দায় রয়েছে ২) মূলত আই টি প্রকৌশলী হলে ও অর্থনীতি এবং  রাজনীতি বিষয়গুলোতে আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে  এবং ৩) আমার ভাবনার মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রজন্মের কিছু চিন্তার প্রতিফলন আসতে পারে। যেহেতু আমি নিজে কোন অর্থনীতিবিদ নয় এবং বাজার অর্থনীতির সংগে এখনো প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও নেয় ওভাবে, তারপর ও কিছু সংকলিত মতামত সমেত নিজের বক্তব্য  উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি মাত্র।

একটু পিছন থেকেই শুরু করা যাক। ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছর থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৪২ টি বাজেট পেশ করা হয়েছে। দশজন ভিন্নভিন্ন মানুষ অর্থমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিয়ে বাজেট গুলো পেশ করেছেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কালজয়ী রাজনীতিবিদ মরহুম তাজউদ্দিন আহমদ প্রথম বাজেট পেশ করেন। এর পর কালক্রমে বাজেট দিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চাটার্ড একাঊন্ট্যান্ট, সরকারি আমলা ও প্রবাসি অর্থনীতিবিদ যাদের অনেকেই পরবর্তীতে রাজনীতিক পরিচয়ে আলোচিত। সর্বোচ্চ বারটি বাজেট দিয়েছেন সাবেক চাটার্ড একাঊন্ট্যান্ট ও বি এন পি নেতা মরহুম সাইফুর রহমান। সিলেটের তিন কৃতী সন্তানই ( মরহুম সাইফুর রহমান, মরহুম কিবরিয়া ও আবুল মাল মুহিত ) পঁচিশটি বাজেট পেশ করেছেন এই পর্যন্ত।

আসা যাক এবারের বাজেটে। বাজেটের নাম দেওয়া হয়েছে “উন্নয়নের চার বছরঃ স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ”।  ১৬ চলতি বছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ বড় বা ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট দিয়ে অর্থনীতিতে জোয়ার আনার মহা পরিকল্পনা করেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। তিনি নিজেই এটিকে উচ্চাভিলাসী স্বীকার করেছেন, তথাপি বাস্তবায়ন করার প্রত্যয় ও দেখিয়েছেন। বিরোধীদল স্বভাব সুলভ ভঙ্গিমায় এবারের বাজেট কে বিশাল সুন্দর বেলুন কিংবা ধার করে ঘি খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন । বুঝদার অর্থনীতিবিদরা ও স্বীকার করেছেন বাস্তবায়ন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। বিশেষকরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেক কঠিন হতে পারে, কারণ সামনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতন্ত্রের বন্ধুর পথ। বিগত অর্থবছর গুলোতে যেখানে জি ডি পি (মোট দেশজ উৎপাদন) গ্রূথ ৫ – ৬ এর মধ্যে সীমাবদ্ব সেখানে এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.২। এবারের বাজেটের আরেকটি ব্যতিক্রম হল প্রথমবারের মত জেলা বাজেট পেশ। নির্বাচনী ইশতিহারে থাকলে ও শেষ বছরে এসে টাঙ্গাইল জেলার  ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বাজেট ঘোষনা দিল মহাজোট সরকার।  শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ্ব বাড়লে ও স্বাস্থ্য খাতে কমেছে, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ্ব এবার চৌদ্দ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা যা চলতি বছরে বার হাজার কোটির কিছুটা বেশি। কিছুটা ভর্তুকি কমেছে কৃষি খাতে, তবে কৃষি ঋণ কে উৎসাহিত করা হয়েছে।  এবারের বাজেটে এ ডি পি অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন মুখী এ বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সু্যোগ থাকছে যথারীতি। তবে বিগত কিছুদিনে প্লট ফ্ল্যাটের মূল্য কিছুটা সীমিত আয়ের লোকজনের আয়ত্বে থাকলে ও তা আবারো গগনচুম্বী দামে যাবে বলে ধারণা করা যায়।  সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশালত্বের কারণে অনেকে এ বাজেট কে নির্বাচনী বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছেন। নির্বাচনী বছর বিধায় এ বাজেট বর্তমান সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ধারা বাস্তবায়িত হবে। অবশেষে পদ্মা সেতুর বরাদ্দ্ব এসেছে প্রায় ছয় হাজার আটশ বায়ান্ন কোটি টাকা। দীর্ঘদিনের অবহেলিত রেলখাতে বরাদ্দ্ব বেড়েছে। বাজেটে চাল, ডাল, গম, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলের শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে যাতে তা ক্রেতার নাগালে থাকে। দাম বাড়ানো হয়েছে গুঁড়ো দুধ, নিউজপ্রিণ্ট, সিগারেট, নতুন গাড়ি ও বিলাসী পণ্যের। জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রি আমদানির ঊপর শুল্ক কমানো হয়েছে।

বাজেটের উপর বিবৃতি দিয়েছেন কক্সবাজার-৪ এর সংসদ সদস্য হামিদ আজাদ। তিনি বাজেটের উপর নিজ এলাকার বরাদ্দ্ব নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। উপকূলীয় বাসীর জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় হতে বিগত অর্থবছরের তুলনায় ২৯৯ কোটি টাকা কম বরাদ্দ্ব থাকা, রেলওয়ে খাত এবার প্রাধান্য পেলে ও কক্সবাজার – চট্রগ্রাম রেল সড়কের জন্য আলাদাভাবে কিছু উল্লেখ না থাকা, সরকারের এক সময়ের অগ্রাধিকার প্রকল্প সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র্য বন্দর নির্মাণ করার আলোকপাত না থাকাসহ বাজেটের অনেক যৌক্তিক সমালোচনা করেছেন জামাতের এই এম পি। দলের অবস্থান যায় হোক না কেন নিজ এলাকার পক্ষে আগাগোড়া বাজেট বিশ্লেষণ করার এই তাড়না সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ। তবে সমালোচনার এই পন্থাগুলো বিবৃতি থেকে বেরিয়ে সংসদে এসে বললে দাবিগুলো আরো জোড়াল  হতো। কক্সবাজারের বাকি সংসদ সদস্যদের এ ধরণের বাজেট আলোচনা কিংবা বিবৃতি চোখে আসেনি। বাজেট  যেহেতু শুধু আয় ব্যয়ের হিসেব নয়, আগামি দিন গুলোর একটা দিক নির্দেশনা ও বটে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঊপকূলীয় এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের জন্য আলাদা কোন প্ল্যান রাখা হয়নি।  কক্সবাজার  বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করার কথা উল্লেখ থাকলে ও  বাজেটে কোন সুনির্দিষ্ট অর্থায়নের কথা উল্লেখ নেয়। সদ্য অর্জিত সামুদ্রিক সীমানায় মাছের প্রজনন বাড়ানোর উদ্যোগের কথা উল্লেখ আছে,  গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ আছে রামু ঘটনা – ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসনের জন্য ২৫ কোটি টাকা অর্থায়নের কথা বলা আছে বাজেটে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র্য বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ ও এর কাজের মাত্রা সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের ভিন্ন চিন্তার আলামত ও দিয়েছেন। সোনাদিয়া তে গভীর বন্দরের অর্থায়নে চীন এবং দুবাই পোর্ট অথরিটির আগ্রহের কথা উল্লেখ আছে বাজেট ভাষণে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলে ও অগ্রগতির কোন রোডম্যাপ নেই যদি ও ২০১৪ সালের মধ্যে ই-গভর্নেন্ট চালু করার স্বপ্ন দেখা হয়েছে। প্রসঙ্গত বাজেটে উঠে এসেছে বর্তমানে সর্বমোট মোবাইল গ্রাহক ৯.৮৬ কোটি ও ইন্টারনেট গ্রাহক ৩.৪০ কোটি যা জনসংখ্যা অনুপাতে যথাক্রমে ৬৪.৬% ও ১৯.৯%। দাবি অনুযায়ী ইন্টারনেটে  ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার না করায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন সফটওয়ার এসোসিয়েশন, যদি ও অর্থমন্ত্রী ইন্টারনেট সংযোগ ব্যয় ও ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর সুপারিশ করেছেন । সাবমেরিন কেবল ব্যান্ডউইথ ৪৪ গিগাবিট পার সেকেন্ড থেকে ২০০ জি বি পি এস করার সুপারিশ আছে যা বাস্তবায়ন হলে ফ্রিল্যান্সাররা উপকৃত হবে। শেয়ারবাজার তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানির কর ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিল ৩৫ শতাংশ, এখন হয়েছে ৪০ শতাংশ। ফলে বেশি অর্থ দিতে হবে মূলত গ্রামীন ফোন কে। শুল্ককাঠামোতে আনা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। বিনিয়োগ ও শিল্পায়নকে উৎসাহিত করার জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতিতে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। গত বছর একই সময় যেখানে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৫২ মিলিয়ন ডলার তা এই বছর একই সময়ে ১ হাজার ৫১৭ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ কমেছে প্রায় ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার। এর অর্থ শিল্প কারখানা প্রতিষ্টিত হচ্ছেনা। পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, হলমার্ক – ডেসটিনি কেলেংকারি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সহ বিবিধ ঋণাত্নক কারণে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ আসছেনা। বাজেটে আকাংক্ষিত প্রবৃদ্দ্বি অর্জন করতে হলে শিল্পের বিকাশ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী করতে হবে।

১৯৭২-১৯৭৩ সালে প্রথম বাজেটের আকার ছিল আটশ কোটি টাকা। মহাজোট সরকারের প্রথম বাজেটের আকার ছিলো ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা যা শেষ বাজেটে দ্বিগুণ এ এসে ঠেকল । সবকিছুর পর আমজনতার কাছে বাজেট একটি বক্তৃতা কিংবা  কঠিন ভাষায় লিখা পুস্তিকার মত ব্যতিত কিছু নয়। দিনশেষে দিন মজুরের রুজগার যদি কিছুটা নাই বাড়ে কিংবা দুবেলা খাবার যোগাড় করতে গিয়ে বাজারের হালচালে মাথায় হাত আসে, মধ্যবিত্তের বাসা ভাড়া, নানাবিধ বিল কিংবা বাজারের দ্রব্যমূল্যের উচ্চমুখীতা যদি হতাশার জন্ম দেয় তবে তার প্রভাব নির্ঘাত আগামি নির্বাচনে পড়বে বৈকি। কৃষিবান্ধব, বিনিয়োগ বান্ধব এই তকমা গুলো ছাড়িয়ে নির্বাচন বান্ধব এবারের বাজেট কতটুকু জনকল্যাণকর তা সময় ই বলে দিবে।

প্রকাশিতঃ  ১১ই জুন, ২০১৩ দৈনিক হিমছড়ি,  www.coxsbazarnews.com

Read Full Post »

বিশ্ব সমুদ্র্য  দিবসঃ জুন
বঙ্গোপসাগর, আমাদের কূটনীতি এবং অবারিত সম্ভাবনা

 

১৯৯২ সালের ব্রাজিলের রিওডিজেনেরিও আর্থ সম্মেলনে কানাডা কতৃক প্রস্তাবিত ও ২০০৮ সালে জাতিসংঘ হতে আনুষ্ঠানিক অনুমোদিত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিবছর ৮ ই জুন বিশ্ব সমুদ্র্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের সব সমুদ্র্যকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশ্ব সমুদ্র্য দিবস একটি সু্যোগ। বিশেষ এই দিনটিতে আমরা অন্তত সবধরণের সামুদ্রিক পণ্য, সামুদ্রিক খাবার ও সমুদ্র্য কেন্দ্রিক যাবতীয় সুবিধার সমণ্বয়মূলক মেলা উদযাপন করতে পারি। একই সঙ্গে সমুদ্র্যসীমা দিয়ে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের তাৎপর্য্য নিয়ে ভাবতে পারি। সমুদ্র্য দূষণ , সমুদ্র্য সন্ত্রাস ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্রকে ক্ষতির প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য কিছু নির্দেশনামূলক প্রস্তাবনা আলোকপাত করা যেতে পারে। সমুদ্র্যবিজ্ঞান নিয়ে বিশেষ পড়াশোনা না থাকলে ও দীর্ঘতম সমুদ্র্য পাড়ের সন্তান হিসেবে ব্যক্তিগত দায়বদ্দ্বতা ও আগ্রহের কারণে কিছু মৌলিক বাস্তবতা ও আমাদের অবস্থান চিহ্নিত করাই এই লিখার মূল উদ্দেশ্য। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলাসহ নানবিধ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর কারণে সমুদ্র্য সম্পর্কে সচেতন থাকাটা শুধু উপকূল বাসি নয়, বাংলাদেশীদের জন্য ও খুব দরকারী বিষয়। প্রকৃতপক্ষে জলদস্যুতা, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার, ঘের দখল, সমুদ্র্য দূষণ সহ নানাবিধ মানবসৃষ্ট  কারণে  সাগরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ংকর ক্ষত । সাম্প্রতিক সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছ্বাস অনাগত ভয়ংকর দূর্যোগের পূর্ভাবাস দেয়।

কিছুটা আলোকপাত করা যাক আমাদের বঙ্গোপসাগরের স্ট্রাটেজিক গুরুত্বের উপর। মধ্য এশিয়া থেকে ফিলিপাইন সাগরের মাঝবর্তী অবস্থিত আপাতত ত্রিমাত্রিক মাপের এ সাগরের উত্তরে বাংলাদেশ, পশ্চিমে শ্রীলঙ্কা ও ভারত, পূর্বে মায়ানমার, আন্দামান, নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ । বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র্য সৈকত কক্সবাজার। একুশলক্ষ বাহাত্তর হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সাগরে পতিত হয়েছে গঙ্গা (পদ্মা , হুগলি), ব্রহ্মপূত্র (মেঘনা, যমুনা) সহ ছোট বড় অনেক নদ-নদী। রয়েছে চেন্নাই, কলকাতা, ইয়াঙ্গুন,  চট্টগ্রাম, তৃণকমলি, পন্ডিচেরী,তুতিকরিন এর মত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বন্দর। সামুদ্রিক বিজ্ঞান অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর নোনা পানির সাগর এবং ভারত মহাসাগরের একটি অংশ । বঙ্গোপসাগর বিশ্বের ৬৪ টি বৃহত্তম প্রাণিবৈচিত্রের একটি। প্রবাল প্রাচির, সামুদ্রিক মাছের অবাধ প্রজনন ক্ষেত্র ও সুন্দরবন নিকটবর্তী ম্যানগ্রূভস পূর্ণ বিশাল এই জলরাশি।  বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের বাৎসরিক মহড়া এই সাগরেই করে থাকে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী সর্বশেষ যৌথ মহড়া করে বঙ্গোপসাগরে।

এক সময়কার বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রফতানিকারক দেশ বার্মা ( বর্তমান মায়ানমার )  সিত্তুই বন্দর (আরাকান রাজ্য) দিয়ে চাল রফতানি করত। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসন কে পাশ কাটিয়ে দেশটি অধুনা মুক্তবানিজ্যের দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। মরিচা ধরা বন্দর সংস্কারের কাজ ও এগুচ্ছে দ্রুত। মায়ানমার ও ভারতের যৌথ অর্থায়নে ১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে কালাদান নদীর অববাহিকায় বন্দরের কাজ চলছে যার সুবিধা পাবে ভারত। মায়ানমারের  সিত্তুই  বন্দর দিয়ে মাল খালাস করে  দুর্গম রাজ্যগুলোর কাছাকাছি মালামাল পাঠানোর পরিকল্পনা দিল্লি সরকারের।  কলকাতা বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়া বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। হুগলি নদীর মোহনায় দেড়শ কোটি মার্কিন ডলার খরচের গভীর সমুদ্র্য বন্দর স্থাপনের কাজ শুরু করছে ভারত সরকার শীঘ্রই। অন্যদিকে চট্টগ্রাম হচ্ছে এই পাশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র্য বন্দর। নানা কারণে এই বন্দরের ও ত্রাহি অবস্থা। সরকারের গভীর মনযোগ ও আধুনিকায়ন ও এ বন্দরের ব্যস্ততা সামাল দিতে পারছেনা। সাম্প্রতিক মায়ানমারের উদার বানিজ্যিক স্ট্র্যাটেজির কারণে দেশটির বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক পরিকল্পনা ও বাড়ছে। সিত্তুই প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ডের অর্থায়নে প্রায় আটশ কোটি মার্কিন ডলার বাজেটের তানাসেরিম উপকূলের ‘দাবেই প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকক কেন্দ্রিক শিল্পোজোন স্থাপিত হবে যা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম সহ সংলিষ্ট এলাকায় নব দিগন্তের ধার উন্মোচন করবে বৈকি। মায়ানমারের এই উন্মুক্তকরণ নীতির সুযোগ নিচ্ছে জাপান ও। ইতিমধ্যে ইয়াঙ্গুনের  থিলাওয়া নদীবন্দর উন্নয়নে ২০ কোটি ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে টোকিও। স্বভাবতই মায়ানমারের বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক এ সমস্ত বড় বড় প্রকল্প চীন নিজ বানিজ্যিক সার্থে ব্যবহার করবে। বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক এসব প্রকল্প পুরোদমে চালু হলে মালেশিয়া ও সিঙ্গাপুরর গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশংকা ও আছে।

প্রতি বছর জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দক্ষিন এশিয়া ও ভারত মহাসাগর থেকে আসা বায়ু দূষণ মেঘ বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়। মনযোগ দেওয়া যাক বহুমুখী ও  অর্থনৈতিক প্রাধান্যে নির্মিতব্য বন্দর নির্মাণের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব। বিশ্বের অন্যতম  জলজ  জীববৈচিত্র্যের অধিকারী বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি টন মাছ ধরা হয় বঙ্গোপসাগর থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এই সাগর। হুমকির মুখে পড়তে পারে এসব জলজ প্রজাতি। BOBLME (Bay Of Bengal Large Marine Ecosystem) [বঙ্গোপসাগর বৃহৎ জলজ  জীববৈচিত্র্যে] নামে একটি পাঁচ বছর মেয়াদী প্রজেক্ট শুরু হয়েছে যেখানে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনিশিয়া, মালেশিয়া, মালদ্বীপ  ও থাইল্যান্ড এর বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতে কাজ করার পরিকল্পনা করেছেন । ম্যানগ্রুভ বনাঞ্ছল, প্রবাল প্রাচীর, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, সমুদ্রের লবনাক্ততা সহ  পরিবেশগত মানোন্নয়ন, উপকূলীয় স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে সংগঠনটি  নানাবিধ সচেতনতামূলক প্রচারণা, সেমিনার করে গ্রুপ ডিসিশন নেওয়া ও তথ্য ভিক্তিক জার্নাল পাবলিশ করার মাধ্যমে জলজ এই জীববৈচিত্র্যে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এবার আসা যাক কিছু আন্তর্জাতিক কূটনীতিক বিষয়ে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র্য বিজয় উদযাপন করলে ও এটি ছিল একটি সীমানা সংক্রান্ত রায় যেটির প্রত্যাশিত ফলাফল মায়ানমার ও বাংলাদেশ দু দেশই পেয়েছে বলে আপাতত ধারণা করা হয়।  ২০১২ সালের ১৪ ই মার্চের এ রায়ের মাধ্যমে সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট সীমার উপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যদি ও এ রায়ের ফলে আমাদের আসল অর্জন কতটুকু তা আমাদের ভবিষ্যত কূটনীতিক তৎপরতাই প্রমাণ করবে । অপেক্ষা করতে হবে ২০১৪ সালের ভারত এর সঙ্গে সীমানা নিস্পত্তির রায়ের জন্য।  আমেরিকা বঙ্গোপসাগরের দিকে  তাদের দীর্ঘদিনের মনযোগ আরো বাড়িয়েছে। এই অঞ্চলে তাদের নানা মাত্রায় ঐক্য ও সমঝোতার ঊদ্যোগের একটি লক্ষ্য হল বঙ্গোপসাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।  অনেকগুলো যদি কে মাথায় রেখে আমাদের কূটনীতিক তৎপরতা বেগবান করতে হবে। যদি সমুদ্রের মালিকানার বিশাল অংশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অসম আধিপত্য (খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তাগিদে) বিস্তৃত হয়, যদি সীমানায় বিদেশী সৈন্যের আধিপত্য ঘটে, যদি মায়ানমার-চীন-ভারত একজোট হয়ে আমাদের বানিজ্যিক অধিকার বঞ্চিত করেঃ এসব যৌগিক কিন্তু প্রাসঙ্গিক বিষয় গুলো কে প্রাধান্য দিতে হবে। স্বীকার করতেই হবে এখন বাংলাদেশ শুধু নদীমাতৃক দেশ নয়, সমুদ্র্যমাতৃকও। সমুদ্রের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে।সমুদ্র্য কেন্দ্রিক দেশের সম্পদ রক্ষা ও সার্বভৌমত্বের মত ইস্যুতে  বিরোধীদলের আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরী। স্থল ভূখন্ড ও সম্পদ নিয়ে জনগণ যেমন সচেতন , সামুদ্রিক ভূখন্ড নিয়ে একই ধরণের সচেতনতা আমাদের সামগ্রিক সমস্টিগত উন্নয়নকে আরো তরাণ্বিত করবে।

উল্লিখিত কিছু প্রকল্প তথ্য থেকে অনুমান করা যায় বঙ্গোপাসাগর কেন্দ্রিক হয়ে এশিয়ার  অর্থনৈতিক হালচাল বদলে যাচ্ছে  যা আমাদের জন্য ও সুবর্ণ সুযোগ। ভৌগলিক অবস্থান আগেই ব্যখ্যা করেছি আমাদের বঙ্গোপসাগরের। বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ও কৌশলগত ভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।  সার্ক (SAARC) এবং আসিয়ানের (ASEAN) মত দুটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক সমষ্টির মাঝে এর অবস্থান। আমাদের মেনটর দের সামনে অবারিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেওয়ার হাতছানি।  দেশ ও মানুষের কল্যাণমুখী কৌশলী পরিকল্পনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভাবে বানিজ্যিক সুবিধা আদায় করে নেওয়ার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

এবারের সমুদ্র্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে  ”আমাদের একত্রিত শক্তিই পারে সমুদ্র্য কে রক্ষা করতে”  [Together we have the power to protect the ocean.] স্থানীয় ঐক্য, জাতীয় ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সমণ্বয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় বঙ্গোপসাগর কে সত্যিকার অর্থে রক্ষা করতে পারি। এতে শুধু আমাদের সামগ্রিক কল্যাণ ই হবেনা , রাষ্ট্রের রাজস্ব কোষাগার ও আলোর মুখ দেখবে আরো বেশি প্রখরতা নিয়ে।

প্রকাশিতঃ ৮ই জুন, ২০১৩ দৈনিক হিমছড়ি,  www.coxsbazarnews.com

Read Full Post »